শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়কের বাসায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে বিতর্কিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাছান মাহমুদ, গতকাল ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এদিন সবাই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেক সময় বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও সেখানে শ্রদ্ধা জানান। গতকাল সেই দিনে যদি মার্কিন রাষ্ট্রদূত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যেতেন তাহলে অনেক ভালো হতো। বাঙালির জাতি স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে যে কষ্ট-ত্যাগ সেটার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হতো। আমি জানি না তাকে কে পরামর্শ দিয়েছে মায়ের ডাক নামের ওই সংগঠনের কো-অর্ডিনেটরের বাসায় যেতে। যারাই এ পরামর্শ দিয়েছে তারা সঠিক পরামর্শ দেয়নি। আমি মনে করি, যেই পরামর্শ দিক সিদ্ধান্ত তো নিজের। কাজেই উনারও আসলে দিবসের দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল।
মন্ত্রী বলেন, তিনি যে সেখানে যাবেন এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কিছু জানতো না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেটি বলেছেন। মায়ের ডাক সংগঠন তারাই করেছে যারা গুম হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যারা গুম হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তাদের অনেককেই আবার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, পলাতক। অনেকে খুনের মামলার, মাদক মামলার আসামি। তারা গুম হয়েছে বলে বিএনপি বলে বেড়াচ্ছে। গতকাল যারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে গেছেন তারা তাকে বিতর্কিত করেছেন। এখানে বিতর্কিত করা সমীচিন হয়নি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যাচ্ছেন শুনে মায়ের কান্না সংগঠনের ৫০ জনের মতো সেখানে গিয়েছিলেন। তারা গিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি দিতে। যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তারা সে সুযোগ দেননি। তারা কথা বলতে চেয়েছিলেন, কথাও বলতে পারেননি। আমি মনে করি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যদি তাদের স্মারকলিপিটা নিতেন এবং তাদের সঙ্গে দু-কথা বলতেন তাহলে তার যাওয়া নিয়ে যে প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে সেটি হতো না, বলেন তথ্যমন্ত্রী।
এ ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো অবনতি হবে না বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় তাদেরও বিরাট ভূমিকা আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ। আমি মনে করি, এ ঘটনায় সম্পর্কে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। মার্কিন দূতকে আমি অনুরোধ করবো, তাকে যদি কেউ ভুল পরামর্শ দেয়, তাকে যদি এভাবে একপেশে করে তোলার চেষ্টা করে সেটির বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাবো।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সুমনের বাসায় প্রবেশ করেন তিনি। প্রায় ২৫ মিনিট তিনি সেখানে অবস্থান করেন। এরপর তিনি ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান।
সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রায় ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা ও সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের কাছে স্মারকলিপি দেয় ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠন।
প্রশ্ন উঠেছে, মার্কিন দূত সেখানে যাবেন তা এই সংগঠনের সদস্যরা জানলেন কীভাবে, কে বা কারা তাদের সেখানে পাঠালেন?