নিজস্ব প্রতিবেদক: , আপলোডের সময় : শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

সাবেক এপিএস লিকুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করবে দুদক

নিজের এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কিনেছেন ৫০০ বিঘা জমি। ঢাকার বসিলায় মধু সিটিতে দেড় বিঘা জমিতে করেছেন ১০ তলা ভবন। গাবতলী বাস টার্মিনালের ইজারা নিয়েছেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে।

গাড়ি-বাড়ি, ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন রাজধানী ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বিভিন্ন দপ্তরে বেনামে ঠিকাদারি করে। বিপুল অর্থ পাচার করেছেন বিদেশে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুদকে এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এমন বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়ার পর গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর বিষয়ে অনুসন্ধানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিগগিররই তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে বলে দুদকের একটি সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতায় বরখাস্ত লিকু

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়া এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর এপিএস পদ থেকে গাজী হাফিজুর রহমান লিকুকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২৯ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকু ও উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রভাবশালী এই দুই কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হঠাৎ করে বাতিলের খবরে সর্বত্র আলোচনার ঝড় ওঠে। গোপালগঞ্জ জেলার সাবেক ছাত্রনেতা লিকু প্রধানমন্ত্রীর অধীনে প্রায় ২০ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। তাই বিশেষত তার অপসারণের খবরে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। গোপালগঞ্জের অনেক স্থানে লিকুবিরোধীরা আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণও করেন।

উপজেলায় পাস করিয়েছেন নিজের প্রার্থীকে!

অভিযোগ অনুযায়ী, দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ও দলের ভেতর বিশাল প্রভাব বলয় গড়ে উঠেছে লিকুর। প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে এবং পদপদবি ব্যবহার করে তদবির বাণিজ্য করে থাকেন তিনি। সম্প্রতি প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোপালগঞ্জ সদর ‍উপজেলায় তার নিজের প্রার্থীকে জোর করে পাস করানোর অভিযোগ ওঠে লিকুর বিরুদ্ধে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লিয়াকত ভূঁইয়া সর্বোচ্চ ভোট পেলেও গভীর রাতে তাকে ফেল দেখিয়ে লিপু সমর্থিত প্রার্থীকে পাস করানোর অভিযোগ ওঠে।

পুরো পরিবারেরই সম্পদ বেড়েছে

দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জের জেলাপর্যায়ের একজন ছাত্র নেতা থেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর হাতে যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান লিকু ও তার পরিবারের সদস্যরা। পুরো পরিবারের সম্পদ ফুলে ফেঁপে উঠেছে কয়েকশ গুণ।

অভিযোগে লিকুর বিপুল সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, ঢাকার বসিলায় অবস্থিত মধু সিটিতে দেড় বিঘা জমির ওপর বিশাল আকারের ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। গোপালগঞ্জ শহরে তার ভাই-বোন শ্যালক, ভায়রা ভাইসহ অন্যান্য আত্মীয়ের মালিকানায় বেশকিছু বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদরসহ আশপাশে লিকু ৫০০ বিঘার মতো কৃষিজমি কিনেছেন। সেগুলোতে খামার ও ঘের করেছেন। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ইজারা হয়েছে লিকুর লোকজনের নামে। বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদারি ব্যবসাও করেছেন তিনি। ঢাকার ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে চলাচলকারী ওয়েলকাম পরিবহনের মালিকানা লিকুর পরিবারের।

দুদক যা বলছে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে একাধিক অভিযোগ পাওয়ায় অনুসন্ধানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনও অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ হয়নি।’

এ বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখনও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাইনি। পেলে জানাব।’