সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
মাছের প্রজননে সময় না দিয়ে মানুষ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে : মৎস্য উপদেষ্টা কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় : আইজিপি নির্বাচন যত দেরি হবে ততই ষড়যন্ত্র হবে : তারেক রহমান কায়কোবাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে মুরাদনগরে বিএনপির প্রস্তুতি সভা কিশোরগঞ্জে ’দুর্বার প্রজন্মের’ শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠিত তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুমকি হিন্দু সম্প্রদায়ের রাতের অন্ধকারে ঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধে হত্যা তাড়াইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দাওয়াতি মজলিস ও মতবিনিময় সভা মুরাদনগরে মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বরিশাইল্লা বউ : লুৎফুন্নেসা রহমান

১০ ডিসেম্বর ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস

সাব্বির আলম বাবু (ভোলা ব্যুরো চিফ):
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৬১২৬ বার পঠিত

১০ ডিসেম্বর ভোলা মুক্ত দিবস। এদিন পাক হানাদারদের কবল থেকে মুুক্ত হয় এই জেলা। কেমন ছিল সেই দিনগুলো এ ব্যাপারে স্মৃতিচারন করেন লালমোহন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করেই পাক পুলিশ আমাদের ওপর আক্রমণ করে।
আমরা সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ করি। ওই যুদ্ধে ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ভোলাতে সর্বমোট সাতটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে দু’টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের।
মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখায় তিনি বরিশাল বিভাগে ‘বিজয়ের ৪০ বছর’ পদক পান।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল বোরহানউদ্দিনের দেউলা তালুকদার বাড়ি।
দেউলার দ্বিতীয় যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সাতজন পাকিস্তানি সেনা মারা যায়। মাকসুদুর রহমান, ফরিদ হোসেন বাবুল সহ প্রায় ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেন। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই যুদ্ধে ২৭ জন পাকিস্তানি সেনা মারা যায়। সেখান থেকে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ ঘটনার আগের দিন বোরহানউদ্দিন থানা থেকে সাতজন পুলিশ দেউলায় এলে তাদের ওপর ও মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায়। সেখানে পাক সেনাদের কাছ থেকে সাতটি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। পরে সম্মুখ যুদ্ধ হয় দৌলতখানের গুপ্ত বাজারে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে ১৭ জন নিহত হয়। আবুগঞ্জের গরুচোখা নামক এলাকায় সন্ধ্যার পর নৌপথ দিয়ে কয়েকজন রাজাকার নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে ছুড়তে আসছিল। মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি টের পেয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ করতে পারেনি। কিছুক্ষণ পরে খবর পয়ে বিপুল সংখ্যক মুক্তিবাহিনী বেড়িবাঁধের ওপর অবস্থান করে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পরাজিত হয়ে ‘খোদাকি কসম, কোরআনকী কসম, নবীকি কসম-হাম সেলেন্ডার করতা হু, তুম মুজে মার ঢালো মুইত’ বলে আত্মসমর্পণ করে পাক সেনারা। পাক সেনারা ভয়ে ‘জয় বাংলা-শেখ মুজিব জিন্দাবাদ, ওয়ালিখান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয়। এ যুদ্ধে আলী আকবর বড় ভাই, এমএ তাহের, সুবেদার মান্নানসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেয়। মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের বলেন, ভোলায় সবচেয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বাংলাবাজারে। ভোলা থেকে পাক হানাদাররা বাংলাবাজার আসছে, এমন খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলা বাজার ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। কিন্তু পাক বাহিনী বাঘমারা নামক এলাকা থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে ছুড়তে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনতাসহ অন্তত ৩শ জন মারা যায়। এছাড়া দৌলতখান হাসপাতাল এলাকায় দীর্ঘতম যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ হয় ঘুইংগারহাট এলাকায়ও। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয়ে রচিত হয়েছে ভোলায় প্রথম স্বাধীনতার ইতিহাস। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। আর তখনি সমগ্র ভোলার মানুষ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সেই স্মৃতি আজ মনে পড়ে ভোলার সাহসী সৈনিকদের। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভোলা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের চত্বর দখল করে পাক হানাদার বাহিনী ক্যাম্প বসায়। সেখান থেকে এক এক করে চালায় পৈশাচিক কর্মকাণ্ড। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করা হয়। মরদেহগুলোও দাফন করা হয় এখানেই। ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারের ধরে এনে হত্যা করে তেঁতুলিয়া নদীতে ফেলে দেয় তারা। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় তেঁতুলিয়ার পানি। পাক হানাদার বাহিনীরা অনেক নারীকে ক্যাম্পে ধরে এনে রাতভর নির্যাতন করে সকালে লাইনে দাঁড় করে নির্মমভাবে হত্যা করে। তৎকালীন অগণিত মানুষ মারা যায় ওই হানাদার বাহিনীর হাতে। সেখানে গণকবর দেওয়া হয় নিহতদের। সেটি এখন বধ্যভূমি।
১৯৭১ সালে দেশ রক্ষায় সারাদেশের ন্যায় ভোলাতেও চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। সরকারি স্কুলমাঠ, বাংলাস্কুল, টাউনস্কুল মাঠ ও ভোলা কলেজের মাঠের কিছু অংশে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয় ভোলার ঘুইংঘারহাট, দৌলতখান, বাংলাবাজার, বোরহানউদ্দিনের দেউলা ও চরফ্যাশনে। ওই সব যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন। পাশাপাশি অনেক পাক হানাও মারা যায়। অবশেষে ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে ক্যাম্প থেকে লঞ্চযোগে পাক বাহিনী পলায়ন করে। তখনও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। ওই দিনই ভোলার আকাশে উড়ানো হয় স্বাধীন দেশের পতাকা। ভোলা পরিণত হয় উৎসবের শহরে। রচিত হয় নতুন ইতিহাস।
ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম বলেন, ৯ ডিসেম্বর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ভোলা ওয়াপদা এলাকায় চারদিক থেকে পাক হানাদারদের ঘিরে ফেলি, একপর্যায়ে তারা যখন দেখলো তাদের মুভ করার মতো কোনো অবস্থান নেই তখন গুলি বর্ষণ করতে করতে তারা পালিয়ে যায়, তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। লঞ্চযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় চাঁদপুর এলাকায় মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় পাক হানাদারদের লঞ্চটি নিমজ্জিত হয়।
তিনি বলেন, ভোলাতে সাত মাসের যুদ্ধ হয়েছে, পাক হানাদার বাহিনীর আসার পর মুক্তিযোদ্ধারা ভোলায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভোলা সরকারি স্কুল এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চরফ্যাশন থানায় আক্রমণ করে ২৭টি অস্ত্র সংগ্রহ করেন। যুদ্ধের সময় আমরা মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি, তারা আমাদের আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে, সেটা আমাদের চিরদিন স্মরণ থাকবে।মুক্তিযুদ্ধের সময় ভোলা ওয়াপদা ভবন দখল করে শত শত মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতন করে হত্যা করে পাক হানাদাররা। সেখানে অনেক নারী নির্যাতন হয়েছিল। সেই স্মৃতি আজো ভুলতে পারিনি। জীবন বাজি রেখে জেলার অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করে ভোলাকে হানাদারমুক্ত করে।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..