শিকদার গ্রুপ মানিলন্ডারিং করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। শিকদার গ্রুপের বিরুদ্ধে ভুয়া ডকুমেন্টে, একই জমি ও প্রকল্প বার বার দেখিয়ে ৭ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক লোন নিয়ে তা মানিলন্ডারিং-এর মাধ্যমে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে এসব অনিয়ম ওঠে আসার পরেও রহস্যজনক ভাবে এগুলো ধামাচাপা পড়ে আছে।
সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরিত এক অভিযোগে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষে ফ্রিডম ফাইটার জেনারেশন (এফএফজি) শহীদুজ্জামান এ অভিযোগ প্রেরণ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ডেপুটি গভর্নর এবং দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে শিকদার গ্রুপের কর্ণধারদের বিশেষ সম্পর্ক থাকার কারণে মানিলন্ডারিং অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় না, দুদকের এক আলোচিত সমালোচিত পরিচালক প্রায় শিকদার গ্রুপের থাইল্যান্ডের পেকুয়া রিসোর্টে ও তাদের প্রমোদ বালাখানায় গিয়ে সময় কাটান বলে অভিযোগ শোনা যায় এবং শিকদার পরিবার থেকে মাসিক মাসহুৱা নিয়ে থাকেন বলে চাওর রয়েছে। এ ছাড়া কথিত আছে দুদকের চেয়ারম্যানের এক ঘনিষ্ঠ পরিচালক শিকদার গ্রুপের সাথে বিশেষ সখ্য রয়েছে।
শিকদার গ্রুপের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের তিনটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও কেউ লাগাম টেনে ধরছে না, যেমন- শিকদার মেডিকেল কলেজের নামে সমুদ্রগামী লাক্সারি বোট ক্রয়ের টাকা আমেরিকায় পাচার করা হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত লাক্সারি বোটের দৃশ্যমান অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শিকদারের পুত্রবর গুলশানের বাসায় দেশি ও বিদেশি উচ্চমানের কলগার্ল ও বিদেশি মদ আফিম সরবরাহ করে সরকারের কতিপয় অসাধু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে তাদের কৃত অপরাধ ধামাচাপা দিচ্ছে।
ব্যাংক থেকে ভুয়া প্রকল্পের নামে ভুয়া ডকুমেন্টে হাজার হাজার কোটি টাকার লোন নিয়ে তা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে, এসব কাজে শিকদার পুত্র রণ হকের একান্ত বিশ্বস্ত বন্ধু ও শিকদার পাওয়ার প্লান্টের দায়িত্বরত পরিচালক হুন্ডি চক্রের হোতা জনৈক মোহনকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের লুটপাট অনিয়মসহ সকল অপকর্মের তথ্য পাওয়া যাবে আর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে কিছু টাকা ত্রাণ নিয়ে তার ফটোসেশন করে তা বাহবা নেয়ার জন্য কিছু গণ মাধ্যমে প্রচার করছে।
বর্তমানে শিকদার গ্রুপের কর্ণধাররা প্রধানমন্ত্রীর কন্যার নামে রাজধানীর রায়েরবাজারে একটি অটিস্টিক হাসপাতাল করার নামে ফন্দিফিকির করে ব্যাংক থেকে আবারো ১ হাজার কোটি টাকা লোন নিয়ে তা বিদেশে পাচার করার পায়তারা এখনও করছে। একজন ব্যবসায়ী শিকদার গ্রুপের এ সব অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত ভাবে দায়ের করে ত্বরিতগতিতে তদন্ত করে। শিকদার গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছে।