সাব্বির আলম বাবু (নিজস্ব প্রতিবেদক): , আপলোডের সময় : শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ , আজকের সময় : শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ, কর্মহীন ভোলার ৬৪ হাজার জেলে

মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০ মে রাত ১২টা থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোলার প্রায় ৬৩ হাজার ৯৫০ জন জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তবে সাগরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় জেলেরা মাছ শিকারে যেতে পারবেন।

টানা দুই মাসের বেশি সময় সাগরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে দিন কাটাবেন সে চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এসব জেলে। তাই নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত চাল দ্রুত বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান জেলেরা। ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের সমুদ্রগামী জেলে মো. নিজাম জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে জেলে পেশায় আছেন। কিন্তু তার এখনো জেলে কার্ড হয়নি। তাই তিনি অভিযানকালীন সরকারি কোনো সহায়তা পান না। তার মা-বাবাসহ সাতজনের সংসার। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসার চালাতে গিয়ে এনজিওর থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। এমন সময় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পাড়লেও অভিযানের সময় বিপাকে পড়তে হয় তাকে।

এক দিকে সাগরে অভিযান, অন্যদিকে এনজিওর কিস্তি। এতে করে অনেক এনজিওর অফিসারদের ভয়ে বাড়ি থেকে বাইরে গিয়ে থাকতে হয়। তিনি আরো জানান, একটি জেলে কার্ডের জন্য স্থানীয় মৎস্য অফিসে অনেক দিন যাওয়ার পরও তার জেলে কার্ড হয়নি। এখন সরকার ৬৫ দিনের অভিযান দিয়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে তিনি সাগর থেকে চলে এসেছেন। কিন্তু সরকার কোনো সহায়তা না করলে তার সংসার চালানোর উপায় থাকবে না। একই এলাকার সমুদ্রগামী জেলে মো. মনিরুল ইসলাম মাঝি জানান, সরকার সাগরে অভিযান দিয়েছে, এটি সব জেলে মানতে বাধ্য। তাই তারা সাগর থেকে চলে এসেছেন। কিন্তু সরকার অভিযানের সময় জেলেদের জন্য যে ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এগুলোও জেলেরা ঠিকমতো পায় না। ৩০ থেকে ২৫ কেজির ওপরে জেলেদেরকে চাল দেওয়া হয় না। তাই অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে যায়।

দৌলতখানের পাতার খাল এলাকার সমুদ্রগামী জেলে মো. জাকির মাঝি জানান, সাগরে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তারা ফিশিং বোট নিয়ে সাগর থেকে চলে এসেছেন। এখন একপ্রকার কর্মহীন দিন চলছে তাদের। ছোটবেলা থেকে জেলে পেশায় জড়িত থাকায় অন্য কোনো কাজ করতে পারছেন না তারা। আগের জমানো টাকা দিয়ে দু-এক সপ্তাহ কোনো মতে সংসার চললেও এর পর থেকে সংসারেও অভাব-অনটন শুরু হবে। তাই দ্রুত সরকারি সহায়তার চাল বিতরণের দাবি জানান তিনি। একই এলাকার মো. নিরব মাঝিসহ চার-পাঁচজন জেলে জানান, সাগরে মাছ ধরে সংসার চলে তাদের। কিন্তু ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। ধারদেনা করে দিন কাটাতে হবে। মাছ ধরা বন্ধ, তাই সাগরে যেতে পারবেন না এবং আয়-ইনকামও বন্ধ। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।

জেলেদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের জন্য যে পরিমাণ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয় সেগুলো সঠিকভাবে বণ্টন করা হয় না। তাই তাদের সংকটও দূর হয় না। চাল না দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জেলেদের নামে টাকা বরাদ্দ দিলে তাদের কিছুটা উপকার হতো।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলা জেলায় সমুদ্রে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে এমন জেলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯৫০ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় তিন হাজার ৬৯৮ জন, বোরহানউদ্দিনে সাত হাজার ৬৫০ জন, দৌলতখানে ১১ হাজার ৫৫০ জন, লালমোহনে আট হাজার ৮০৪ জন, তজুমদ্দিনে চার হাজার ৫০৬ জন, চরফ্যাশন উপজেলায় ১৭ হাজার ৫৬১ জন ও মনপুরা উপজেলায় ১০ হাজার ১৮৫ জন। অপরদিকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ফিশিংবোটের সংখ্যা মোট ১০ হাজার। এর মধ্যে সরকারি নিবন্ধনকৃত চার হাজার। বাকি ছয় হাজারের নিবন্ধন নেই।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে মাছঘাটগুলোতে সচেতনতাসভা ও প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এমন নিবন্ধিত ৬৩ হাজার ৯৫০ জন জেলে এ চাল পাবে। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে এ চাল বিতরণ করা শেষ হবে বলেও জানান তিনি।