দিপংকর মন্ডল, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: , আপলোডের সময় : বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ , আজকের সময় : বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

ক্ষতিকর তামাক চাষে ঝুঁকছে হরিরামপুরের কৃষকরা

স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বিষাক্ত তামাক চাষ করছেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কৃষকরা। তামাক চাষ মাটি, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সে বিষয়ে জানেন না তামাক চাষিরা।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, তামাক চাষে তাদের উৎসাহের নেপথ্যে বিডিসি, আকিজ টোব্যাকো সহ বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানি রয়েছে। চাষ পূর্ববতী ও পরবর্তী বিশেষ সহায়তা দিয়ে থাকে এসব বহুজাতিক কোম্পানি। তামাক চাষে বীজ ও সার ক্রয়ের জন্য নগদ টাকাসহ নানান উপকরণ সরবরাহ ও নিয়মিত তদারকি করে কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এসব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। একই সঙ্গে বিকল্প ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি ও ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা না থাকায় তামাক চাষে আগ্রহ বাড়ছে অনেক কৃষকের।

উপজেলার গালা ইউনিয়নের গোয়ালবাগ গ্রামের তামাক চাষী বাদশা মিয়ার ছেলে জানান, আমরা চারা কিনে রোপণ করি। নিয়মিত তামাক ক্ষেতগুলো পরিচর্যা করতে হয়। তারপর পাতা তোলার উপযোগী হলে পাতা সংগ্রহ করে বাঁশের কাঠি বা সুতার সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখি। পাতা শুকিয়ে গেলে আটি বেঁধে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। প্রতি কেজি তামাক রঙ ও মান ভেদে ১১০-১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।

তামাক ক্ষেতে কাজ করা এক শ্রমিক বলেন, আমরা সিরাজগঞ্জ থেকে কাজ করতে আসছি। যখন যে কাজ পাশ সেই কাজই করি। তামাক ক্ষেতে কাজ করলে ক্ষতি হয় কিনা জানিনা বাবা। কত মানুষই তো এই কাজ করে। উপজেলার অন্য চাষীরাও একই ধরনের কথা বলছেন।

স্থানীয় মো. সাব্বির নামের একজন বলেন, শুনেছি তামাক চাষের ফলে মানুষ হাঁপানী, ফুসফুসে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এগুলায় যদি সত্যি ক্ষতি থাকে তাহলে প্রশাসনের উচিত তামাক চাষ বন্ধ করা।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) কাজী একে এম রাসেল জানান, তামাক ও তামাকজাত পণ্য শরীরের জন্য ক্ষতিকর এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তামাক থেকে জর্দা, গুল, বিড়ি, সিগারেটসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পণ্য তৈরী হয়। তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহারের ফলে মুখে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি হয়ে ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক হওয়ার মত ঝুঁকিও থাকে। এছাড়াও যে এলাকায় তামাক চাষ হয়, তার আশেপাশের মানূষেরও শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, তামাক চাষ কৃষি জমির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। হরিরামপুর উপজেলায় প্রায় এক (০১) হেক্টর জমিতে তামাক চাষিরা সিগারেট কোম্পানির সহযোগিতায় সাথী ফসলের সাথে অধিক মুনাফার জন্য তামাক চাষ করে। ক্ষতিকর তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার জন্য আমরা মাঠপর্যায়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি এবং কৃষকদের এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করছি।