ভারতের কাছে হার দিয়ে শুরু। দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে হার। টানা দুই হারে পাকিস্তানের শেষ দেখে ফেলেছেন অনেকেই। পাকিস্তান নিজেও আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ক্রিকেট বড় অনিশ্চিয়তার খেলা। ভাগ্যের ভেলায় ভর করে পাকিস্তানের সামনে সুযোগ আসে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাল তারা। বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল বাবার আজমের দল।
সেমিফাইনালের পথটা মূলত সহজ করে দিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে সেমিতে যাওয়ার একটা শেষ সুযোগ করে দিয়েছে প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশকে হতাশ করে সেই সুযোগ কাজে লাগাল পাকিস্তান।
আজ রোববার পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১২৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪৮ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল সাতটি বাউন্ডারি।
জবাব দিতে নেমে ১১ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩২ রান করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।
অ্যাডিলেড ওভালে টস জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরুর আভাস দেন দুই ওপেনার শান্ত ও লিটন দাস। কিন্তু আভাস দিয়েও জুটি বড় করতে পারলেন না। ২১ রানে ভাঙে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন (১০)।
লিটনকে হারানোর চাপ সৌম্যকে নিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন শান্ত। এই জুটি থিতু হয়ে যায়। দুজনে মিলে খেলেন ৪৭ বল। কিন্তু রান তোলায় দুজনেই ছিলেন মন্থর। হারিস রউফ-নাসিম শাহদের বোলিং দাপটে উইকেটে ভুগছিলেন দুজন। এর মধ্যে ২০ রান করে বিদায় নেন সৌম্য। ১১তম ওভারে ভাঙে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জুটি।
এরপর উইকেটে আসা সাকিবের সঙ্গে যা হলো সেটা ছিল অবিশ্বাস্যকর। আম্পায়ারের বিস্ময়কর বাজে সিদ্ধান্তে এলবি দেওয়া হয় সাকিবকে। শাদাব খানের বলে সাকিবের প্রথম বল মোকাবিলাতেই আউট দেন আম্পায়ার। আত্মবিশ্বাসী সাকিব রিভিউ নিতে দেরি করেননি। শান্তকে জানান, তাঁর ব্যাটে লেগেছে বল। টিভি রিপ্লেতেও ব্যাটে-বলের স্পর্শ দেখা যায়। কিন্তু আম্পায়ার সেটা আমলে নিলেন না। তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন। হতাশ হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় বাংলাদেশ অধিনায়ক। দলীয় ৭৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর বাকিরাও আশা দেখাতে পারেননি। হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে উইকেটে ভালো কিছু করার আভাস দেন শান্ত। কিন্তু থিতু হয়ে যাওয়া ব্যাটার কিছুই করতে পারেননি। ৪৮ বলে ৫৪ রান করে বিদায় নেন শান্ত। এরপর শুধু হতাশাই দেখেছে বাংলাদেশ। একে একে সাজঘরের পথে হাঁটেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত-নুরুল হাসান সোহানরা। এত উইকেট হারানোর মিছিলে বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত থামে অল্প রানে।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন রিজওয়ান। কিন্তু কিপার নুরুল হাসান সোহান এই সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন। জীবন পাওয়ার পর ওপেনিং জুটিতে ৫৭ রান তোলে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত ১১তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন নাসুম। ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানি অধিনায়ককে। ৩৩ বলে ২৫ রান করে বিদায় নেন বাবর।
এরপর রিজওয়ানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে খেলায়া ফেরান ইবাদত। ৩২ রান করে ফেরেন রিজওয়ান। দুই ওপেনার ফিরলেও জয় পেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি পাকিস্তানের। ১১ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় বাবর আজমের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২৭/৮ (শান্ত ৫৪, লিটন ১০, সৌম্য ২০, সাকিব ০, সৈকত ৫, আফিফ ২৪, নাসুম ৭, সোহান ০, তাসকিন ১, মুস্তাফিজ ০ ; শাদাব ৪-০-৩০-২, নাসিম শাহ ৩-০-১৫-০, শাহিন ৪-০-২২-৪, হারিস ৪-০-২১-১, ইফতেখার ৩-০-১৫-১)।
পাকিস্তান : ১৮. ১ ওভারে ১২৮/৫ (রিজওয়ান ৩২, বাবর ২৫, নওয়াজ ৪, হারিস ৩১, শান মাসুদ ২৪, ইফতেখার ১, শাদাব ০; নাসুম ৪-০-১৪-১, তাসকিন ৩-০-২৬-০, ইবাদত ৩-০-২৩-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২১-১, সাকিব ৪-০-৩৫-১)।
ফল : ৫ উইকেটে জয়ী পাকিস্তান।