কাঠালিয়া (ঝালকাঠী) প্রতিনিধি: , আপলোডের সময় : শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪ , আজকের সময় : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

বিভিন্ন খাতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ শৌজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রিপনের বিরুদ্ধে

চরাঞ্চলের খাস ও রেকর্ডীয় মালিকানার জমি দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ ভূমিহীনদের কাগজ করার আশ্বাস ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার নামে আদায় করেছেন অর্থ। আওয়ামী শাসনামলের ১৬ বছরে দলীয় পদ লাগিয়ে ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান হয়ে ব্যাবসা থেকে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। মাহমুদুল হোনেন রিপন, তিনি হলেন কাঠালিয়া শৌজালিয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান   অন্যতম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার অন্যতম সহযোগী সহযোদ্ধা  সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান  এমাদুল হক মনির।
স্থানীয় সূত্রে  জানা যায়, আওয়ামী শাসনামলে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি  পদ বাগিয়ে   ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ওপরে উঠার সিঁড়ি পান। শৌজালিয়া ইউনিয়নে গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। চেয়ারম্যান রিপনোর অনুসারীরা মিলে চরাঞ্চলের বিভিন্ন পরিবারের প্রায়  জমি জোরপূর্বক দখল করেন।
এ ছাড়াও ভূমিহীনের জমির কাগজ করে দেওয়ার নামে মানুষের  কাছ থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা এবং শৌজালিয়া ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়ার নামে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয় চেয়ারম্যান  অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও ঘর দেননি এবং টাকাও ফেরত দেননি।
টাকা চাইলে ভুক্তভোগীদের হুমকি-ধামকি দিতেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তার বিশাল বাহিনীর মাধ্যমেই বিরোধী পক্ষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও ভূমি দখল করে আসছেন তিনি। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে এতদিন স্থানীয়রা মুখ খোলার সাহস পাননি।
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ফুঁসে উঠেছেন চরাঞ্চলের স্থানীয় শত শত ভুক্তভোগী পরিবার। সামনে আসে হঠাৎ করে  কোটিপতি চেয়ারম্যান  ক্ষমতার ফিরিস্তি।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, চেয়ারম্যান রিপন হোসেনের  নিজস্ব বাড়িসহ একাধিক প্লট রয়েছে। এ ছাড়া চরাঞ্চলের শৌজালিয়া  সরকারি জমি দখল। সম্প্রতি সরেজমিনে চরাঞ্চল শৌজালিয়া  ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গেলে শত শত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আলম  জানান, আমার মেম্বারের বয়স ২ বছর  এই দুই বছর   একদিনও আমি পরিষদে যেতে পারিনি। পরিষদের কোনো বেতন, রিলিফ, রেশন বা যাই কিছু আইছে আমাকে কোনো খোঁজখবর দেয়নি এবং কোনো মিটিংয়েও আমাকে যাইতেও দেয়নি।
এ ছাড়া রিপনের বাহিনীর কাছে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় ছেন (ধারালো অস্ত্র), রাম দা, কুড়ালসহ অস্ত্র আছে বলেও দাবি করেন তিনি। এলাকাবাসী কান্নাজড়িত কণ্ঠে শৌজালিয়া ইউনিয়নে মেম্বার   জানান, আমাকে রিপন চেয়ারম্যান চাঁদাবাজি, গাড়ি ছিনতাইসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মিথ্যা মামলা দেয়। যার ভিতরে ইতোমধ্যে আমি বেশ কয়েকটি মামলার রায় পাইছি। এসব মামলায় আমাকে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি করেছে এই চেয়ারম্যান।
এ ছাড়াও ভূমিহীনদের তালিকা তৈরি করে সরকারি খাস জায়গার কাগজ করে দেওয়ার জন্য এই রিপন চেয়ারম্যান আমার কাছে থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা নিয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি  মো. মাহমুদ হোসেন রিপন জানান, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেউ একটা রিপোর্ট দিল না। হঠাৎ করে এতোগুলো অভিযোগ এলো? আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
আবার ভূমিহীনদের টাকার বিষয়ে হলো চরাঞ্চলে তো ভূমিহীন নাই। ভূমিহীন কি হইছে যে তার জন্য টাকা নিব? এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সাজিয়ে প্ল্যান করে বলানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে তিনি যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে থাকে তাহলে তদন্ত করে প্রমাণিত হলে তাকে সাসপেন্ড করা হবে।
এছাড়া চাঁদাবাজির বিষয়ে কোর্টে মামলা করার পরে কোর্ট থেকে নির্দেশনা এলে আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারব। আর অস্ত্রের বিষয়ে আমি এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য পাইনি, আপনার কাছ থেকেই জানতে পারলাম। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। ব্যাপক অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে পরিষদের সদস্যসহ ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এছাড়াও নানা প্রকল্পে চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে  সদস্য’রা জানা যায়, শৌজালিয়া  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তার আমলে টিআর, কাবিখা, জিআর, কাবিটা, ভিজিডি, এডিবি, এলজিএসপি, ননওয়েজ, লজিক, ইজিপিপি, পরিষদের রাজস্ব খোযাড়-খেয়া ইজারার অর্থ, ইউপি ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি, হাটবাজার, ১% খাতের নিজের খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার করে থাকেন। তিনি  ইউনিয়ন পরিষদ অর্থ লুটপাট ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তিনি তার নিজ বাড়িতে অফিস খুলে পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং ভুয়া রেজুলেশন করেন। প্যানেল চেয়ারম্যান তৈরি করেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এমনকি একাধিকবার লাঞ্ছিত, অবরুদ্ধ ঘটনাও বাদ পড়েনি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মসজিদ,, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সরকারি অনুদানের টাকা ও বিভিন্ন গ্রামে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেওয়ার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। অপর দিকে ভিজিডি তালিকা প্রণয়নে ঘুস গ্রহণসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউপি চেয়ারম্যন রিপন বাহিনী তৈরি করে ভিজিডি তালিকায় নাম উঠানোর কথা বলে অসহায় দুস্থদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুস গ্রহণ করছেন।