শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সড়ক ও জনপথ কর্মকর্তার ব্যাংকে শত কোটি টাকার লেনদেন হরিরামপুরে ৪ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ ডিপিএইচই’র প্রাক্কলনিক আনোয়ারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিলেন শি জিনপিং বেনজীর-মতিউর-এর কুশপুতুল দাহ করায় হুমকি : উদ্বেগ প্রকাশ কোটা সমস্যার সমাধান করার দাবি জাতীয় শিক্ষাধারার হরিরামপুরে পদ্মা তীর রক্ষা বাঁধে ধস, জনমনে আতংক মুরাদনগর শ্রীকাইলে ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে হুরোয়া চ্যাম্পিয়ন তাড়াইলের কথিত পীর লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ বর্ষার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে নৌকার চাহিদা

প্রাকৃতিক বন্ধু শকুন আজ বিলুপ্তির পথে

সাব্বির আলম বাবু (নিজস্ব প্রতিবেদক):
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৫৮৩৩ বার পঠিত

ন-বাদাড় থেকে মৃতদেহ অপসারণে শকুনের বিকল্প নেই। কিন্তু উপকারী সেই শকুন দ্বীপজেলা ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিলুপ্তির পথে। এখনকার শিক্ষার্থীরা শকুনের নাম শুনছে মুরব্বিদের কাছ থেকে কিংবা বই পড়ে।

শকুন আকারে চিলের চেয়ে বড়। শরীর কালচে বাদামি। পালকহীন মাথা ও ঘাড়। কালো ও শক্তিশালী পা ও ঠোঁট। এদের বলা হয় শিকারি পাখি। প্রশস্ত ডানা তাদের। তাই দ্রুত ডানা ঝাঁপটিয়ে চলাচল করতে পারে। এরা লোকচক্ষুর আড়ালে ‘মহীরুহ’ বলে পরিচিত। এরা বট, পাকুড়, অশত্থ, ডুমুর প্রভৃতি বিশালাকার গাছে বাসা বাঁধে। অন্ধকার গুহা কিংবা গাছের কোটরে বা পর্বতের চূড়ায় এক থেকে তিনটি সাদা বা ফ্যাকাসে ডিম পাড়ে। পরিণত বয়সে দল বেঁধে আকাশে উড়ে। তাল, শিমুল, দেবদার, তেঁতুল, বট গাছের মগডালে বসে থাকে শিকারের আশায়। গলার স্বর খুবই কর্কশ ও তীব্র। এই প্রজাতির পাখি বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে শিকারি এই পাখিটি আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। শকুন না থাকায় নদী, খাল, বিল, হাওরে ও উপকূলীয় চরে প্রায়ই গৃহপালিত জীবজন্তুর মৃতদেহ দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। লোকালয় থেকে মৃতদেহ অপসারণ করা গেলেও জনবিরল প্রান্তের, জলাশয় ও বনে থেকে সম্ভব হয় না। বন-বাদাড় থেকে মৃতদেহ অপসারণের ক্ষেত্রে শকুনের কোনো বিকল্প নেই। যে শকুন প্রাণীর মৃতদেহ খেয়ে প্রকৃতিকে পরিষ্কার রাখে। তারাই আজ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশ প্রকৃতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইইউসিএ শিকারি প্রজাতির শকুনকে ‘বিশ্ব মহাবিপন্ন’ পাখি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এখন শকুন নেই বললেই চলে। যাও আছে তা ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে সাত প্রজাতির শকুন দেখা যেত। এর মধ্যে চার প্রজাতির শকুন অনিয়মিত ও আগন্তুক। প্রজাতি গুলো হলো- ইউরেশিয়-গৃধিনি, হিমালয়ী-গৃধিনি, ধলা শকুন এবং কালা শকুন। বাকি তিন প্রজাতি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করত। প্রজাতি গুলো হলো বাংলা শকুন, সরু ঠুঁটি শকুন ও রাজশকুন।

