নিজস্ব প্রতিবেদক: , আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ , আজকের সময় : বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

বাংলা টিভির অর্থ কেলেঙ্কারি: এমডি সামাদুল হকসহ পাঁচ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব তলব

বাংলা টিভির অর্থ কেলেংকারি ঘটনায় জড়িত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামাদুল হকসহ অপরাপর পরিচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে অভিযুক্তদের দ্রুত সময়ের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
এ লক্ষ্যে প্রথম ধাপ হিসেবে দুদকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ শাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ( বিএফ‌আই‌ইউ) মাধ্যমে বাংলা টিভির সামাদুলসহ সকল পরিচালকের ব্যা‌ংক হিসাব তলব করা হয়েছে । সেই সঙ্গে বাংলা টিভি যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে মানি ট্রান্সফার করে সেই ব্যাংকের কাছেও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
খবর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের। জানা গেছে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামাদুল হক ও তার সহযোগী পরিচালকদের আর্থিক কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাত ও মানি লন্ডারিংয়ের প্রাথমিক অভিযোগের সত্যতা পেয়ে চক্রটির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের প্রয়োজনে দুদকের উপ-পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সামাদুলসহ বাংলা টিভির সকল পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেয়। জুনেই প্রথম সপ্তাহে তাদের হাজির হতে বলা হলেও চক্রটি কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। গরমের কারণে অসুস্থ হ‌ওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সামাদুল হক দুদকে হাজির হতে দুই মাসের সময় চায়। অপর পরিচালকরাও কারো মা অসুস্থ, কারো বোন কারো স্ত্রী অসুস্থ, তাদের সেবা করা দরকার উল্লেখ করে দূই মাসের সময় চায়।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সামাদুলসহ অপর পরিচালকরা তাদের পরস্পরের অর্থ কেলেঙ্কারি ও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন এমন আভাস পেয়ে কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা এমন‌ও বলে দুই মাস পর বর্তমান সরকারের পতন হয়ে যাবে। তখন দুদক তাদের কিছু করতে পারবে না। যদিও দুদকের গোয়েন্দা টিমের কাছে এই খবর পৌঁছে যায়। এরফলে সংস্থাটি আরো কঠোর অবস্থানে যায় এবং বিএফ‌আইইউর মাধ্যমে বাংলা টিভির সমুদয় অর্থ লেনদেন তথ্য চেয়ে মঙ্গলবার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ শাখার মাধ্যমে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে জানা গেছে, দুদকের পক্ষ থেকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য সরবরাহের জন্য বলেছে। সে মোতাবেক আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, শান্তি নগর শাখাকে নির্দেশ দিয়েছে বিএফ‌আইইউ। চিঠির তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, বাংলা টিভি লিমিটেডের এমডি সৈয়দ সামাদুল হকের পিতার নাম সৈয়দ রফিকুল হক, মাতার নাম জুমেলা খাতুন; ঠিকানা: ৬০/২, তলাবাগ, সোবহানবাগ, ঢাকা। পরিচালক মীর নূর- উস-শামস( সামাদুলের ভাগনে) পিতা: মীর নুর উদ্দিন, মাতার নাম শামসুর নাহার বেগম। পরিচালক কে এম রিফাতুজ্জামান, পিতা : কে এম আক্তারুজ্জামান। পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম, পিতা- মহিউদ্দিন বিশ্বাস । পরিচালক কে এম আক্তারুজ্জামান, পিতা: এবিএম আখিরউদ্দিন খান।‌ তাদের কাছ থেকে (ক) ব্যাংক হিসাব,(খ)ঋণ হিসাব সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এবং হিসাব বিবরণী (গ) সঞ্চয় ও ক্রেডিট কার্ড, ভিজিট রিপোর্ট, টিভির শেয়ার বেচা কেনার টাকা কিভাবে স্থানান্তর হয়েছে কত টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রানজেকশান হয়েছে এবং অন্যান্য নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তিন কার্য দিবসের মধ্যে সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য ২০১৭ সালে সম্প্রচারে আসার আগে থেকেই নানা অভিযোগ ছিল ‘বাংলা টিভি’ নিয়ে। দিন যত গড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কেলেঙ্কারি ততটাই বেড়েছে। এনিয়ে দুদকে জমা পড়েছে একাধিক অভিযোগ। যা দুদকের গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে পূর্ণ অনুসন্ধান শুরু হয়।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে সামাদুল হককে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে তলবও করেছিলো দুদক। ২৮ মে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত অনুবিভাগের উপপরিচালক সেলিনা আখতার মনি সাক্ষরিত চিঠিতে সামাদুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৭ জুন তলব করা হয়। কিন্তু গরমে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে হাজির হননি অভিযুক্ত সামাদুল। কিন্তু বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি দুদক। বিষয়টি কঠোরভাবে তদন্তের জন্য ২০ জুন আরো একটি চিঠি জারি করে দুদক।
সেলিনা আখতার মনি সাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, “বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কেনা-বেচার নামে বিপুল পরিমাণ আত্মসাত ও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।”এতে :আরো বলা হয়, “এমন বহু অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে নিম্নেবর্ণিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।” চিঠিতে আরো বলা হয়, “অতএব,জরুরী ভিত্তিতে নিম্নস্বাক্ষরকারীর নিকট নিম্নেবর্ণিত রেকর্ডপত্র/কাগজপত্র পত্র প্রাপ্তির ৩ কার্যদিবসের মাঝে সরবরাহ করার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো।”
উল্লেখ্য, কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে শেয়ার হোল্ডারদের বাইরের লোককে চেয়ারম্যান করা, কর্মীদের বেতন-ভাতা না দেয়া, উল্টো প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে তাদের চাপ দিয়ে টাকা আদায় করা যা গণমাধ্যম আইনে অবৈধ, অংশীদারত্ব নিয়ে ইস্যু তৈরিসহ নানা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে বাংলা টিভির। আর এসবের পেছনে মূল ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাজ্য প্রবাসী সৈয়দ সামাদুল হক। জানা যায়, চ্যানেলের জন্য পুঁজি সংগ্রহ করতে গিয়ে চুরতার আশ্রয় নেয়া, মানি লন্ডারিং এবং অন্যের অর্থ আত্মসাতেরঅভিযোগ ওঠার পর দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। কিছু বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা মেলার পর তাকে সম্প্রতি তাকে তলব করে দুদক। অতিসম্প্রতি দেশের একাধিক শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকে বাংলা টিভির মালিকসহ শেয়ার হোল্ডারদের আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ তাদের নাম প্রকাশিত হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, চ্যানেলটির বর্তমান চেয়ারম্যান আখতার ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী কে এম আখতারুজ্জামান, তার ছেলে কে এম রিফাতুজ্জামান (পরিচালক) ও বিটিভির সাবেক সংবাদ পাঠক মনিরুল ইসলাম (ভাইস চেয়ারম্যান)। তাদের কাছে ২০ থেকে ২৫