নিজস্ব প্রতিনিধি:
জ্বালানি তেলের নতুন দাম গতকাল শুক্রবার দিনগত রাত ১২টা থেকে কার্যকর হওয়ার পর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে সকাল থেকেই বাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়েও পাচ্ছেন না গণপরিবহণ। পেলেও উঠতে না পারছে না নারী, শিশু ও বয়স্করা। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে তারা। কর্মক্ষেত্রে সময়মতো পৌঁছাতে অনেকে বেশি ভাড়া নিচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেশি ভাড়া রাখছেন রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলচালকেরা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া গুনে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
আজ শনিবার সকালে যাত্রাবাড়ি থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ১২০ টাকার ভাড়া ২৫০- ২৮০ টাকা পর্যন্ত করছে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকেরা। রবিউল হাসান নামের এক রাইড শেয়ারিং চালক বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ায় রাজাধানীতে গাড়ি নেই। তেলের দাম বেশি আমরা কী করব।’
মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজারে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া গুনে এসেছেন উজ্জ্বল হোসেন। অন্যদিন তিনি ১২০ টাকা দিয়ে আসেন। আজ তাঁকে দিতে হয়েছে ২৫০ টাকা।
অনেক চালক আবার ভাড়া মনমতো না হলে যাত্রী নিচ্ছেন না। সকাল ৮টায় পান্থপথ এসে বেলা ১১টা পর্যন্ত কোনো যাত্রীকে নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হননি রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ১০ জনের বেশি যাত্রী ফিরিয়ে দিয়েছি। যাত্রীরা আগের ভাড়া দিতে চান। কিন্তু, আমরা তো আগের ভাড়াতেই যাত্রী নিতে পারব না? এ কারণে যাত্রী ছেড়ে দিয়েছি।’
বাড্ডা থেকে পান্থপথ এলাকার শমরিতা হাসপাতালে এক যাত্রীকে ১৩০ টাকায় নিয়ে আসেন মো. হাসান। তিনি বলেন, ‘১৫০ টাকার নিচে আসতাম না। কিন্তু, বসে ছিলাম। তা ছাড়া আগের কেনা তেল, তাই নিয়ে এসেছি। বাড়তি টাকায় নতুন তেল কিনলে কখনোই এত কম টাকা ভাড়া নিতে পারব না।’
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এক দিন পর আজ শনিবার বাস ভাড়া পুননির্ধারণে সরকারি কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহণ খাতে সমস্যা তৈরি হবে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে ভাড়া বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, বিআরটিএর সঙ্গে বিকেল ৫টায় বৈঠক শেষে এ বিষয়ে সিদ্বান্ত জানা যাবে।’
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকেই কার্যকর হয়েছে জ্বালানি তেলের নতুন দাম। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন বলছে—ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা আর পেট্রোলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে লাগবে ১১৪ টাকা। অকটেন কিনতে প্রতি লিটারে দিতে হবে ১৩৫ টাকা। আর, প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিগত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রিতে আট হাজার ১৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির পরপর প্রয়োজনীয় জ্বালানি না পেয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় অনেক মোটরসাইকেল চালককে। ঘটে সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও। এরই মধ্যে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরেও যান চলাচল বন্ধের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আজ শনিবার সকাল থেকে ব্যস্ত রাজধানীর চিরচেনা রূপ দেখা যায়নি। সকাল প্রায় ১০টা পর্যন্ত রাজধানীতে খুব একটা গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে গণপরিবহণের সংকট রয়েছে রাস্তায়। তাই, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।