চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, এই সরকারের আমলে পুলিশ কোনো রাষ্ট্রীয় বাহিনী নয়, পরিণত হয়েছে পুরোপুরি একটি দলীয় বাহিনীতে।
আজ সোমবার সম্পূরক বাজেটের বক্তব্যের সময় জাতীয় সংসদে তিনি একথা বলেন।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘পুলিশের উপর আস্থা তলানীতে : মানবাধিকার সংস্থা’ শিরোনামে ২০১৬ সালে বিবিসি বাংলায় এক রিপোর্ট হয়েছে। রিপোর্টে বলছে, পুলিশের হাতে সাধারণ মানুষের হয়রানি নিত্যদিনের ঘটনা। পুলিশের কাছে গিয়ে আবার কী নতুন করে সমস্যায় পড়তে হয়, এই ভয়ে অনেক মানুষ মহাবিপদে পড়েও পুলিশের দ্বারস্থ হয় না। এছাড়া, পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে টাকা আদায়, টাকা না দিলে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া। ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে দীর্ঘসময় হয়রানির মধ্যে রাখা হয়। নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে হয়রানির মধ্যে রাখা ইত্যাদির বিষয়ে এই রিপোর্টে উঠে এসেছে।
রুমিন ফারহানা আরও বলেন, রিপোর্টটি ২০১৬ সালের হলেও এ বিষয়গুলো এখন যে চলে গেছে না তা নয়। বরং আগের চেয়ে বেড়েছে বহুগুণ। তিনি আরও বলেন, এই সরকারের আমলে পুলিশ কোনো রাষ্ট্রীয় বাহিনী নয়, পরিণত হয়েছে পুরোপুরি একটি দলীয় বাহিনীতে। এটা হারে হারে টের পাই। এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিএনপির নেতারা।
তিনি আরও বলেন, একজন উল্লেখযোগ্য আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট। দুই সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালি উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকের হোসেন চৌধুরী বাচ্চুর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে তাকে বলতে দেখা যায়, আমি সরকারি দলের লোক, আমার তো সরকারি গুণ্ডা আছে। আছে না… লাইসেন্সধারী। এরা কী এনাদের (প্রতিদ্বন্দ্বী) প্রার্থীর কাজ করবে ? না আমি নির্দেশ দিলে আমার কাজ করবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করছে এবং গুম তো করেই। হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন একবারে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিকার চাইতে গেলে, তার উপরেও নেমে আসে নির্যাতন।
রুমিন ফারহানা আরও বলেন, গত ১২ জুন দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন- ‘পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা : পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাদী’। এই রিপোর্ট পড়লে বুঝবেন বাংলাদেশে স্রেফ একটা মাফিয়াতন্ত্র কায়েম হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজীব করের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর স্ত্রী ও মায়ের ২৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, মায়ের অস্ত্রপাচারের জন্য রাখা টাকা, মোবাইল ল্যাপটপ ও ব্যাগে রাখা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যান। পরদিন পরিবারের লোকজন দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। পুলিশ হেফাজতে থাকার সময় তিনি নির্যাতনে তিনবার জ্ঞান হারান। ব্যাট দিয়ে পেটানো হয়, প্লাস দিয়ে নক উপড়ে ফেলানো হয় এবং অবশেষে উলঙ্গ করে তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। এরপর তিনি পুলিশের দৃষ্টিতে একটি ভয়ঙ্করতম অপরাধ করেন, হেফাজত নিবারণ আইনে একটি মামলা করেন। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অসংখ্য ঘটনার মধ্যে একটা উদাহরণ দিলাম। এই ঘটনায় বেরিয়ে আসছে আরও একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা। রাজীব করের মামলা তদন্তের সময় এসআই বলেন, এতো হাঙ্গামা হবে জানলে, তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতাম না। এতে করে ভবিষ্যতে হেফাজতে নির্যাতন করা পুলিশ দারুণ ম্যাসেজ পেয়ে গেলেন।