শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে মুখস্ত শিক্ষার ওপর নির্ভরতা কমাতে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জে তীব্র দাবদাহে ইসলামী যুব আন্দোলনের হাতপাখা বিতরণ দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে : বিচারপতি নিজামুল হক গলাচিপা ও দশমিনায় প্রকাশ্যে নিধন হচ্ছে রেনু পোনা,কথা বলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ ডিএসইসির নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ বেলা অবেলা : স্বপ্না রহমান ডিএসইসি’র নতুন সভাপতি ডিবিসি’র মুক্তাদির অনিক ডিএসইসি’র সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশের আলো’র জাওহার ইকবাল খান ডিএসইসি’র সাংগঠনিক সম্পাদক দৈনিক উত্তরদক্ষিণে’র শহীদ রানা

প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ভাবনা: এম. এ রব মিয়া

লেখক: এম. এ রব মিয়া-প্রধান শিক্ষক, বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • আপলোডের সময় : রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৫৭৯৬ বার পঠিত
এম. এ রব মিয়া, প্রধান শিক্ষক, বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তির অন্তনিহিত গুণাবলীর পূর্ণতার বিকাশই হলো শিক্ষা। শিক্ষা নবোদিত সূর্যের ঝরণা ধারার মতই মানুষের জীবনে ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষাই দেশ ও জাতির অগ্রগতির বলিষ্ঠ বুনিয়াদ। মনুষ্যত্ব বিকাশের নেপথ্যে মন্ত্র রুপকথার সেই জীবন কাঠি।

শিক্ষার অর্থ ব্যাপক। শিক্ষার অর্থ প্রকাশ করা কঠিন। শিক্ষা শব্দটির অর্থ শাসন করা, নিয়ন্ত্রণ করা, উপদেশ দেওয়া। বিদ্যা অর্থ জানা বা জ্ঞান আহরণ করা। সুতরাং শব্দগত অর্থে শিক্ষা বলতে জ্ঞান অর্জনকরা, যোগ্যতা লাভ করা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করাকে বোঝায়। বর্তমান কালে উন্নতি বা বিকাশ সাধন অর্থে শিক্ষা শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রতিটি মানব শিশুর মধ্যে কতগুলো শক্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকে, এশক্তি গুলোর সুষ্ঠু ও সর্বতোমুখী বিকাশ সাধনই হলো শিক্ষা। শিক্ষার লক্ষ্যই হলোমানব শিশুকে একজন আদর্শ ও পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ শিক্ষা একজন মানুষের জ্ঞান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের এ লক্ষ্যে সহায়ক ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, বাস্তব জীবনে শিক্ষাকে পরিপূর্ণ ভাবে বাস্তবায়নে সাহায্য করে, স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন ঘটায় ।

শিক্ষার গুণগত মান: প্রকৃতপক্ষে গুণগতমান একটি আপেক্ষিক উপলব্ধি পরিবর্তনশীল বিশ্বে মানুষের চাহিদা, টিকে থাকার উপায় এবং মূল্যবোধ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। শিক্ষা লব্ধ জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে ব্যক্তি জীবনের প্রত্যাশা পুরন ও জাতীয় জীবনের উন্নয়ন সাধন ও বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঢিকে থাকার যতটুকু জ্ঞান, দক্ষতা ও জীবনদৃষ্টি অর্জন করা আবশ্যক ততটুকু জ্ঞান ও দক্ষতাকে শিক্ষার গুণগত মান বলা যায়। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রমে শিশুদের বিষয় ও শ্রেণি ভিত্তিক প্রান্তিক ও অর্জন উপযোগী যোগ্যতা গুলো বিন্যস্ত রয়েছে। এ যোগ্যতা গুলো অর্জন করাতে পারলেই শিশুর যোগ্যতা অর্জিত হবে বা শিশুর শিক্ষা মানসম্মত হবে।

