মনজুর মোর্শেদ তুহিন (পটুয়াখালী প্রতিনিধি):
প্রাণবন্ত পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সাধারণ ভোটাররা অপেক্ষা করেছিল ২৯মে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য। ৪দিন পূর্বের ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে যেন সকলের মানসিকতা স্তব্ধ হয়ে গেল। নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২৯শে মে এর পরিবর্তে ৯ জুন নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়। তবে প্রার্থী এবং সাধারণ ভোটাররা সকলেই যেন উভয় সংকটে। গ্রামের দরিদ্র শ্রেণীর অনেকেরই যেমন ঘরবাড়ি কিংবা গাছপালা ভেঙে যাওয়ায় পরিশ্রান্ত। তেমনি প্রার্থীরাও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সাধারণ ভোটারদের একটু সুবিধা দিতে আর্থিকভাবে দণ্ডিত।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। খান মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক “কাপ পিরিচ” প্রতীক এবং মোঃ জহিরুল ইসলাম জুয়েল “ঘোড়া” প্রতীক সহ ২জন আওয়ামী ঘরনার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপরদিকে আলহাজ্ব মোঃ আশরাফ আলী হাওলাদার “আনারস” প্রতীক নিয়ে উপজেলা বিএনপি’র পদে থাকলেও প্রার্থী হওয়ার পর দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
ছাত্রলীগ করা ত্যাগী ও প্রতিশ্রুতি শীল আওয়ামী লীগ কর্মী খান মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক টানা ১৫ বছর উপজেলা পরিষদের জন প্রতিনিধিত্ব করছেন। ১ম বার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, ২য় বার ও বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। সক্রিয় আওয়ামী লীগ হয়েও প্রতিবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয়তায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ভোটারদের কাছে তিনি শান্তি প্রিয় ও শান্ত মেজাজের চেয়ারম্যান। ভৌগলিকভাবে মির্জাগঞ্জ প্রতিবেশী জেলা ও উপজেলার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সরকারীভাবে ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগিয়েছেন।
বর্তমান পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জহিরুল ইসলাম জুয়েল ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এলাকায় কথিত আছে চেয়ারম্যন আবু বক্কর সিদ্দিক এর হাত ধরে রাজনীতিতে তার পদচারনা। তারই সহযোগিতা ও সমর্থিত ভোটারদের ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। অজানা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে তারই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন জুয়েল।
এক সময় ব্রুনাই প্রবাসী ও উপজেলা বিএনপির সদস্য মোঃ আশরাফ আলী হাওলাদার আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করায় বহিষ্কৃত হলেও তিনি নিজেকে বিএনপির লোক বলে দাবি করছেন। আর্থিকভাবে সচ্ছল আশরাফ হাওলাদার নিজেকে সমাজসেবক দাবি করে প্রায় সময় বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা করেন। দলীয় বিভাজনকে পাত্তা না দিয়ে নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে দাবি করে বিএনপির ভোটই তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন বলে দাবি করেন।
মির্জাগঞ্জের ভোটের মাঠে তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী সক্রিয় থাকলেও খান মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক এর পক্ষের প্রতিটি ইউনিয়নে একশ্রেণীর ভোটার রয়েছে যারা তাহার অন্ধভক্ত। এসব ভোটারদের সিংহভাগই মধ্যবয়স্ক থেকে প্রবীণ। তার সমর্থকদের দাবি বিশৃঙ্খলা এড়াতে এখন সকলেই নিশ্চুপ রয়েছে তবে ভোটের দিন সবাই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। তরুণদের একটি অংশ মোঃ জহিরুল ইসলাম জুয়েলের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে। এসব ভোটাররাই তার প্রাণ। তার সমার্থিত প্রার্থীদের মূল স্লোগান পরিবর্তন চাই। সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, চেয়ারম্যান পদে জুয়েলের আবির্ভাবের কারণেই মির্জাগঞ্জ আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভোটারদের দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে। অপরদিকে মোঃ আশরাফ আলী হাওলাদার বিএনপির দলীয় ইমেজকে ব্যবহার করে এই সুযোগ কাজে লাগাতে চান। তবে কট্টরপন্থী বিএনপিরা মনে করেন আশরাফ হাওলাদার পথভ্রষ্ট হয়েছেন।