সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মির্জাগঞ্জে কৃষি জমিতে সেচ দিতে গিয়ে যুবক ফিরলো লাশ হয়ে আকাশ: কবি মাহফুজ রকি মির্জাগঞ্জে প্রাইমারি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত শান্তা মনি দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান উপজেলা নির্বাচন: হরিরামপুরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে দেওয়ান সাইদুর মির্জাগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন যে কোন দুর্যোগে পুলিশ জীবন বাজি রেখে সেবা প্রদান করছে : ডিএমপি কমিশনার নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি যে কোন মূল্যে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে : সিইসি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদন ঢাকার প্রত্যাখ্যান

আপনজন ভাবনাঃ এস এম আক্তারুজ্জামান, ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জ

লেখক: এস এম আক্তারুজ্জামান, ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জ
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৬২০০ বার পঠিত
এস.এম আক্তারুজ্জামান: ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি)
আপনজন ভাবনাঃ
“স্যার, আমি আপনার সাথে এক বছর চাকরি করেছি, আপনার হাতেই র্যাংক-ব্যাজ পড়েছি”, পুলিশের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশি সালাম দিয়ে হাসিমুখে বলে যাচ্ছিলেন আমাকে আমার অফিস কক্ষে প্রবেশ করেই।
লম্বা গড়ন, শ্যামলা বর্ণ, হালকা ভারী দেহ, ফিটনেস ভাল। দেখে ভাল লাগল। ইদানিং অবসরপ্রাপ্ত কাউকে লাল গেঞ্জি পরা বা তরুন দেখলে পুলকিত বোধ করি। চাকুরি থেকে অবসরের বছর গোনা শুরু করেছি বরিশালে আসার পর থেকেই। অনেকেই আমার সাথে এ রকম ভাবতে পারেন যেমন Md. Mozammel Haque। তবে যারা এখনো বয়সে তরুণ যেমন M M Zaman Ashish Kumar Banik Ruhul Amin Shiper Lutfunnahar Piki, চল্লিশ মাত্র পার হয়েছেন, তারা এসব নিয়ে খুব নাও ভাবতে পারেন। তারা এখনো অজানাকে জানা অচেনাকে চেনার মিশনে দেশ, কাল, পাত্র খুজে বেড়াচ্ছেন।
সাদা-কালা’র জগতে অবসরপ্রাপ্ত সহকর্মিকে সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা, সাদা দাড়ি, সাদা টুপিতে বেশ চোখজূড়ানো লাগছিল। উনাকে থামিয়ে দিলাম দুই কারনেঃ বিদ্যুৎ এবং সময় সাশ্রয় করতে, এবং উনার কষ্ট লাগব করতে। সতর্ক হয়ে সটানভাবে হাত উচু করে সালামরত থাকা কিছুটা কষ্টের উনার বয়সে।
” ও আচ্ছা, হুম, শরীর ঠিক আছে তো?” আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলাম।
“হ্যা স্যার। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে ভাল আছি, ছেলেমেয়েদের নিয়ে সুখে আছি”।
” তাহলে কি মনে করে আসলেন, বাড়ি কোথায়?” পুলিশের ভাষায় জানতে চাইলাম।
“স্যার, আমার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর। আমার এক অতি আপনজনের এক বড় সমষ্যার জন্য আপনার সাথে সাক্ষাত করতে এসেছি”, পাশেই দাঁড়ানো একসাথে প্রবেশ করা প্রায় সমউচ্চতার এবং বেশের এক ভদ্রলোককে ইশারা করে বলল।
পাশের লোকের দিকে চোখ ডাইভার্ট করলাম। সাদা পাঞ্জাবিতে নীলের ছোপ ছোপ দাগ লেগে আছে। নীল ছোপ দেখেই ছোট বেলার কথা মনে পরে গেল। সেই চল্লিশ বছর আগের কথা যখন অনেক ফেসবুক বন্ধুদের জন্ম হয়নি, তখন সাদা গেঞ্জি, সাদা সার্ট পাঞ্জাবি ধুয়ে নীলের হালকা ছোয়া না থাকলে বনেদি ভাবটাই ফুটে উঠতনা।
যাই হউক, নীল থেকে নীচে নেমে আসলাম।
” বলেন কি সমষ্যা” জিজ্ঞেস করলাম পাশের জনকে।
“স্যার, আমার এক অতি আপনজন চাকরি করে বরগুনা জেলায়, তিনি ওখানে ডিবিতে দারোগা। উনাকে একটু বরিশাল জেলায় এনে দিতে হবে।” খুব অনুনয় করে বলছিলেন।
“ও আচ্ছা, কেমন আপন তিনি আপনার? বাড়ি কোথায় আপনার” আপনজন বিষয়টা পরিস্কার করতে চাইলাম।
“স্যার, আমার বাড়ি ঝালকাঠি, উনার সাথে চাকরি করেছি একই থানায় বন বিভাগে, সেইখান থেকেই আমি উনার সাথে খুব আপন। আর দারোগা সাহেব আমার আপন খালাতো ভাই।”
“ও আচ্ছা, আপনার আপনজনের সমষ্যার কথা বলেন।” উনাকে কাজের দিকে নিয়ে যেতে চাইলাম।
“স্যার, দারোগা সাহেবের দুই ছেলে এক মেয়ে। তার বাবা বৃদ্ধ” তাই একটু বরিশালে পোষ্টিং করে দেন।”
“দারোগা সাহেবের বয়স মনে হচ্ছে ৪৫/৫০ হবে, বাবাতো বৃদ্ধ হবারই কথা। তো উনার বরগুনায় কতদিন হয়েছে?” জানতে চাইলাম সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য।
“এক বছরের মত হইছে” সোজা উত্তর দিলেন।
সহকারিকে দ্রুত ডেকে দারোগা সাহেবের তথ্য নিলাম। উনি বরিশালে প্রায় ছয় বছর কাজ করার পর সিনিয়র বিবেচনায় বদলি হয়েছেন বরগুনায় ১০ মাস আগে। উনার বাড়ি পিরোজপুরে। আপনজন ছেড়ে উনার একা থাকা মনে হয় কষ্ট হচ্ছে। বউ বাচ্চাকে সময় দেয় এখনকার বাবারা। অনেক আপন তারা। একসময় সেও আপন ছিল তার বাবার। কিন্তু, আজ তার আপন হয়েছে তার ছেলেমেয়ে।
আসলে কে আপন? কেউ না? ভাইয়ের হাতে ভাইয়ের খুন; বাপের সম্পত্তি নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধ, মামলা, খুনাখুনি; আর বউ-জামাই ঝগড়া এটাতো খুব কমন। এর মাঝে কোথায় থেকে কোথায় মানুষ হয়ে যায় আপন।
আপনজনের উপকার করতে পারলামনা। কারন প্রশাসনিক জটিলতা এবং নিয়মকানুন। ভাবতে থাকলাম আপনজন নিয়ে। বাবা-মা দুইজনই চলে গিয়েছেন ২০১৮ সালে। আমি কার আপন? কে আমার আপন? আমার কাছে সবাই আপন। আর আমি হলাম আমার সৃষ্টিকর্তার আপন। আমি উনাকে ভুলে থাকলেও উনি আমাকে ভুলেননা। তাকে আমি কিছুই না দিলেও তিনি আমাকে সব কিছু দেয়। আমি উনার সাহায্য না চাইলেও তিনি যে আমাকে সাহায্য করতেই থাকেন। তিনি যে বড়ই করুণাময়।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..