সাইদুল ইসলাম মন্টু (বিশেষ প্রতিবেদক, বরিশাল):
কালের সাক্ষী দাঁড়িয়ে থাকা মুঘল স্থাপত্যের যে কয়টি পুরাকীর্তি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বরগুনা জেলার বিবিচিনি শাহী মসজিদ। উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বিবিচিনি ইউনিয়নে অবস্থিত মসজিদটি প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরোনো।
এই মসজিদ নিয়ে রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনী। কথিত আছে, সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে পারস্য থেকে শাহ নেয়ামতুল্লাহ নামে এক সাধক ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লি আসেন। ওই সময় সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র ও বাংলার সুবাদার শাহ সুজা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দের শেষে ইসলাম প্রচারের জন্য বজরায় চড়ে গঙ্গা নদী অতিক্রম করে বিষখালী নদীতে (তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপে) শিষ্যদের নিয়ে নোঙর করেন শাহ নেয়ামতুল্লাহ। তখন শাহ সুজার অনুরোধে ওই গ্রামে এক গম্বুজবিশিষ্ট শাহী মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে সাধক নেয়ামতুল্লাহ শাহের কন্যা চিনিবিবি ও ইছাবিবির নামের সঙ্গে মিলিয়ে ওই গ্রামের নামকরণ করা হয় বিবিচিনি এবং মসজিদটির নাম রাখা হয় ‘বিবিচিনি শাহী মসজিদ’।
দিগন্তজোড়া সবুজের মাঝখানে ৩০ ফুট উঁচু টিলার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বিবিচিনি শাহী মসজিদের ভবনটি প্রায় ২৫ ফুট উঁচু। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট, দেয়ালগুলো ৬ ফুট চওড়া। দক্ষিণ ও উত্তরে তিনটি দরজা রয়েছে। মসজিদের মূল প্রবেশদ্বার একটি। মসজিদের ধূসর বর্ণের ইটগুলো মুঘল আমলের ইটের মাপের সমান। দর্শনার্থী ও নামাজিদের ওঠানামার জন্য মসজিদের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি সিঁড়ি। মসজিদের পাশের ৩টি কবরে শায়িত আছেন সাধক নেয়ামতুল্লাহ এবং তার দুই মেয়ে চিনিবিবি ও ইছাবিবি।
১৯৯২ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব নেয় এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত করে। ইতিহাসসমৃদ্ধ এ স্থাপত্যটি রক্ষা করা সরকার ও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন, বেতাগী সরকারি কলেজের ইসলামি ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম।
বিবিচিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওয়াব হোসেন নয়ন মসজিদটির সংস্কার ও উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
মসজিদটি সংস্কার প্রসঙ্গে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আহমদ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবিচিনি শাহী মসজিদের প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের বিশেষ নজর রয়েছে বলে জানান।