শাহবাজপুরে প্রথম গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়ার পর একের পর এক এর সংখ্যা বাড়ছে দ্বীপজেলা ভোলায়। গত ২৮ বছরের মধ্যে জেলায় এখন পর্যন্ত আলাদা ৩টি (শাহবাজপুর, ভোলা নর্থ ও ইলিশা-১ নামে) গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে, যা থেকে ৯টি কূপ খনন হয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে মোট গ্যাস মজুদের পরিমাণ ১ দশমিক ৭ টিসিএফ। এ মজুদ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ। এ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ভূ-তাত্ত্বিক জরিপে দ্বীপজেলা ভোলায় আরও দুটি নতুন স্পটে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। ওই সব স্পটে আরও অনুসন্ধান করা হবে এবং শিগগিরই কূপ খনন করা হবে। তবে এ বিষয়ে এখনই কোনো ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। তবে নতুন স্পটগুলোতে গ্যাসের বিস্তৃত অনেক বেশি থাকায় সেগুলো কূপ নয় বরং আলাদা গ্যাস ক্ষেত্র হতে পারে।
বাপেক্সের সম্ভাব্য ধারণা, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগঞ্জ বাজারের আশপাশে এ গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে। তবে কূপ খনন না করা পর্যন্ত এখনই নিশ্চিত করে বলতে চাচ্ছে না বাপেক্স। কবে নাগাদ এমন ঘোষণা বা কূপ খননের সিদ্ধান্ত আসবে তাও নিশ্চিত করেনি বাপেক্সের নির্ভরযোগ্য সেই সূত্রটি। তবে তাদের তথ্য সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে কূপ খননের পরই এমন সিদ্ধান্ত আসবে। সেক্ষেত্রে দেশের ৩০ এবং ৩১তম গ্যাসক্ষেত্রও হতে পারে দ্বীপজেলা ভোলাতেই।
বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ইলিশা-১, ভোলা নর্থ এবং শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে আপাতত নতুন আরও ৫টি কূপ খননের অনুমোদন হয়ে গেছে। সেগুলো শিগগিরই খনন করবে বাপেক্স। এরপরেই নতুন যেসব পয়েন্টে গ্যাসের অনুসন্ধান মিলেছে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন আরও দুটি গ্যাসক্ষেত্র এই ভোলাতেই হতে পারে। যেটি এখনও চূড়ান্ত জরিপ ও বিশ্লেষণের অপেক্ষায়। আমাদের স্থান নির্ধারণ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ১৯৯৪-৯৫ সালে শাহবাজপুরে, ২০১৮ সালে ভোলা নর্থ এবং ২০২৩ সালে ইলিশা- ১ গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসেই যেন ভাসছে ভোলা। তবে সে তুলনায় উল্লেখযোগ্য গ্যাসভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান হয়নি ভোলায়। বাসা বাড়িতেই গ্যাসের সংযোগ পায়নি ভোলার বেশিরভাগ মানুষ।
ভোলাবাসীর স্বপ্ন গ্যাসভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হবে বেকার যুবকদের। কিন্তু এসবের কিছুই বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ভোলার মানুষ। এরই মধ্য পৌরবাসীকে নিয়ে মানববন্ধন করেছেন ভোলা পৌর মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি দাবি তুলেছেন, ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার। এদিকে বাপেক্সের সাবেক এমডি মো. আলী সম্প্রতি গণমাধ্যম জানিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলায় বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ রয়েছে। আর তাই এ জেলাসহ ১২ জেলায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাপেক্স। সেটি এখন অপেক্ষা, তাদের আশা নতুন করে সন্ধান মিলবে গ্যাসের। এদিকে বাপেক্সের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, ভোলার ৯টি কূপের মধ্য এখন পর্যন্ত ৫টি কূপ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে, যা ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ হচ্ছে। বাকি ৪ কূপ অব্যবহৃত রয়েছে। এ মুহূর্তে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা ১০০ থেকে ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট।