রায়হান চৌধুরী (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: , আপলোডের সময় : সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ , আজকের সময় : বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

প্রতিষ্ঠার ১৩ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দারুসুন্নাত মাদ্রাসায় মাটির ঘরেই চলছে পাঠদান

১৩ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সরকারিভাবে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত মাদ্রাসার ৫৩৫ শিক্ষার্থী।
গ্রামীণ এ জনপদের দ্বীনি শিক্ষার আলো ছড়ানোর প্রয়াসে বি-চাপিতলা মাওলানা মিজানুর রহমান দারুসুন্নাত মাদরাসাটি ২০১০ সালে ৯০ শতাংশ জমির উপরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মাত্র ৫০জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে মাদরাসাটিতে এফতেদায়ী থেকে দাখিল পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৩৫ জন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সাথে শিক্ষার মান ধরে রাখলেও প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়নি। দাখিল পরিক্ষার অনুমোদন না থাকায় অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিস্ট্রেশন করে পরিক্ষা দিতে হচ্ছে।

২০১৪ সালে প্রাথমিক স্বীকৃতি লাভের পর পিএসসিতে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বৃত্তি সহ ১০০% পাশের সুনাম অর্জন করেন। ২০১৬ সালে জেডেসিতে রেজিষ্ট্রেশন পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। মিজানুর রহমান দারুসুন্নাত মাদরাসাটি জেডেসি পরিক্ষায় এখন পর্যন্ত আট বার অংশগ্রহন করে কয়েকটি বৃত্তিসহ শতভাগ পাশের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০১৯ পিএসসি পরিক্ষায় ৭টি জিপিএ ৫ নিয়ে উপজেলায় শীর্ষ স্থান অর্জন করেন।

২০১৯ সালে জেডেসি পরিক্ষায় রাকিবুল হাসান নামের এক ছাত্র পয়েন্ট তালিকায় জেলার মধ্যে শীর্ষ স্থান অর্জন করেন। আমাদের ছাত্র মাহমুদুল্লা এই মাদরাসা থেকে জেডিসি পাশ করে এখন জাপান ফোজি ইন্টারন্যাশনাল ল‍্যাঙ্গুয়েজ ইনিস্টিটিউটে পড়াশোনা করছেন। ২০২১ সালে আমাদের প্রথম দাখিল ব্যাচ শুরু হয়, এপর্যন্ত তিনটি ব্যাচে অনেক গুলো জিপিএ ৫সহ আমাদের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। ২০২৩ সালের দাখিল পরিক্ষায় ১০টি জিপিএ-৫, ১০টি পেয়ে উপজেলায় শীর্ষ স্থান অর্জন করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমাদের মাদরাসায় দাখিল পরিক্ষার অনুমোদন না থাকায় অন্য স্কুলের নামে রেজিস্ট্রেশন করে পরিক্ষা দিতে হচ্ছে, যার ফলে আমাদের অর্জন চলে যায় অন্যের ঝুলিতে।

মাদরাসার সুপার মোখলেছুর রহমান মুনিরী প্রতিবেদকের কাছে তার মাদরাসা সম্পর্কে বলেন, বি-চাপিতলা মাওলানা মিজানুর রহমান মুনিরী দারুসুন্নাত মাদরাসাটি কুমিল্লার মুরাদনগরে রামচন্দ্রপুর দক্ষিন ইউনিয়নে বি-চাপিতলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান সরকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আধুুনিকায়নের লক্ষ্যে নতুন নতুন ভবন তৈরি করে দিচ্ছে, এমতাবস্থায় একটি ভবন পেলে প্রতিষ্ঠানটির লেখাপড়ার মান বৃদ্ধি হতো এবং আমরাও সরকারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ হতাম ও মান সম্মত পাঠদান সম্ভভ হতো।

প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কামরুল হাসান মেম্বার বলেন, মাওলানা মিজানুর রহমান মুনিরী সাহেব তেরো বছর আগে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ পর্যন্ত ওই এলাকার গরিব অসহায় মানুষের সন্তানদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক যুগে নানা ধরনের সমস্যা যেমন- কম্পিউটার ল্যাব, ক্লাসরুম, শিক্ষকদের অফিসকক্ষ, ল্যাবরেটরী, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, খেলার মাঠ, শহীদ মিনার এগুলোর কোনটির একটিও উক্ত প্রতিষ্ঠানটিতে নেই। তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশ রুমসহ স্যানিটেশন ব্যবস্থা অপ্রতুল। সরকারী কোন অনুদান না থাকায় টিনের চালার নিচে ক্লাশ নিতে হচ্ছে। এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকদের বেতন দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পরে।

আরবি শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা ২১জন শিক্ষক অত্র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছি। মাশাআল্লাহ সবাই অনার্স, মাষ্টারস, কামিল শেষ করে এখানে আছি। পরিচালনা পর্ষদ যথেষ্ঠ মুল্যায়ন করে আমাদের সম্মানি দিচ্ছে। এমপিও হলে এবং সরকারী সুযোগ সুবিধা পেলে আমরা আরো উৎসাহিত হতাম।
মাদরাসার আরেক শিক্ষক কুতুবউদ্দিন রাফি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তোলার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় আমরা আমাদের পকেটের টাকা দিয়ে তাদের বই খাতা কিনে দিচ্ছি। সরকারের সদয় দৃষ্টি পেলে আমরা আরো ভালো কিছু করতে পারবো।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী ফরিদ উদ্দিন বলেন, বি-চাপিতলা মাওলানা মিজানুর রহমান দারুসুন্নাত মাদরাসাটি গ্রামীন জনপদে আলো ছড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কল্যাণে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।