নিজস্ব প্রতিবেদক:
মার্চ মাসে সেভ দ্য রোড-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিদিন সড়কপথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৮ জন। বাংলাদেশের ৩১ টি জাতীয় দৈনিক, বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও ইলেকট্রনিক্স চ্যানেলে প্রকাশিত-প্রচারিত তথ্যর পাশাপাশি সারাদেশে সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবিদের তথ্যানুসারে ২০২২ সালের ১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৪৯ টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭ হাজার ১৪৭ জন এবং নিহত হয়েছে ১৩৮৯ জন। ‘সেভ দ্য রোড-এর অঙ্গীকার পথ দূর্ঘটনা থাকবে না আর…’ বাক্যটিকে লালন রেখে ২০০৭ সাথে পথচলা শুরু করে সেভ দ্য রোড। যেখানে নায়ক নেই, আছেন নায়ক বানানোর কারিগর; আছেন নতুন প্রজন্মের প্রিয় মুখগুলো।
যে কারণে নিরন্তর চেষ্টার হাত ধরে প্রতি বছর দুই ইদ ও বছরের শুরুতে ও শেষে সেভ দ্য রোড যে পথ দুর্ঘটনার তথ্য গত ১৪ বছর ধরে দিয়ে আসছিলো তার চেয়ে একটু এগিয়ে ২০২২ সালে এসে প্রতি মাসের পথ দুর্ঘটনার তথ্য দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই প্রতিবেদনটি প্রদান করছি। এই কাজে সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, মহাসচিব শান্তা ফারজানা, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, জিয়াউর রহমান জিয়া, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি আনজুমান আরা শিল্পী, আইয়ুব রানাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সেভ দ্য রোড-এর ২০২২ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত সড়কপথে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা। মোটর সাইকেল চালানোর সময় নিয়ম না মানা এবং হেলমেট ব্যবহারে অনীহার কারণে ২৫৮৪ টি দুর্ঘটনায় আহত ২২৫৮ এবং নিহত হয়েছে ৪০৩; অসাবধানতা ও ঘুমন্ত চোখে-ক্লান্তিসহ দ্রুত চালানোর কারণে ১১২৫ টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮৪২ এবং নিহত হয়েছে ২৫৬ জন; ১৮৩০ টি বাস দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১৮৫৫ এবং নিহত হয়েছে ৩৯৫ জন; পাড়া-মহল্লা-মহাসড়কে অসাবধানতার সাথে চলাচলের কারণে লড়ি-পিকআপ-নসিমন-করিমন-ব্যাটারি চালিত রিক্সা-সাইকেল ও সিএনজি দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২১০ টি আহত হয়েছে ২১৮১ জন এবং ৩৩৫ জন নিহত হয়েছে। সেভ দ্য রোড বরাবরই বলছে- পথদুর্ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার বাস্তবায়ন দ্রুত করলে চালক-সহকারীসহ সবাই সতর্ক থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। একই সাথে সেভ দ্য রোড বরাবরই বলছে- পথ দুর্ঘটনায় আহতদের পরিবারকে কমপক্ষে ৩ লক্ষ ও নিহতদের পরিবারকে কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক। দুর্ঘটনামুক্ত পথ আন্দোলনে নিবেদিত থাকা সবাইকে সচেতনতা তৈরির জন্য কাজ করে যাওয়ারও আহবান জানাচ্ছে সেভ দ্য রোড।
১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১১২ টি। আহত ৩১৪ জন, নিহত হয়েছে ৬৮ জন।
১ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২২ টি। আহত হয়েছে ১৮৬ জন, নিহত হয়েছে ৩১ জন।
১ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত আকাশপথে কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ্য হয়েছেন অর্ধশতর বেশি মানুষ।
বাংলাদেশে সড়কপথে দূর্ঘটনা না কমার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন সেক্টরে কেবলমাত্র প্রশাসনিক অদক্ষতাই নয়; দায়ী দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। পাশাপাশি যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন সেই সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া একশ্রেণির চাঁদবাজ সিন্ডিকেট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থার কারণে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস, ট্যাক্সিক্যাব ও অটোরিক্সার এই মহাসংকট ও স্বল্পতা। তারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার আদর্শচ্যুত হয়ে একের পর অপকর্ম করে যাওয়ায় আমাদের পথ দুর্ঘটনামুক্ত হচ্ছে না। সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনামুক্ত পথচলা আমাদের জনগনের অধিকার। সেই অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগনের সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই বলে সেভ দ্য রোড মনে করে। আর তাই বারবার ৭ দফায় ফিরে যাই। পাশাপাশি সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে গত ১২ বছর যাবৎ ৪ পথ দুর্ঘটনামুক্ত করতে সেভ দ্য রোড-এর ৭ দফা দাবী নিয়ে এগিয়ে চলা অব্যহত রয়েছে ছাত্র-যুব-জনতা-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ঐক্যবদ্ধতায়। আর সেই ৭ দফা হলো- ১. মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দূর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারীভাবে দিতে হবে। ৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. পথ দূর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। ৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতু সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।
যেহেতু মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে খুব বেশি, চাই মোটর সাইকেলের চালকদের উপর বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ; জানাচ্ছি চালকদেরকে সচেতনতার সাথে-সতর্কতার সাথে পথ চলার। আমরা চাই মানুষের জন্য দুর্ঘটনামুক্ত পথ।