বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
পটুয়াখালী পৌর কৃষকলীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল! নাগেশ্বরীতে প্রাণী সম্পদ অফিসে টেকনিসিয়ান নিয়োগে অনিয়ম এডিসের লার্ভা পেলে জেল ও জরিমানা করা হবে: ডিএনসিসি মেয়র জলবায়ু অভিযোজনে সফলতার জন্য বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরি : পরিবেশমন্ত্রী কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ স্থগিত প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরকালে ৫টি দলিল স্বাক্ষর ও বহুমুখী সহযোগিতার সম্ভাবনা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন: প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ ব্যয়ের অর্থ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবহার হলে বিশ্ব রক্ষা পেত: প্রধানমন্ত্রী কাতারের আমীরকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা দেয়া হয় ঢাকা বিমানবন্দরে

ভোলায় এ বছর সুপারি উৎপাদন কমলেও বেড়েছে দাম

সাব্বির আলম বাবু (ভোলা ব্যুরো চিফ):
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২
  • ৬০৭৪ বার পঠিত

ভোলার বিভিন্ন এলাকায় এ বছর সুপারির উৎপাদন কমেছে। এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও জলবায়ুর প্রভাবে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদান হ্রাস পেয়েছে বলে সুপারী খামারীগণ জানিয়েছেন। তবে মূল্য ভাল থাকায় দৈনিক বাণিজ্যে কোটি টাকার লেনদেন হয় ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইলিশ, মহিষের দধি, নারিকেল, পান, সুপারির সহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য প্রসিদ্ধ ভোলা। তবে কয়েকটি কারণে দিনদিন গ্রামীন অর্থকরী ইলিশ, নারকেল ও সুপারির ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় আশানুরূপ সুপারি উৎপাদন না হলেও বিভিন্ন হাটবাজারে সুপারি ক্রয়-বিক্রয় জমে উঠেছে। দামও বেড়েছে এক ‘বি’ কাঁচা সুপারিতে (৩২০টি) ৫শ‘ থেকে ৬শ‘ টাকা। প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রভাবে লবনাক্ত পানি প্রবেশ করায় অনেক চরাঞ্চলীয় এলাকায় সুপারি গাছ মরে যাওয়া ও নদী ভাঙনে হাজার হাজার হেক্টর বন নষ্ট এবং বনাঞ্চল উজাড় করে বাড়িঘরসহ মার্কেট নির্মাণের ফলে সুপারি উৎপাদন কমছে বলেও জানান সচেতন মহল। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ অর্থকরী ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে বলা হয়, এ অঞ্চলের বাগানের সুপারি গাছে সার ও মাটি দিয়ে যত্ন নেয়া হলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ভোলর বিভিন্ন গ্রামীন হাটবাজারের পাইকারি সুপারি আড়ৎগুলোতে দেখা যায়, সুপারি কেনা-বেচার চিত্র। আড়ৎ থেকে খুচরা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে কাঁচা সুপারি। প্রতি এক ‘বি’ সুপারি আকার ভেদে বিক্রয় হচ্ছে ৫শ থেকে ৭শ টাকায়। এছাড়াও শুকনো (টাডি সুপারি) খুচরা বাজারে সাড়ে ৫শ থেকে সাড়ে ৭ টাকায় কেজিতে বিক্রয় হয় বলেও জানান একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী। গ্রামগঞ্জের সুপারি বাজার গুলোতে ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন গ্রাম থেকে গৃহস্থ ও বেপারীরা রিকশা, সাইকেল ভ্যান ও নসিমন এবং ট্রাকে করে বস্তায়, বস্তায় কাচা সুপারি নিয়ে আসছেন বড়, বড় আড়ৎ গুলোতে। পাইকাররা সুপারী ক্রয় করে ভাড়া নেয়া খোলামাঠে অথবা গুদাম ঘরে স্তুপ করে রাখছেন এসব সুপারি। এ সুপারী কয়েক শতাধিক শ্রমিক মিলে বাছাই শেষে গণনা করে বস্তাবন্ধি করা হচ্ছে। এ সুপারি বাজার ও আড়ৎগুলোতে বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার সুপারি ক্রয়- বিক্রয় হয় বলে জানান আড়ৎ মালিকগণ।

জেলার বিভিন্ন বাজারে হাটের দিন প্রায় কয়েক শতাধিকের বেশি পাইকার সুপারি ক্রয় করেন। বাজারের সুপারি ব্যবসায়ীদের সহযোগীতার জন্য শ্রমিকরা কাজ করে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার টাকা প্রডাকশনে কামাই করেন। সুপারি বাছাই ও গণনা শেষে বস্তা তৈরী করায় নিয়োজিত শ্রমিক জামাল বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত বাছাই ও গণনা এবং বস্তা ভরে দৈনিক দেড় থেকে ২হাজার টাকা উপার্জন করি। এ কাজ করেই সারাবছর সংসার চালাই আমরা।

এ সুপারি জেলা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিং ও রংপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা গুলোতে রপ্তানি করা হয়। ভোলায় প্রতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টনের বেশী শুকনো সুপারি উৎপাদিত হয়ে থাকে।

বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী অধির সিংহ বলেন, আমাদের আড়তে দৈনিক ৫শ ‘বি’সুপারি বিক্রয়ের জন্য গৃহস্থ ও বেপারীরা নিয়ে আসেন। বাজারে গৃহস্থ বা বেপারীরা প্রদিন ২শ বস্তা বা ২ হাজার‘বি’ (প্রতি‘বি’ ৩২০টি) সুপারি নিয়ে আসে বিক্রয়ের জন্য। তিনি আরও বলেন, আমরা এক ‘বি’কাচা সুপারি আকার ভেদে ৬শ টাকা পর্যন্ত পাইকারিতে ক্রয় করি। এছাড়াও শুকনো সুপারি কেজি ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকায় ক্রয় করে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকায় কেজি প্রতি খুচরা বিক্রি করা হয়। চরফ্যাশন উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের ফরিদাবাগ গ্রামের আলী হোসেন বলেন, আমাদের একসময় ৩একর জমির সুপারি বাগান ছিলো। তবে আগের মতো সুপারি পাওয়া যাচ্ছে না। গত তিন চার বছরে ভোলার উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড় সিডর থেকে আইলা, আম্পান, বুলবুল, ইয়াস, সিত্রাং প্রভাবে আমাদের বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি মাটিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি ও খাল জলাশয় ভরাটের জন্য জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে মাটির শক্তি হ্রাস এবং ঝড়-বাতাসে সুপারির মঞ্জুরি বা ফুল ঝরে যাওয়ায় সুপারি উৎপাদন কমে গেছে। এই এলাকার আরও একাধীক বাগান মালিক বলেন, এ অঞ্চলে কয়েক হাজার পরিবার ও কৃষক সুপারির সঙ্গে জরিত রয়েছে। সুপারি উৎপাদন অব্যহত রাখতে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্যেও দাবী করেন বাগান মালিক ও কৃষকরা।

জেলা কৃষি অফিস বলছেন, জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এসব এলাকায় শুকনো সুপারি উৎপাদন হচ্ছে। এই এলাকায় আমারা নতুন হাইব্রিড ও বারোমাসি জাতের সুপারির চারা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..