তীব্র রোদ-গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তীব্র গরমের কারণে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। রোগীর চাপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, তাড়াইল উপজেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী করিমগঞ্জ, ইটনা, কেন্দুয়া, নান্দাইল ও কিশোরগঞ্জ সদরের নীলগগঞ্জ থেকে আসা প্রচন্ড গরমে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আউটডোর ও ইনডোরে ভিড় করে আছে। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ডায়রিয়া, জ্বর ছাড়াও সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বয়স্ক ও শিশু ২৯০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ১০০ জন ভর্তি রয়েছে। রোগীর চাপ আরো বাড়বে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে ইনডোরে ভর্তি করেছেন জেলার সদর উপজেলার নীলগঞ্জ এলাকার শেফালী বর্মনের তিন সন্তানকে। তিনি বলেন, দুই দিন আগে হঠাৎ করে বাচ্চারা পাতলা পায়খানা করতেছে। এরপর পায়খানার দ্বার দিয়ে শুধু পানি নামতে থাকে। বাধ্য হয়ে ওই রাতেই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। এখন বাচ্চারা অনেকটাই সুস্থ আছে।
উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের বেলংকা গ্রামের নারগিস বেগম তার সন্তানের জ্বরের চিকিৎসা নিতে এসে তাকেও ভর্তি করতে হয়েছে। তার বাচ্চার বয়স দেড় বছর। গত কয়েকদিন থেকে সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছে। এলাকার ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাইয়েছেন। কিন্তু সুস্থতা আসেনি। তাই সরকারি হাসপাতালে এসেছেন।
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা থেকে সাবরিনা আকতার তার মেয়ে মাইশাকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করেছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। তাই এ বিষয়ে সর্তক থাকার আহবান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মাদ আলমাছ হোসেন বলেন, তীব্র রোদ ও অতিমাত্রায় গরমের কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি রয়েছে। এতে হাসপাতালের বেড ছাড়িয়ে ফ্লোরেও চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। আবহাওয়াজনিত কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। তবে হাসপাতালে ওষুধসংকট নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে জানান তিনি।