শিক্ষক ও শিক্ষকতা: শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন ও কার্যকর শিখনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে শিক্ষক। যিনি শিক্ষাদেন। তিনি শিক্ষক। শিক্ষক হচ্ছেন একজন ব্যক্তি যার মধ্যে রয়েছে তিনি যে বিষয়ে শিক্ষাদান করবেনসে বিষয়ের দক্ষতা, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত চাহিদা পূরণের বোধগম্যতা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ সৃষ্টি করা যাতে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারে।

শিক্ষকতাকে ‘এবাদত’ করার সামিল বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। মনীষীগণ শিক্ষকতাকে মহৎ ও আধ্যাত্মিক গুণ সম্পন্ন পেশা ধরে উল্লেখ করেছেন। শিক্ষকগণ তাঁদের আদর্শের মাধুর্যে বিদ্যালয় পরিবেশকে লালন করবেন। ফলে শিক্ষার্থীদের জীবন তরীর কানায় কানায় ভরে উঠবে সুশিক্ষা, চরিত্র মাধুর্য এবং সর্বাঙ্গীন বিকাশ। এজন্য বলা হয়: No system of education is better than a teacher, আর প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন বিদ্যলয়ের কান্ডারী। তাঁর সুপরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অন্ধকার কেটে যাবে আলোতে এবং দূরীভূত হয় কুসংস্কার ও অজ্ঞতা এবং তাদের জীবনে আনে অগ্রগতির উম্মাদনা, আত্মশক্তিতে বলিয়ান হওয়ার প্রেরণা এবং নবনব উপলব্ধি ও সৃষ্টির মহানন্দ। তাই বলতে হয়: As is the Headteacher, so is the school.

শিক্ষকতার জন্য প্রয়োজন:
*শিক্ষণের বিষয় বস্তু সর্ম্পকে জ্ঞান ও কৌশল থাকা।
* যা শেখাতে হবে এ উপর বিশদ জ্ঞান।
*শিক্ষণের উদ্দেশ্য সর্ম্পকে পরিষ্কার ধারণা থাকা। *শ্রেণি কক্ষে শিশুদের সমশিক্ষাদানের ব্যবস্থা করণ
*শ্রেণি কক্ষে নিঃস্বার্থ ভাবে সেবা প্রদানের মানসিকতা *শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করা।
*শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা পূরণে উদ্বিগ্ন থাকা।
*জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নে সামষ্টিক দায়বদ্ধতা।
*শিক্ষার্থীর চাহিদার আলোকে শিখন-শেখানো কার্যাবলী পরিচালনা করা
* শিক্ষার্থীর শিখন ফলের দায়ভার গ্রহণ করা।

শ্রেণিকক্ষে যদি প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হয় তাহলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর বর্তমান শিখন মান জানতে হবে। শিক্ষার্থীর বর্তমান শিখন মান/দক্ষতা অনুসারে প্রতিটি শিক্ষার্থীকেশ্রেণিকরণ করতে হবে। এরপর তার শিখনমান উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিখন মান জানার একটি কৌশল হলো স্টুডেন্ট প্রোফাইল শিক্ষার্থী বৃত্তান্ত তৈরি করা।

শিশুবান্ধব বিদ্যালয়: জন্মের পরথেকেই শিশু বিস্ময়ভাবে প্রকৃতি থেকে আহরণ করে জ্ঞানের অমিয়ধারা। ওদের জীবন সুষ্ঠু বিকাশে চাই যথার্থ পরিবেশ, উদার ও সহৃদয় মানসিকতা, প্রীতিপ্রেমের পরিচর্যা। অভিভাবক সমাজই যার পরিকল্পিতরুপ দেয়ার কারিগর। এজন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করে শিশুবান্ধব বিদ্যালয়।