গত প্রায় ৪৫ বছরে সরু ঠুঁটি শকুন ও রাজশকুন বাংলাদেশ হতে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন মাত্র কয়েক শত ‘বাংলা শকুন’ বেঁচে আছে। এরাই বাংলাদেশের শেষ শকুন। এই শেষ শকুন গুলোও প্রতিদিন একটি দুটি করে মারা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হয়তো শকুন নিঃশেষ হয়ে যাবে। এমনটাই আশঙ্কা পাখি বিশারদদের। তথ্যানুসন্ধানে বাংলা শকুনের বিলুপ্ত হওয়ার কারণ হিসাবে জানা গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশে পশু চিকিৎসায় বেদনানাশক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ‘ডাইক্লোফেন’। ২০০৬ সালে ভারতবর্ষে পশু চিকিৎসায় ‘ডাইক্লোফেন’ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশে। কিন্তু এখনো গোপনে এর ব্যবহার হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের জন্য যে ডাইকোফেন আছে তাও গবাদি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ডাইকোফেনের বিকল্প হিসেবে যে ‘কিটোপ্রোফেন’ ব্যবহার করা হয় তাতেও শকুন মারা যায়। ওই সব ওষুধ খাওয়া মৃত পশু খেয়ে মারা যাচ্ছে শকুন। ফলে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে শকুনের সংখ্যা।

ইনাম আল হক বাংলা শকুনের প্রকার ও প্রকৃতি ও বিচরণচিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলা শকুনের বৈজ্ঞানিক নাম জিপস বেজ্ঞালেনসিস। চোখের সামনে অতি প্রয়োজনীয় ও অতুলনীয় এই পাখিটি সারা দেশের মতো ভোলা সহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এখনো তৎপর হলে এই বিলুপ্ত রোধ করা সম্ভব। প্রয়োজন কিছু দরকারি পদক্ষেপ ও কঠোর বাস্তবায়ন। যেমন-পশুচিকিৎসায় ‘ডাইক্লোফেনের’ ব্যবহার বন্ধের জন্য সরকারি নিষেধাজ্ঞাটি মাঠ পর্যায়ে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। তিনি আরো বলেন, মানুষের জন্য যে ডাইক্লোফেন রয়েছে, পশুচিকিৎসায় তার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কিটোপ্রোফেন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মেলোক্সিক্যাম ব্যবহার উৎসাহিত করা এবং শকুন না মারার জন্য প্রচারণা চালাতে হবে। মাঝে মধ্যেই মাথাচাড়া হয়ে উঠে বিপজ্জনক রোগ ‘অ্যানথ্রাক্স’। এ প্রসঙ্গ ধরে ইনাম আল হক তার লিখিত বইয়ে জানান ‘মৃত গরুর দেহে অ্যানথ্রাক্সের রোগ জীবাণু বা ‘স্পোর’ দীর্ঘ দিন টিকে থাকে এবং তা স্পর্শ করলে অন্য জীব সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। তবে শকুনের ব্যতিক্রম। অ্যানথ্রাক্স রোগাক্রান্ত গরু মারা গেলে তা খেয়ে শকুন সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। শকুনের মলে মৃতদেহের প্যাথোজেন বা রোগজীবাণু সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। রোগ-জীবাণু ধ্বংসের এই অসাধারণ দক্ষতার বলেই কোটি কোটি বছর ধরে মৃতদেহ খেয়ে শকুন টিকে আছে। গবেষণামুলক এক প্রবন্ধ থেকে জানা গেছে, মৃতদেহের রোগজীবাণু শকুনের পেটে সহজেই যেমন ধ্বংস হয়ে যায়, ইঁদুর, কুকুর ও কাকের মতো বিকল্প শবভুক প্রাণীর পেটে তা হয় না। তাই এদের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স, খুরা-রোগ, জলাতঙ্কের মতো অসুখ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়ার্ল্ড হেলথ বুকের তথ্য মতে, মৃতদেহ খাওয়ার প্রতিযোগিতায় শকুনের সাথে পাল্লা দেয়া কঠিন ছিল বলে আগে এ দেশে ইঁদুর ও লাওয়ারিশ কুকুরের মাত্রাতিরিক্ত বংশবৃদ্ধির ভয় ছিল না। এদের সংখ্যার ওপর শকুনের প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণটি খর্ব হওয়ায় এখন জলাতঙ্ক রোগ বেড়ে গেছে।

ভোলা জেলার রমাগঞ্জের প্রবীণ আব্দুল মালেক, ইউনুছ পাটওয়ারী ও রবিউল হক বলেন, এক সময় আমরা প্রতিদিনই শকুন দেখতে পেতাম, খালে বিলে পড়ে থাকা মৃত গরু, ছাগল, মহিষ ও অন্যান্য প্রাণীর পচা গোশত খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করত এই শকুন। এখন শকুন আর চোখে পড়ে না। রায়চাঁদের স্কুলছাত্র সোহেল, শাকিল, আব্বাছ বলল, মুরব্বিদের কাছ থেকে তারা শকুনের নাম শুনেছে কিন্তু দেখেনি কখনো।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..