অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান। এর আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংস্কারের সিদ্ধান্ত যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পদক্ষেপ নিতে হবে। সংস্কারে জনগণের চাওয়া ও প্রয়োজনকে মূল্যায়ন করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিবের কাছে জনপ্রশাসন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এই সরকার তো সম্পূর্ণ নতুন। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনে এতোদিন ধরে আওয়ামী লীগ যেটা করেছে, এটাকে রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে বেশিরভাগই তাদের মতাবলম্বী লোকদের প্রমোশন দিয়েছে। ফলে, এখানে শৃঙ্খলা আনতে সময় লাগবে। নতুন করে লোক নিয়োগ তো সম্ভব না। যা আছে, তা দিয়ে কাজ করতে হবে। সেই ধৈর্য আমাদের ধরতে হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করতে একটি চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে- উল্লেখ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সেখানে বসে দেশের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালাচ্ছে। একইসময়ে শিল্প ক্ষেত্রে একটা অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। দেশের মানুষকে এই চক্রান্ত রুখে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সংস্কারে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের যে সংস্কার সেটি দ্রুত শেষ হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে। এই সরকার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এসেছে, আশা করি তারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।
বিএনপি মহাসচিব ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উল্লেখ করে বলেন, আমাদের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দেওয়ার জন্য এই দিনটিকে গুরুত্ব সহকারে পালন করার জন্য। সেই কারণে আমরা দুই দিনের কর্মসূচি দিয়েছি। কর্মসূচির মধ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেই সমাবেশে গত ১৫ বছরে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহিদ হয়েছেন ও নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের স্বজনদের নিয়ে সমাবেশ করা হবে। সেই সমাবেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। আর ১৫ তারিখ নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে সমাবেশ হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে জেলখানায় রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় অবহেলা করেছে। তার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, সাইয়্যদুল আলম বাবলু, শওকত হোসেন সরকার, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, মানিকগঞ্জের আফরোজা খান রীতা, এম এ জিন্নাহ, গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন, রিয়াজুল হান্নান, নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন, মুন্সিগঞ্জের কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ঢাকা মহানগরের আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুব দলের এম মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।