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার ছেলে-মেয়ে ৪ জন পরিচালকের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রকল্পে বা একই প্রকল্প বার বার দেখিয়ে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র ব্যাংকে মর্গেজ হিসেবে জমা রেখে শিকদার গ্রুপের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ৮টি ব্যাংক থেকে ধাপে ধাপে কমপক্ষে ৭ হাজার কোটি টাকার লোন নিয়ে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যাংকের দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলেও সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর এর সাথে শিকদার গ্রুপের কর্ণধারদের বিশেষ সম্পর্ক থাকার কারণে সংশ্লিষ্টরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে একটি মহল মনে করছে । শুধু তাই নয় শিকদার গ্রুপের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের ব্যাপারে তিনটি প্রতিবেদন সহ একাধিক অভিযোগ দাখিল করা হলেও এখনও পর্যন্ত রহস্যজনক ভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা (এনবিআর) কেউই মামলা করেনি।
এ ছাড়া এই দুর্নীতিবাজ শিকদার পরিবারটির আরেকটি কুকীর্তি হলো, শিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজে ফরেন স্টুডেন্টদের ভর্তির অনুদানের টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক লি: এর FIC একাউন্টে ডলার জমার সাথে তাদের লুটপাটের মোটা অংকের টাকা FIC একাউন্টের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে। উক্ত একাউন্টটি সুষ্ঠু তদন্ত করলে পাওয়া যাবে শিকদার পরিবারের আরও দুর্নীতির চিত্র। এতকিছুর পরেও এক্ষেত্রে দুদক/প্রশাসন সকলে কেন নীরব? রাষ্ট্রের কাছে এবং জনগণের টাকা এভাবে লুটপাটের পরেও এখনও পর্যন্ত শিকদার গ্রুপের কর্ণধারদের ফৌজদারি ধারার আইনে মামলায় গ্রেফতার করে কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না ! সেটি এখন দেশের সচেতন নাগরিকদের জিজ্ঞাসা? শিকদার গ্রুপের এ সব অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কিছুদিন আগে দেশের প্রথম শ্রেণীর একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় শিকদার গ্রুপের পেটুয়া বাহিনীর সদস্যরা ওই রিপোর্টারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিল, তার সুষ্ঠু বিচার হয়নি এবং শিকদার গ্রুপের দৌরাত্ম্য কমেনি বরং দিনে দিনে তাদের অপরাধ জগতের জৌলুস বেড়েই চলেছে, শিকদার পরিবারের গুলশান ও ধানমন্ডির বাড়িতে অভিযান চালালে জানতে পারবেন সেখানে রয়েছে বিচিত্র সিকিউরিটি লক ও টর্চার সেল, রয়েছে নানা রকম মাদকের মজুত ও বিনোদনের বিচিত্র উপকরণসহ ব্ল্যাকমেইল করার নানা ধরনের কারসাজি, দেশের বড় বড় আমলা ও বিদেশি ব্যবসায়ীদের নিজেদের কব্জায় আনার জন্য মদ ও মেয়েদেরকে ব্যবহার করে থাকে এবং সেটি সিসি ক্যামেরায় বন্দী করে রেখে ব্ল্যাকমেইল করে থাকে, শুধু দেশেই নয় বিদেশেও শিকদার পরিবারের দামী গাড়ী বাড়ি নির্মাণ সহ প্রচুর অর্থ জমিয়েছে কানাডা-আমেরিকা সহ বিশেষ করে থাইল্যান্ড ও দুবাইতে অর্থ পাচার করে আলিশান ফ্লাট বাড়ি এবং রিসোর্ট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে এছাড়া ২৫ নং বাঙলোতে প্রমোদ বালাখানা তৈরি করেছে।
অপরদিকে বিএনপির সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোর্শেদ খানের মিলিনিয়াম মটরস এর নামে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছে যা ভাগাভাগি হয়েছে। মোর্শেদ খানের ৫০০ শত কোটি টাকার গ্যারান্টি ক্যাশ হয়ে যাওয়ার পরে সেই টাকা রিকোভারি না করেই আরও ৪০০ শত কোটি টাকা ঋণ দিয়ে ভাগাভাগি করেছে। এ ছাড়া শিকদার গ্রুপের চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির চিত্র জানতে হলে শিকদার রিয়েলস্টেট এবং R & R এভিয়েশন এর নামে এবং আরও অনেক নামে অর্থ লুটপাট করেছে, এসব বিষয়ে দুদককে আরও শক্ত হাতে অনুসন্ধান চালালে এবং শিকদার পরিবারের ছেলে সন্তানদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।