রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
হত্যা মামলায় শাজাহান খান ৭ দিনের রিমান্ডে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান হতে হবে : পিটিআইকে প্রধান উপদেষ্টা ছাগলের সাথে এ কেমন শত্রুতা ? ৭দফা দাবিতে তাড়াইলে ইসলামী আন্দোলনের গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত ‘ভূমিহীন’ থেকে ১৫ বছরেই কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক শাহরিয়ার আলম আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের স্বর্ণপদক জয়ে অভিনন্দন তথ্য উপদেষ্টার বিএসএফের গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাসের মৃত্যুতে ভারতকে আহমদ শফী আশরাফী’র নিন্দা বামনায় সাংবাদিকদের সাথে ” আলোকিত সমাজ”র নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত সেন্টমার্টিন যেতে রেজিস্ট্রেশনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি : মন্ত্রণালয় ঘুষ ও চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম, কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আটক ৮

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোডের সময় : রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২
  • ৬০৮৫ বার পঠিত

ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথে টাকা লোড-আনলোডসহ মেইনটেনেন্সের দায়িত্ব পালন করছে ‘গার্ডা শিল্ড’নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আব্দুর রহমান নামে একজন সেখানে চাকরি নেওয়ার পর প্রতারণা শুরু করেন। তার নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল আর্থিক প্রতারণার কাজ শুরু করে। প্রতিদিন ব্যাংকটির বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতেন তারা। গত এক বছরে প্রায় তিন কোটি টাকা একই কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। এই ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘র‌্যাবের তদন্তে ও সিটিটিসির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রটির মূল হোতা আব্দুর রহমানসহ আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অভিনব কৌশলে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকটির দুই শতাধিক এটিএম বুথ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাংকের অডিটে এটিএম বুথের টাকার বেশকিছু গরমিল দেখা যায়। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থার্ড পার্টি আগের প্রতিষ্ঠান জি-৪ সিকিউরিটি গার্ড এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। নতুন করে গার্ডা শিল্ডের সঙ্গে চুক্তি করে। কিন্তু, অনিয়ম ও অর্থের গড়মিল বন্ধ হয়নি। অডিটে বিষয়টি ধরা পড়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও থার্ড পার্টি সিকিউরিটি এজেন্সি গার্ডা শিল্ড র‌্যাবের শরণাপন্ন হয়।

এরপর র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে র‌্যাব উদঘাটন করে যে, থার্ড পার্টি পরিবর্তিত হলেও টাকা লোডার ও অন্যান্য কারিগরী দলের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব তদন্ত অব্যাহত রাখে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে আব্দুর রহমান বিশ্বাস, তারেক আজিজ, তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ওরফে সোহান, রবিউল হাসান, হাবিবুর রহমান ওরফে ইলিয়াস, কামরুল হাসান, সুজন মিয়া ও আব্দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে জব্দ করা হয় দুটি চেকবই, একটি এটিএম কার্ড, চারটি আইডিকার্ড, একটি স্বর্ণের নেকলেস, এক জোড়া বালা, এক জোড়া কানের দুল, একটি আংটি এবং নগদ ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা।

খন্দকাল আল মঈন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা পরস্পর যোগসাজশে বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা বিগত ২৩ বছর একসঙ্গে চাকরি করার সুবাদে পরস্পর পরিচিত হয়। একপর্যায়ে তারা সমমনাদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে। গ্রেপ্তার আব্দুর রহমান চক্রটির মূলহোতা। তিনি তার এক পূর্ববর্তী সহকর্মী থেকে বিষয়টি রপ্ত করে বলে জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার অন্য সহযোগীরা কন্ট্রোল রুম, লোডিং, কলিং ও মেনটেইনেন্সের দায়িত্ব পালন করে থাকে। গ্রেপ্তাররা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিল। তারা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লোড করে থাকে। এসব বুথে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লোডার নিযুক্ত রয়েছে; যারা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে অর্থ পৌঁছে থাকেন। এ ছাড়া কারিগরী সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজন নিয়োজিত থাকতো।

প্রতারণার কৌশল

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা লোডিং ট্রে-তে টাকা স্থাপনের সময় ১৯টি ১০০০ টাকার নোটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে রাখতো। কোনো গ্রাহক এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে গোপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ওই পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্সবিনে জমা হতো। পরবর্তীতে সেই টাকা সরিয়ে নিতো চক্রের সদস্যরা। এক্ষেত্রে মেশিনের একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা টাকাগুলো আত্মসাৎ করতো।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনিই এই চক্রের মূলহোতা। তিনি তিন-চার বছর আগে জি-৪ সিকিউরিটিতে চাকরি করতেন। আর্থিক অনিয়ম ও টাকা উধাওয়ের কারণে জি-৪ সিকিউরিটি এজেন্সির সঙ্গে ডাচ বাংলার চুক্তি বাতিল হলে গ্রেপ্তার চক্রের মূল হোতা আব্দুর রহমান পুরো চক্রটি নিয়ে নতুন চুক্তিবদ্ধ গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটিজ এজেন্সিতে চাকরি নেয়। তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকা মিরপুর, কালশী, বেনারশিপল্লী, সেনপাড়াপর্বতা, ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকা। তিনি প্রতিদিন বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন।

চক্রের সব সদস্যই শিক্ষিত

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, চক্রটির সবাই শিক্ষিত। তবে বেতন পেতো ১৪ থেকে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তারা আত্মসাৎকৃত টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তার আব্দুর রহমান, সোহাগ পাঠান, হাবিব ও কামরুল এটিএম বুথে লোডিং, কলিং ও মেনটেইনেন্স এর কাজ করেন। গ্রেপ্তার কাদের, সুজন, রবিউল ও তারেক আজিজ এটিএম বুথে শুধু লোডিংয়ে কাজ করেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এক বছরে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ

চক্রটি প্রতিদিন ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত কৃত্রিম জ্যাম তৈরির পর আটকে রেখে আত্মসাৎ করতো। এভাবে নয় মাসে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে মর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অডিট রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।

কমান্ডার মঈন বলেন, থার্ড পার্টি হিসেবে গার্ডা শিল্ডের দায় ছিল। কারণ তারা লোকবল নিয়োগে অতীতের তথ্য ঘাটেনি। শুধু অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে। আর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক টাকা লোড আনলোডের ক্ষেত্রে নজরদারি রাখেনি। ব্যাংকের ও সিকিউরিটি এজেন্সির কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চক্রে জড়িত পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

দয়া করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..