পুতিন বলেছেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ভাঙার চেষ্টা করছে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কিয়েভ এবং পশ্চিমারা, অভিযোগ পুতিনের মাতৃভূমি রক্ষায় ৯৯.৯% রাশিয়ান প্রস্তুত আছে, বলেছেন পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে জড়িত সব পক্ষের সাথে আলোচনা করতে রাশিয়া প্রস্তুত। কিন্তু কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা সমর্থকরা আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছে। রোববার বড়দিন উপলক্ষ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে। রাশিয়ার এই হামলা ১৯৬২ সালে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে মস্কো এবং পশ্চিমের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত উসকে দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধ অবসানের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ক্রেমলিন বলেছে, কিয়েভে মস্কোর সব ধরনের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। অন্যদিকে, কিয়েভ বলেছে, ২০১৪ সালের ক্রিমিয়াসহ চলমান যুদ্ধে দখল করা ইউক্রেনের সব অঞ্চল থেকে রাশিয়ার সৈন্যদের বিতাড়িত না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে ইউক্রেন।
রোববার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল রোশিয়া-১ এ প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ‘আমরা গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে এটি পুরোপুরি তাদের ওপর নির্ভর করছে। আমরা আলোচনার বিষয়টি নাকচ করছি না, তারা করছে।’
চলতি মাসে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলেছিলেন, বেশিরভাগ সংঘাতই আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়। তবে যুদ্ধ শেষ করার জন্য রাশিয়া একটি বাস্তব আলোচনার বিষয়ে এখনও ‘সিরিয়াস’ নয় বলে সিআইএর মূল্যায়ন তুলে ধরেছিলেন তিনি।
পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে ‘সঠিক পথে’ কাজ করছে রাশিয়া। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা রাশিয়াকে ভাঙার চেষ্টা করেছে। যদিও রাশিয়াকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওয়াশিংটন।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা সঠিক পথে কাজ করছি। আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ, আমাদের নাগরিকদের, আমাদের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করছি। এবং রুশ নাগরিকদের রক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই।’
রুশ সমাজ পশ্চিমের সাথে ভূ-রাজনৈতিক বিরোধ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে কিনা জানতে চাইলে পুতিন বলেন, ‘আমি মনে করি না এটি এত বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।’
রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিমারা ২০১৪ সালে মাইদান বিপ্লবের প্রতিবাদে রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের মাধ্যমে ইউক্রেনে সংঘাত শুরু করেছিল। ওই বিপ্লবের পরপরই রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়ার দখল নেয় এবং রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে কিয়েভের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে লড়াই শুরু করে।
পুতিন বলেন, ‘আসলে এখানে মূল বিষয় হল, আমাদের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নীতি; যার লক্ষ্য রাশিয়াকে, ঐতিহাসিক রাশিয়াকে ভেঙে ফেলা।’
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করতে রুশ সৈন্যদের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার এই নির্দেশের পর হাজার হাজার রুশ সৈন্য ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে। পুতিন বলেন, পশ্চিমারা ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়াকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। কিন্তু ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা ব্লকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে মস্কো।
ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা বলেছে, পুতিন যে সাম্রাজ্যবাদী ধাঁচের দখলদারিত্বের যুদ্ধ হিসেবে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়েছেন, সেটার পক্ষে কোনও যুক্তি নেই। কারণ এই যুদ্ধ ইউক্রেনজুড়ে দুর্ভোগ আর মৃত্যু ডেকে আনছে।
পুতিন রাশিয়াকে একটি ‘অনন্য দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, রাশিয়ার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে চায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যারা মাতৃভূমির স্বার্থে সবকিছু দিতে প্রস্তুত, তারাই এখানে প্রধান। এখানে আমার কাছে অস্বাভাবিক কিছু নেই।’
‘‘আর এটি আবারও আমার বিশ্বাসকে জাগিয়ে দিয়েছে যে, রাশিয়া একটি ‘অদ্বিতীয় দেশ’ এবং আমাদের অসাধারণ জনগণ আছে। এটি রাশিয়ার অস্তিত্বের ইতিহাসজুড়ে নিশ্চিত করা হয়েছে।’’
সূত্র: রয়টার্স।