বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম প্রাচীন নগরী চট্টগ্রাম। প্রাচ্যের রানী হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর সমুদ্রের মোহনায় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আলাদা একটি সৌন্দর্যের নগরীর চট্টগ্রাম। কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে চট্টগ্রাম শহরের অপরিকল্পিত নগরায়ন ধীরে ধীরে এখন বিষ ফোঁড়ায় পরিনত হয়েছে। সারা পৃথিবী জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জেলা চট্টগ্রাম। আজ ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বদ্দারহাট মোড়ে কাশবন রেস্টুরেন্টে “চট্টগ্রামের পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা ও জেলা, মহানগর কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ দশটি সমস্যা রয়েছে কিন্তু সমাধানের জন্য কোন কর্তৃপক্ষই আন্তরিক নয়।
মিটিংয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুল কবিরের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার। প্রধান বক্তা ছিলেন সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ূন কবির। বিশেষ বক্তা ছিলেন সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা মাহতাব হোসাইন মাজেদ, সবুজ আন্দোলন নারী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক জোছনা আক্তার মুন্নি।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আমরা পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কয়ক বছর ধরে কাজ করছি। সংগঠনের যাত্রা থেকে চট্টগ্রামে সবুজ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে পরিবেশ বিপর্যয়ের যে দশটি দিক চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে অন্যতম পানি,শব্দ ও বায়ু দূষণ, নদীর নাব্যতা সংকট ও দখল,জাহাজ ভাঙা শিল্প সম্প্রসারণে সমুদ্র দূষণ,পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি, সবুজায়ন কমে যাওয়া,অবাধে পাহাড় কর্তন,অপরিকল্পিত নগরায়ন,খাল ও সরকারি খাস জমি দখল বর্জ্য অব্যবস্থাপনা ও সরকারি অফিস গুলোতে নাগরিক ভোগান্তি উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও পরিবেশ বিপর্যয় ভাবিয়ে তুলেছে।
সিটি কর্পোরেশনে মেয়রের পরিবর্তন হলেও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঠিকভাবে হয়নি। শহরের মধ্যে অবস্থিত খাল গুলো দখল দূষণে জর্জরিত। চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ কর্ণফুলী নদী যা মারাত্মক দূষণের ফলে জীববৈচিত্র্য ঝুঁকিতে রয়েছে। ৮৯ টি পয়েন্ট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৮১ টি। প্রায় ৬০০টি প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৪০০ শতের কাছে গনভুক্ত ও ২০০ কাছাকাছি পরিবারের অন্তর্গত। ইতোমধ্যে ৪শতের কাছাকাছি ঔষধি উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে বিলুপ্তর পথে। দূষণে বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে কালুরঘাট পয়েন্টে সব থেকে বেশি দূষিত। জাহাজ ভাঙা শিল্পের ফলে নদীর পানি কালো হওয়ায় পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের নিচে। জলজ ও মাছ বিলুপ্তি হয়েছে যাও কিছু বাকি আছে তা অস্তিত্ব সংকটে।নির্বিচারে পাহাড় কর্তন করা হচ্ছে দেখার কেউ নেই। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তার কাছে আমরা উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন না হলে দ্রুত পরিবেশ অধিদপ্তর ঘেরাও করা হবে।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সভাপতি ডাক্তার মজিবরৃ রহমান, চট্টগ্রাম মহানগরের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রক্সী জাহান, সহ- অর্থ সম্পাদক জেসমিন আক্তার জেসি, নারী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য নিশি আক্তার, সাংবাদিক এস ডি জীবন, সাংবাদিক জামাল হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক অজিফা ভূঁইয়া প্রমুখ।