জাপানকে বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহত সহায়তা দেয়ার জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য জাপানের টেকসই এবং উদার সহায়তার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই।”
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি এখানে আকাসাকা প্যালেস গেস্ট হাউসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক কক্ষে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কে এম শাখওয়াত মুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গৃহীত বড় বড় উন্নয়ন উদ্যোগে জাপানের অবদান স্পষ্ট।
তিনি আরও বলেন, রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করতে জাপানের অব্যাহত সহায়তা ও সহযোগিতার ওপর বাংলাদেশ নির্ভর করছে।
তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য এবং আইএমও মহাসচিব পদে আগামী ১৭-১৮ জুলাই, ২০২৩ লন্ডনে অনুষ্ঠেয় সংস্থার আসন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রার্থিতার প্রতি জাপানের সমর্থন চেয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানের উন্নয়নের মডেলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু জাপানের উন্নয়ন মডেলের একজন প্রবল অনুরাগী ছিলেন এবং তিনি জাপানের অভিজ্ঞতা দিয়ে নিজের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়তে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালের ১৮-২৪ অক্টোবর জাপানে সরকারি সফরের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই সফর আজকের বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও জাপান অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করছে এবং বর্তমানে এই বন্ধুত্ব দিন দিন মজবুত হচ্ছে।”
শেখ হাসিনা এবং জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়েই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন।
উভয় নেতা বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বন্ধুত্ব দিন দিন সুদৃঢ় হচ্ছে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক দেশটির স্বাধীনতার জন্য জাপানি জনগণের অটল সমর্থন থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, “গত বছর (২০২২), আমরা আমাদের দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ তম বার্ষিকী উদযাপন করেছি।”
তিনি এ উদযাপনে অংশ নেয়ার জন্য জাপানের সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও জনগণের মধ্যে বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করেছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাপানে তার ষষ্ঠ সফরে আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে তার জাপান সফরের কথা স্মরণ করেন যখন দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ২৫তম বার্ষিকী পালন করেছিল।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষি, শিক্ষা, আইসিটি ও স্বাস্থ্যসহ প্রতিটি খাতে বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাপান সবসময় বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে আছে এবং আগামী দিনেও জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
বাংলাদেশ-জাপান কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের চেয়ারম্যান, জাইকার প্রেসিডেন্ট, জেট্রোর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পার্লামেন্টারি লীগের সভাপতি আজ এখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসভবন আকাসাকা প্যালেসে পৃথক সাক্ষাৎ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।