সাব্বির আলম বাবু (নিজস্ব প্রতিবেদক): , আপলোডের সময় : শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩ , আজকের সময় : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

ঝুঁকিতে যাত্রীরা, ভোলার অভ্যন্তরীন নৌপথে ফিটনেসহীন নৌযানের দৌরাত্ম্য

দীর্ঘদিন থেকেই দেশের উপকূলীয় জেলা ভোলার অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর যাতায়াত ব্যাবস্থা ভয়াবহ হয়ে আছে। বর্ষাকালে স্রোতের তীব্রতা আরও বাড়ে। প্রবল ঢেউ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ছোট ট্রলার দিয়ে উত্তাল নদী পাড়ি দেন যাত্রীরা। এসব নৌপথে চলা নৌযানগুলোর কোনো ফিটনেস নেই। যাত্রীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী কোনো সরঞ্জামও এসব নৌযানে রাখা হয় না। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে শত শত যাত্রীর প্রাণহানি ঘটতে পারে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় এসব নৌপথে বড় লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ভোলা জেলায় নদী ও সাগর মোহনার মধ্যে ৯টি ইউনিয়নসহ ৭৪টি চরাঞ্চল আছে। আছে ৬৬টি নৌপথ। এসব অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলছে অবৈধ ছোট নৌযান। এসব চরাঞ্চল-জনপদে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষের স্থায়ী বসবাস। এসব নৌপথ দিয়ে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।

ভোলা নদীবন্দরে কর্মরত নৌ নিরাপত্তা বিভাগের ট্রাফিক পরিদর্শক(টিআই) জাহিদুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়ার কারণে বছরের ৭ মাস (১৫ মার্চ-১৫ অক্টোবর) ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া নদী ও সাগর মোহনা বিপজ্জনক নৌপথে রূপ নেয়। এসব নৌপথে তাই ‘সি-সার্ভে সার্টিফিকেটধারী’ নৌযান ছাড়া যাত্রী বহন নিষিদ্ধ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বারবার বলা সত্ত্বেও প্রশাসন এসব ছোট নৌকায় যাত্রী পরিবহন বন্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না। চরাঞ্চলের জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি মনে করেন, যদি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকাগামী লঞ্চগুলোকে এই সাত মাস এসব চরাঞ্চলে ঘাট দেওয়ার ব্যবস্থা করত, তাহলে চরাঞ্চলের যাত্রীদের নৌ চলাচল অনেকটাই নিরাপদ হতো।

মনপুরার কলাতলীতে কর্মরত ভোলার গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার(জিজুস) এক কর্মকর্তা বশির আহমেদ বলেন, মার্চ-এপ্রিল এলেই মেঘনা নদী সাগরের মতো উত্তাল হয়ে যায়। এ উত্তাল ঢেউ অতিক্রম করে তাঁর মতো সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোলার মনপুরা উপজেলার ৫ নম্বর কলাতলী ইউনিয়নে যেতে হচ্ছে। ওই ইউনিয়নে যাওয়ার বৈধ কোনো নৌযান না থাকায় চাকরির স্বার্থে তাঁকে ছোট ছোট অবৈধ ট্রলারে যেতে হচ্ছে। যদি হাতিয়া-মনপুরা-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো কলাতলীর আবাসন বাজার খেয়াঘাটে নোঙর করত, তাহলে ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে বসবাস করা ৩০ হাজার মানুষের সঙ্গে বাইরের চাকরিজীবীদেরও উপকার হতো। তাঁরা নিরাপদে চলাচল করতে পারতেন। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনপুরা উপজেলা ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এখানে পাঁচটি ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর, মলংচরা ও চাঁদপুর ইউনিয়নের অংশ চর মোজাম্মেল ও চর জহিরুদ্দিন মেঘনা নদীর মাঝে। এখানে ৩৫-৪০ হাজার মানুষের বাস। এসব চরে ১০টি সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মসজিদ-মাদ্রাসা, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বন বিভাগের কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। এসব চরের মানুষের মূল ভূখণ্ডে ও ঢাকায় যাওয়ার জন্য কোনো নিরাপদ নৌযান নেই। তাই তাঁরা বাধ্য হয়ে ছোট ট্রলারে উপজেলা ও জেলা শহরে যাচ্ছেন।

চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, কুকরি মুকরি ও মুজিবনগরের যাত্রীরা জানান, উপজেলার ঢালচর, কুকরি মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। যাত্রীরা আরও জানান, লালমোহনের নাজিরপুর থেকে পটুয়াখালীর গলাচিপা ও বাউফল উপজেলার কয়েকটি ঘাটের উদ্দেশে অবৈধ ট্রলার ছেড়ে যাচ্ছে। এ নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। কিন্তু চালু আর হচ্ছে না।

মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলারের মাঝি শাজাহান, হেলালসহ একাধিক মাঝি বলেন, তাঁরা জেলা পরিষদের কাছ থেকে ঘাট ইজারা নিয়ে ট্রলার চালাচ্ছেন। এ ছাড়া তাঁদের যাত্রী বহনের আর কোনো কাগজ নেই। তাঁদের ট্রলারগুলোতে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম লাইফ জ্যাকেট, বয়া, এসব নেই।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, আমাদের সি-ট্রাকের সংকট রয়েছে। যেগুলো আছে, বেশির ভাগই বিকল। তবে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব পেলে পন্টুন বসিয়ে লঞ্চঘাট সৃষ্টি করে বড় বড় লঞ্চ নোঙর করাতে চেষ্টা করব।