দিপংকর মন্ডল, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: , আপলোডের সময় : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪ , আজকের সময় : মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বর্ষার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে নৌকার চাহিদা

দিপংকর মন্ডল, হরিরামপুর উপজেলা প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জে পদ্মা যমুনার নদ নদির পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডিঙ্গি নৌকার চাহিদা। এর প্রভাবে নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। গত কয়েক দিনে নদীতে পানি বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নৌকা তৈরি। নৌকা তৈরিকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঠমিস্ত্রি ও কারিগররা। নতুন নৌকা তৈরির পাশাপাশি পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজও করছেন তারা।

১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হরিরামপুর উপজেলা। এ উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের বসবাস। বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলার জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে নৌকা তৈরিতে কাঠ মিস্ত্রি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দিনরাত কাঠ চিরানো, তক্তা ও গুড়া বানানো, রান্দা দিয়ে কাঠ মসৃণ করা, তক্তা জোড়া লাগানো ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করেন। নৌকা তৈরির মৌসুমী কাঠ মিস্ত্রিরা বর্ষা মৌসুম ব্যতিত সময়গুলোতে বাড়ির পারিবারিক কাজ ও কৃষি কাজ করে থাকেন। আবার পেশাদার কাঠ মিস্ত্রিরা সারা বছর নৌকা তৈরি ছাড়াও ঘর, খাট, চেয়ার, টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, আলনা, আলমারি ইত্যাদি গৃহস্থালী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কাঠ মিস্ত্রিরা কেউ কাঠ চিরাচ্ছেন, কেউ তক্তা ও গুড়া বানাচ্ছেন, আবার কেউ রান্দা দিয়ে কাঠ মসৃণ করছেন, কেউ কেউ তারকাঁটা (ছোট লোহা) ও পাতাম (লোহার পাত) দিয়ে তক্তা জোড়া লাগাচ্ছেন।

নৌকা তৈরির কারিগর উপজেলার গালা ইউনিয়নের ঝিটকা বাজারের রুবেল মিয়া জানান, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নৌকা তৈরির অর্ডার বৃদ্ধি পেয়েছে। ছোট ডিঙি নৌকার অর্ডার বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তবে সকল সাইজের নৌকাই তৈরি হচ্ছে। ছোট ডিঙি নৌকা সাধারণত ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। নৌকা কত হাত হবে তার ওপরে এর দামের কমবেশি হয়।

নৌকা তৈরির কারিগর (মিস্ত্রি) অলক বলেন, ছোটবেলা থেকে বর্ষার সময় নৌকা তৈরি করি। বড় নৌকার চেয়ে ছোট ডিঙ্গি ও কোশা নৌকার চাহিদা বেশি। এতে প্রতিটি ১০ থেকে ১২ হাতের নৌকা বানাতে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। বিক্রি করা যায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়।

একই এলাকার কাঠ মিস্ত্রি গোবিন্দ বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। তাই বর্ষার সময় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সারা বছর নৌকা তৈরি ছাড়াও ঘর, খাট, চেয়ার, টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, আলনা, আলমারি ইত্যাদি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে ২-৩ দিন সময় ও ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। হাটে ওঠালে একটি ছোট নৌকা ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।

নৌকা কিনতে আসা জসিম মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামটি খুবই নিচু। সামান্য বর্ষাতেই রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। বর্ষার সময় একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। বানের পানি নদী দিয়ে খাল-বিলে ঢুকতে শুরু করছে তাই নৌকা কিনতে এসেছি। নৌকার দাম ঠিক আছে। আমার কাছে মনে হয়ছে একটু কম দামেই নৌকা ক্রয় করতে পেরেছি।

উপজেলার ঝিটকা বাজারের নৌকা ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম জানান, গত বছর পানি না হওয়ার জন্য ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। আশা করছি এবার পানি বেশি হলে কিছুটা হলেও ব্যবসার অবস্থা ভাল হতে পারে। সর্বপুরি আমাদের ব্যবসাটা মূলত পানির ওপর নির্ভর করে। পানি বেশি হলে নৌকার চাহিদা বাড়ে। এতে করে বিক্রির পরিমাণও বাড়ে।