ব্যাপক অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকটে ভুগতে থাকা পাকিস্তান বিদ্যুৎ বাঁচাতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, এখন থেকে দেশজুড়ে সব মার্কেট-শপিং মল রাত সাড়ে আটটার মধ্যে এবং যেসব রেস্তোঁরা ও কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়, সেসব রাত দশটার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
এছাড়া বিভিন্ন সরকারি কল-কারখানায় পুরনো যেসব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বেশি বিদ্যুৎ ব্যয় করে, সেসবও অবিলম্বে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন খাজা আসিফ। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আরও তিন সদস্য—শেরি রেহমান, খুররম দস্তগির এবং মরিয়ম আওরঙ্গজেব।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ বলেন, ‘এখন থেকে পাকিস্তানের সব মার্কেট-শপিংমল রাত সাড়ে আটটার মধ্যে এবং ওয়েডিং হল রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দেশজুড়ে বিদ্যুতের ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সে নির্দেশনার আওতায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সারা দেশে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।’
মার্কেট-শপিংমল ও ওয়েডিং হলে বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি সরকার নির্দেশিত এই সময়সীমা মেনে চলা হয়, ২০২৩ সালে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার বাঁচানো সম্ভব হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
বৈদ্যুতিক পাখার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেসব কল কারখানা পুরনো বৈদ্যুতিক পাখা আছে, সেগুলো অপসারণ করতে হবে। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহৃত হয়, সেগুলো চালাতে ব্যয় হয় ৬০ থেকে ৮০ ওয়াট বিদ্যুৎ; আর পুরনো যেসব বৈদ্যুতিক পাখা বিভিন্ন কল-কারখানায় ব্যবহার করা হচ্ছে, সেসব চালাতে ব্যয় হয় ১২০-১৩০ ওয়াট বিদ্যুৎ।’
‘এছাড়া সরকারি-আধাসরকারি বিভিন্ন অফিসকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পাখা-বাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করতেও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’
চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাকিস্তানে আলোকসজ্জার জন্য ব্যবহৃত উজ্জল বাতিও নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন খাজা আসিফ। এই পদক্ষেপ নিয়ে বছর শেষে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার বাঁচানো সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
২০২২ সালে সিমেন্ট, লোহা ও কাঁচের দাম অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ খাতের জন্য নতুন একটি নীতিমালা সরকার শিগগির গ্রহণ করবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
সেই সঙ্গে পেট্রোল বাঁচাতে দেশজুড়ে বৈদ্যুতিক বাইকের (ই-বাইক) ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই, জনগণ বৈদ্যুতিক বাইকের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠুক। যারা বৈদ্যুতিক বাইক কিনবেন, তারা ডিলারের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা ও ছাড়ও ভোগ করবেন।’
বছরের পর বছর ধরে সামরিক শাসন, পরিকল্পনা ও ব্যাবস্থাপনার গুরুতর ঘাটতি, সামরিক-সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের দূর্নীতির জেরে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ভয়াবহ আর্থিক সংকট শুরু হয়েছে পাকিস্তানে।
কোনো দেশের ন্যূনতম আর্থিক ভারসাম্য বজায় থাকতে হলে ওই দেশটির রিজার্ভে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো ডলারের মজুত থাকতে হয়। পাকিস্তানের রিজার্ভের এখন যে অবস্থা, তাতে কোনো মতে এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।