সাব্বির আলম বাবু (নিজস্ব প্রতিবেদক): , আপলোডের সময় : শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩ , আজকের সময় : শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪

ভোলায় পেঁপেঁ চাষে বিপ্লব এনেছেন চেয়ারম্যান বিপ্লব

ঘন সবুজ পাতার মাঝে সারি সারি গাছে ঝুলছে অগণিত পেঁপে। প্রথমবারের মতো এ বছর ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা তাঁর সবুজ বাংলা কৃষি খামারের দুই একর জমিতে গ্রীণ লেডি ও টপ লেডি জাতের পেঁপে।

অল্প সময়ে ছোট ছোট গাছে এমন ফলন পেয়ে আনন্দে আত্মহারা চেয়ারম্যান বিপ্লব। তাঁর লাগানো পেঁপে গাছ থেকে গত ২০ থেকে ২৫ দিনে প্রায় দেড় লাখ টাকার পাকা পেঁপে বিক্রি করেছে। এখনো গাছে যে পরিমান পেঁপে রয়েছে তা প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী। কোনো প্রকার স্প্রে ছাড়া গাছে প্রাকৃতিকভাবে পাকানো এ পেঁপের স্থানীয় বাজারে রয়েছে বেশ চাহিদা। আর ক্রেতারাও এ সুস্বাদু ও তাজা পেঁপে খেয়ে বাজার থেকে বার বার কিনে নিচ্ছেন।

সরেজমিনে সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামে ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লার সবুজ বাংলা কৃষি খামারে গিয়ে দেখা গেছে, খামারের চতুর্পাশের বাঁধের ওপরে সারি সারি অশংখ্য পেঁপে গাছ। গাছগুলোর উচ্চতা চার থেকে ছয় ফুটের মধ্যে। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ রংয়ের পেঁপে। আবার বেশীরভাগ গাছে দুই একটি করে হলুদ রংয়ের পাকা পেঁপেও রয়েছে। এরকম দৃশ্য দেখলে যে কারো নয়ন জুড়িয়ে যাবে। সবুজ বাংলা কৃষি খামারের সত্বধিকারী ও বাপ্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা জানান, ছোট বেলা থেকেই কৃষি কাজে তাঁর আগ্রহ ছিল। তাই সেই আগ্রহ থেকে প্রায় ৩০ একর জমির উপর ২০০৫ সালে গড়ে তুলেছে সবুজ বাংলা কৃষি খামার। শখের বসে খামারটি গড়ে তুললেও ২০১০ সালে বানিজ্যিক ভাবে যাত্রা শুরু করে। খামারটিতে ধান, আদা ও পেয়াজ চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলেরও গাছ লাগিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আম, লিচু, মাল্টা ও বড়ই। আদর্শ এ খামারটি থেকে প্রায় বিভিন্ন ধরণের ফসল ও ফলের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। যার জন্য ২০২১ সালে ভোলা জেলায় ও ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে শ্রেষ্ট কৃষক হয়েছেন। এ খামারটির সফলতার কথা শুনে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পরিদর্শনে আসেন কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি খামারের কৃষি কর্মকাণ্ড দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

বিপ্লব আরো জানান, তাঁর খামারে চাষ করা প্রতিটি ফসলই বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই এ বছর খামারের উঁচু বাঁধের ওপরের প্রায় দুই একর জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে দুই হাজার পেঁপে গাছ লাগিয়েছেন। তিনি জানান, ৩০ টাকা করে দুই হাজার পেঁপের চারা কিনে রোপন করেন তিনি। তাঁর এ পেঁপে বাগান করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। গাছ লাগানোর তিন মাসের মাথায় প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমানে পেঁপের ফলন আসে। কিন্তু তিনি পাকা পেঁপে বিক্রি করার জন্য আরো তিন মাস অপেক্ষা করেন। সর্বশেষ ছয় মাস পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে দুই দিন পর পর ৫ থেকে ৭ মন করে পাকা পেঁপে বিক্রি করছেন তিনি। বেপারীরা খামারে এসেই প্রতি কেজি পেঁপে ৭০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যায়। তাঁর এ পেঁপে বাগান থেকে এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার পাকা পেঁপে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে প্রতিটি গাছে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি করে পেঁপে রয়েছে। তিনি আশাবাদী প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ১০০ টাকা কেজি করে পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন।

ইয়ানুর রহমান বিপ্লব তাঁর পেঁপে চাষের অভিজ্ঞতা থেকে জানান, ভোলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁপে আবাদে বেশ উপযোগী। পেঁপে চাষের জন্য শুধু একটা বিষয়ই গুরুত্ব দিতে হবে, সেটি হলো উঁচু যায়গা। কৃষকরা যদি ধানসহ অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পেঁপের আবাদ করে তাহলে অল্প দিনে ভালো লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।পেঁপে বাগানে পরিচর্যাকারী শ্রমিক মো. ইলিয়াছ জানান, পেঁপের চারা রোপন থেকে শুরু করে গত ৬ মাস ধরে তিনি এ পেঁপে বাগানে কাজ করছেন।পেঁপের আবাদ করতে তেমন কোনো সার-ওষুধের প্রয়োজন হয় না। শুধু খেয়াল রাখতে হয় যাতে করে ছত্রাকে আক্রমন না করে। ছত্রাকে আক্রমণ করলেও সঠিক সময়ে ওষুধ ব্যবহার করলে আর সমস্যা হয় না। এছাড়াও অন্যান্য ফসল ও ফলের চেয়েও পেঁপের আবাদ করতে কষ্ট কম এবং খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে এটি থেকে লাভবান হওয়া যায়। সবুজ বাংলা কৃষি খামারে পেঁপে কিনতে আসা বেপারী মো. ইমন জানান, এতো দিন তাঁরা ভোলার বাহির থেকে পাকা পেঁপে কিনে এনে ভোলার বাজারে বিক্রি করতেন। ওই পেঁপে গুলোতে খামারীরা স্প্রে করার কারনে ভোলায় আসতে আসতে অনেক পেঁপেই নষ্ট হয়ে যেতো। আবার সার-কীটনাশক ব্যবহারের কারনে পেঁপে গুলো মিষ্টি ও স্বাদ কম হওয়ায় ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে তারা ভোলার বাহির থেকে পেঁপে না এনে সবুজ বাংলা কৃষি খামার থেকে পাকা পেঁপে কিনে বাজারে বিক্রি করছেন।এতে পরিবহন খরচও বেচে যাচ্ছে। এ পেঁপেগুলো অধিক মিষ্টি ও সুসাধু হওয়ায় ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই তারাও এ পেঁপে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

পেঁপের চারা উৎপাদনকারী মো. কামাল জানান, তিনি গত ৬ মাস আগে সবুজ বাংলা কৃষি খামারে টপ লেডি ও গ্রীণ লেডি জাতের দুই হাজার পেঁপের চারা দিয়েছেন। বর্তমানে ওই পেঁপে গাছে ব্যাপক ফলন এসেছে। এ পেঁপে খেতে সুস্বাদু ও ফলের মিষ্টতার পরিমাণ শতকরা ১৩ থেকে ১৪ ভাগ। কৃষকরা যদি এ পেঁপে চাষ করেন তাহলে নিশ্চিত লাভ হবেন।