শিশুবান্ধব বিদ্যালয়ের সূচক:
*একজন প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে দক্ষবাহিনী গড়ে তোলা।
*মানসম্মত শিক্ষাবাস্তবায়নে কর্মীবাহিনীকে আন্তরিক হতে উদ্বুদ্ধ করা।
*বিদ্যালয় পরিবেশ নিরাপদ ও আকর্ষনীয়।
*বিদ্যালয় ও সমাজের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন। *শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুয়ায়ী শিখন-শেখানো কার্যাবলীর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা।
*শিক্ষার্থীর সৃজনশীল কার্যক্রম নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা।
*শিক্ষার্থীর শ্রেণি পাঠনার জন্য মনোরমভাবে শ্রেণিকক্ষ সাজানো
*শিক্ষার্থীর মতামতের গুরুত্ব দেওয়া।
*বিদ্যলয়ে শিক্ষার্থীর নিদিষ্ট পোশাক থাকা।
*শিক্ষার্থীর মাঝে নেতৃত্ব মনোভাব সৃষ্টি করা।
*শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় পাঠাগার সৃষ্টি করা।
*বিদ্যালয়ের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
*নিরাপদ পানীয় এবং ছাত্র ও ছাত্রীর জন্য আলাদা আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নিশ্চিত করা।
*শিক্ষার্থীদের দ্বারা সংগৃহীত সহজলভ্য উপকরণের অধিক ব্যবহার।
*সর্বক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুসুলভ আচরণ নিশ্চিত করা।
*বিদ্যালয় সম্পৃক্ত বিভিন্ন ব্যক্তি যেমন-শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি, কর্মচারী, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও কর্মকর্তার মধ্যে আন্তব্যক্তিক সর্ম্পক স্থাপন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

মোট কথা, যদি বিদ্যালয়ের প্রতিটি কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে সক্রিয় অংমগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষেত্রে অনুকুল পরিবেশ পায় তবেই সেটি হবে শিশুবান্ধব বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি যদি শিশুবান্ধব হয় তাহলে শিক্ষার গুণগতমান গনশ্চিত করা সম্ভব। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বাস্তবায়নে ম্যানেজিং কমিটির ভূমিকা।

সমাজে শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি মৌলিক প্রতিষ্ঠান। সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে পারলে এই বিদ্যালয় এলাকার অধিবাসীদের বৃহত্তর আর্থ সামাজিক সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর এই পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ম্যানেজিং কমিটি। ম্যনেজিং কমিটি তাঁর দায়িত্ব কর্তব্যের আলোকে বিদ্যালয় সুষ্ঠু পরিচালনা সহ শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেন। সুতরাং বিদ্যালয়ের সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করণের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মান বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

এক্ষেত্রে যা করা প্রয়োজন-

*সৎচরিত্রবান, নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিগণ ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য উপযুক্ত হবেন। *প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ত্রুটিমুক্ত, প্রভাবমুক্ত সদস্য নির্বাচনের নিয়ম থাকা
*কমিটি গঠনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নাথাকা।
*কমিটি গঠনের সাথে সাথে সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা। ম্যানেজিং কমিটি উন্নয়ন মূলক কাজে সাহায্য ও সহযোগিতা করা।
*দায়িত্ব কর্তব্য আরও সুনির্দিষ্ট করা

জনসমাজের মূল্যবোধ জাগ্রত:
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মান অর্জনে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ ও কমিউনিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। স্থানীয় জন সমাজকে যথার্থভাবে উদ্বুদ্ধ ও জাগ্রত করতে পারলে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলে যে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়েই মানসম্মত শিক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সব অংশীদারদের সক্রিয় ও সংঘবদ্ধ তৎপরতা।

মন্তব্য:
উচ্চাভিলাসী এই অঙ্গীকার ও কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার যথোপযুক্ত কার্যক্রম। ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রশাসন দায়িত্বশীল হলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ও গুণগত মান নিশ্চিত হবে।

লেখক: এম. এ রব মিয়া
প্রধান শিক্ষক
বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..