নিজস্ব প্রতিবেদক: , আপলোডের সময় : সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩ , আজকের সময় : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

রাজউকের খালি জায়গা দখল করে ট্রাকস্যান্ড!

রাজধানীর উত্তরায় রাজউকের খালি জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাকস্ট্যান্ড এবং সেই সঙ্গে বাজার বসিয়ে করা হচ্ছে নীরব চাঁদাবাজি। বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় এই চাঁদাবাজি চলে আসলেও নিশ্চুপ কর্তৃপক্ষ। চাঁদাবাজির এমনই আসর জমে উঠেছে রাজধানীর উত্তরা ও তুরাগের খালপাড় নামক স্থানকে কেন্দ্র করে।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড় ব্রিজ থেকে দিয়াবাড়ি বিআরটি অফিসে যাওয়ার পথে রাস্তার দুপাশে অবস্থিত রাজউকের বিশাল খালি জায়গাতে গড়ে তোলা হয়েছে বালুবাহী অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড, গ্যারেজ, চোরাই মালামালের দোকানপাট, বাজার- এমনকি গাড়ি ব্যবসা পরিচালনার নামে দখল করা হয়েছে রাজউকের বেশ কিছু খালি প্লটও। আর এসব অবৈধ স্থাপনাকে ঘিরে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করে আসছে কথিত একটি স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন খালপাড় নামক ওই স্থান ঘুরে দেখা যায়, খালের পশ্চিমপাড়ে রাজউকের প্রায় ৩ বিঘারও বেশি জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বালুবাহী ট্রাকস্ট্যান্ড। অবৈধ ওই ট্রাকস্ট্যান্ডে শতাধিকেরও বেশি ট্রাক রাখা হয়েছে। প্রতিটি ট্রাক রাখার জন্য দৈনিক আদায় করা হচ্ছে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্ট্যান্ডের ট্রাক ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব টাকা স্থানীয় দখলদারদের হাত হয়ে চলে যায় ট্রাফিক সার্জেন্ট, টিআই (ট্রাফিক ইন্সপেক্টর) আর রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্চলের কর্মকর্তাদের পকেটে। একইভাবে রাজউকের আশপাশের খালি জায়গাগুলোতে গড়ে উঠা বাজার, দোকানপাট এবং বিশাল পার্কিং বাণিজ্যের স্থানগুলো থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে কতিপয় সিন্ডিকেট।

ওই এলাকার বিআরটি অফিসে যাওয়ার পথে দক্ষিণপাশের রাস্তা সংলগ্ন রাজউকের বিশাল জায়গা দখল করে গত এক দশক যাবৎ গড়ে উঠেছে পুরাতন গাড়ি কেনাবেচার আসর। গাড়ি ব্যবসায়ীরা মালিকানা জমিতে শোরুম বসালেও দোকানের সামনে থাকা রাজউকের খালি জায়গা দখল করে পার্কিং করা হয়েছে শত শত গাড়ি। ব্যবসায়ীদের দাবি, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য প্রতি মাসে তাদেরকেও দিতে হয় জায়গা ভাড়া। তবে কে বা কারা ভাড়ার নামে এই চাঁদা আদায় করছে এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ব্যবসায়ীরাও।

এদিকে খালপাড় রূপায়ন সিটির সামনেই গড়ে তোলা হয়েছে বাজার। স্থানীয় কথিত প্রভাবশালীরা যোগসাজশে রাস্তার পাশে পার্টস ও টায়ারের দোকান বসিয়ে প্রতি মাসে চালিয়ে আসছে রমরমা ভাড়া বাণিজ্য। এমনকি স্থানটিতে ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে মাত্র একশ গজ দূরত্বে রাস্তার উপর ট্রাক-বাস পার্কিং করে চাঁদা আদায় করে আসছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্যরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তার দুপাশে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড, বাস পার্কিং এবং চোরাই মালামাল কেনাবেচার দোকানপাট গড়ে উঠায় সন্ধ্যার পরই খালপাড়ের ওই এলাকা মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। ট্রাক ও বাসের হেলপাররা এসব মাদক সেবন ও কেনাবেচায় জড়িত। কতিপয় ট্রাফিক ইন্সপেক্টরদের যোগসাজশে রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং বাণিজ্য করা হয় বলে জানায় স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায়ই গাঁজাসহ বাসের হেলপারদের ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তবুও রাস্তার উপর পার্কিং বাণিজ্য থামছে না। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত রূপায়ন সিটির সামনের বাজার সংলগ্ন দোকানপাট উচ্ছেদ করলেও পুনঃরায় রাস্তার উপর দোকান বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে দোকানিদের কাছ থেকে পুলিশের জন্য ছয় হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে।

পুলিশের নাম করে খালপাড়ের ওই স্থানের দোকানিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় ও অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড ঘিরে মাদকের আসরের বিষয়ে জানতে চাইলে তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং আইনগত ব্যবস্থা নেব।

এদিকে সড়কের উপর বাস পার্কিং করে চাঁদাবাজি ও অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ইন্সপেক্টরদের অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের (উত্তর) সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আবু হাজ্জাজ বলেন, আমরা যানজট নিরসনে রাস্তার পাশে থাকা দোকানপাট সরিয়ে দিয়েছি। ওখানকার ট্রাকস্ট্যান্ডটি রাজউকের জায়গার উপর। এটির ব্যবস্থা রাজউক নেবে।

ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে ট্রাফিক কর্মকর্তাদের অর্থ আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমার টিআইদের জিজ্ঞাসা করব। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বছরের পর বছর ধরে রাজউকের জায়গা দখল করে চাঁদাবাজির বিষয়ে রাজউক উত্তরা ৩য় প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) হাফিজুর ইসলামের কাছে জানতে চাইলে ট্রাকস্ট্যান্ড ও আশপাশের অবৈধ স্থাপনা ঘিরে কতিপয় রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা লেনদেনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এসব কাজে রাজউক কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার কথা আমিও শুনেছি। তবে কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত আছে- তা সুনির্দিষ্ট করে জানতে পারিনি। তবে তথ্য-প্রমাণসহ কারো জড়িত থাকার কথা জানা মাত্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।