দিপংকর মন্ডল, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: , আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩ , আজকের সময় : সোমবার, ২০ মে, ২০২৪

নৌ-অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন না করেই জ্বালানি খরচ লক্ষাধিক টাকা

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ী ও আজিমনগর-তিনটি ইউনিয়ন পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চল। উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই জনপদের মানুষের নৌযান ছাড়া যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। চরাঞ্চলের মানুষগুলোর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হয়েছিল একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু ব্যবহার না হওয়ায় তা অচল হয়ে পড়ে আছে। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি চরাঞ্চলের মানুষের কোনো কাজে আসছে না।

স্থানীয় ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় দুর্গত এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি বেইসড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হরিরামপুরসহ ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হয় একটি করে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ পাওয়ার পরে এ পর্যন্ত একজন রোগীও পরিবহন করা হয়নি। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের নয়াবাজারের পাশে ইছামতি নদীতে রাখা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সটির ইঞ্জিনও অচল অবস্থায় পড়ে আছে।

সরজমিনে গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) গোপীনাথপুর নয়াবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইছামতি নদীতে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। অ্যাম্বুলেন্সের সামনের বাম পাশের গ্লাস ভাঙা। শ্যাওলা ও ধুলাবালিতে নোংরা অবস্থায় আছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি।

স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি অব্যবহৃত অবস্থায় এখানে পড়ে আছে। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটিতে কোনো যাত্রী পারাপার করা হয়না।

শরিফ নামের এক যুবক বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন ধরে এখানে পড়ে আছে। আমরা জানি এটা নষ্ট। বিকেল বেলা এলাকার ছোট ছেলেপেলেরা অ্যাম্বুলেন্সে উঠে লাফালাফি করে। যে উদ্দেশ্য এটা দেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

চরাঞ্চলের তিন ইউনিয়নের লোকজন আন্ধারমানিক ও বাহাদুরপুর ট্রলার ঘাটের ট্রলারে পারাপার হয়ে থাকেন। আন্ধারমানিক ট্রলার ঘাটের মাঝি হানিফ বলেন, “নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়ার পরে থেকে চরের লোকজনের কোন কাজেই লাগেনি। একজন রোগীও পার করা হয়নি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সে করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আমাদের ঘাটের ট্রলার চলে। রাতের বেলায় কারও চিকিৎসা বা অন্য জরুরি প্রয়োজনে আমরা গিয়ে তাদের পার করি।

কান্দন নামের আরেকজন বলেন, এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স জনগণের এক পয়সার কাজেও লাগেনি। যে উদ্দেশ্যে এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সুতালড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলজার হোসেন বাচ্চু বলেন, উপজেলা সমন্বয় সভায় বার বার বিষয়টি বলার পরেও কোন সুরাহা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে উদ্দেশ্য নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চরাঞ্চলের মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি অচল হয়ে পড়ে আছে। তার আগে সচল থাকলেও কোন রোগী পরিবহন করা হয়নি।

অথচ সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি বাবদ ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫০ হাজার মোট দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মধ্যে দুই অর্থবছরে খরচ করা হয়েছে যথাক্রমে ৯৪ হাজার ৬৫৬ এবং ৩৮ হাজার ৩৯ টাকা, মোট এক লাখ ৩২ হাজার ৬৯৫ টাকা।

অ্যাম্বুলেন্সের ভারপ্রাপ্ত চালক হিসেবে শুরু থেকে কাজ করেছেন চান মিয়া। তবে, গত ফেব্রুয়ারিতে চালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শাকিল আহাম্মেদকে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মেহেরুবা পান্না বলেন, বিষয়টি আমি আসার পূর্বের। প্লিজ পূর্বের বিষয় নিয়ে আমাকে কোন কথা না বলে সামনের কাজগুলো ভালোভাবে করতে দিন। গতকাল নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটিকে গোপীনাথপুর নয়াবাজার এলাকা থেকে আন্ধারমানিক ঘাটে এনে রাখা হয়েছে। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।