ভোলার দৌলতখানে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং, এতে প্রায় সব কাঁচা ও পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে এমনিতেই সড়কের অভাব। লোকজন, ছাত্রছাত্রী আলপথে ও খাল পেরিয়ে গন্তব্যে যায়। যেটুকু মাটির বা ইটের রাস্তা রয়েছে, তা–ও বারবার ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও সড়ক সংস্কার হচ্ছে না।
মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্রে জানা যায়, এ ইউনিয়নে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে বরাদ্দ আসে কম। এক দশক আগে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২১ কিলোমিটার মাটির সড়ক নির্মাণ করা হয়। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে ওই সব সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ গত মাসের শেষ সপ্তাহে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এতে ইউনিয়নের প্রায় সব কাঁচা ও পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ধসে গিয়ে ব্যবহার অনুপযোগী পড়ে দুটি পাকা সেতু। সেতুর ওপর সাঁকো বেঁধে চলাচল করছে মানুষ।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র বলছে, মদনপুরে তাদের কোনো সড়ক বা সেতু নেই। তিন বছর ধরে টেকসই সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে বারবার প্রকল্প পাঠালেও কোনো বরাদ্দ পাস হয়নি।
ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি খেয়াঘাট থেকে ট্রলারে চড়ে মেঘনা নদী পার হয়ে দৌলতখান উপজেলার মদনপুর যেতে হয়। যাত্রীবাহী ট্রলার থামে মদনপুর ইউনিয়নের টবগী গ্রামের বড়লোঙ্গা ঘাটে। গত বৃহস্পতিবার ওই ইউনিয়ন ঘুরে মানুষের ভোগান্তি চোখে পড়ে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বড়লোঙ্গা ঘাট থেকে করাতির খাল শিকদার বাড়ির দরজা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার মাটির সড়ক ক্ষয়ে পাশে জমির সঙ্গে সমান হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে বড় গর্ত। মাঝে একটি সাঁকো। ভ্যান বা অন্য কোনো গাড়ি চলতে পারে না। মাথায় করে মালামাল ওই এক কিলোমিটার নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন।
শিকদার বাড়ির জামে মসজিদ থেকে মদনপুর আলোর পাঠশালার দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। এটি ইট বিছানো সড়ক। সড়কের দুই পাশে ইট ও মাটি ধসে পড়েছে। পাটওয়ারী বাজার থেকে চেয়ারম্যান বাজারের আগপর্যন্ত দুই কিলোমিটার ইটের সড়কের একই অবস্থা। ওই সড়কে চরের প্রধান বাহন মোটরসাইকেল চলতেও সমস্যা হচ্ছে।
মোটরসাইকেলচালক মো. শাহিন বলেন, গত মাসের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোটরসাইকেল চালকেরা স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের এসব গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করেছেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে (২০২০) এ সড়কের আলমগীর ডাক্তার বাড়ির মোড়ে প্রায় ২০০ হাত খালে বিলীন হয়ে যায়। তখন তাঁরা মাটি ফেলে ইট বিছিয়ে সড়ক মেরামত করেন। এবার ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পর কেউ আর সংস্কার করেননি। সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়নের সব খেয়াঘাটের সংযোগ সড়ক বেহাল। ইউপি কার্যালয়ের সামনে চেয়ারম্যান খেয়াঘাট থেকে চেয়ারম্যান বাজার ও চেয়ারম্যান বাজার থেকে চরমুন্সি ইউনুস চৌকিদার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার কাঁচা মাটির সড়ক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঝে মাঝে বড় গর্ত। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এ সড়কের একটি সেতু ভেঙে পড়ে। তখন থেকে লোকজন সেতুর ওপর সুপারিগাছ দিয়ে সাঁকো পেতে চলাচল করছেন।
মদনপুর জাফর কলোনি থেকে (চর টবগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) মদনপুর আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার মাটির সড়কের দুই পাশের মাটি ক্ষয়ে গেছে। ওই সড়কে হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর। তিন বছর আগে এ সড়কে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। আম্পানের আঘাতে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি ভেঙে গেছে সেতুটি এক দিকে কাত হয়ে আছে। লোকজন সুপারিগাছ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে চলাচল করছেন।
মদনপুর আলোর পাঠশালার পেছন থেকে রূপসী কলোনি যেতে এক কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এ সড়কের মধ্যে একটি খাল আছে। কিন্তু সেখানে কোনো সাঁকো বা সেতু নেই। শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ সময় কাদাপানি ভেঙে খাল পার হয়। মদনপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা কাদাপানি মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে আসে। তারা হাঁড়িপাতিল বা পলিথিনে বই ও এক সেট জামাকাপড় নিয়ে আসে। বিদ্যালয়ে এসে পোশাক পাল্টায়।
মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম নাছির উদ্দিন বলেন, এলজিএসপি, ৪০ দিনের কর্মসূচিসহ বিভিন্ন বরাদ্দ দিয়ে এসব মাটির সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বরাদ্দের অভাবে সড়ক সংস্কার করতে পারছেন না। এলজিইডি এই ইউনিয়নে কোনো সড়ক নির্মাণ করেনি। এ ইউনিয়নে সব সড়ক জলবায়ুসহিষ্ণু হওয়া দরকার।