আনোয়ার হোসাইন জুয়েল, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: , আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৪ , আজকের সময় : শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪

সার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ডিলারের বিরুদ্ধে কৃষি অফিসারের তদন্তের তালবাহানা, ডিলারদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ

মো. আনোয়ার হোসাইন জুয়েল, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি তৌফিকুর রহমানের কাছে বিসিআইসি সার ডিলার আবদুস সালামের বিরুদ্ধে গত ০৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছিল।

লিখিত অভিযোগে, উপজেলার ৫নং দামিহা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স আবদুস সালাম ট্রেডার্স (আবদুস সালাম) ১৫ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনকে গুদাম ও দোকান বানিয়ে রেখেছেন। তিনি সাব ডিলার ও কৃষকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অন্যত্র সার বিক্রি করা, আবদুস সালাম নিজের লাইসেন্সের বরাদ্দকৃত সার নির্ধারিত জায়গায় না এনে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া, ভুয়া কৃষকদের নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর-টিপসই দিয়ে রেজিস্ট্রার খাতা তৈরি করে রাখা, সাব ডিলারদের  স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তাদের নামে বিপুল পরিমাণ সার লিখে রাখা, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দামিহা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনকে তার দোকান ও গুদাম বানিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রমরমা ব্যবসার নামে কৃষকদের সাথে প্রতারণা ও প্রকাশ্যে সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি দেখানোসহ আরো অনেক দুর্নীতি বিষয় বস্তু উল্লেখ ছিল।

এসব দূর্নীতির বিষয়ে ৭ অক্টোবর জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয়।পরবর্তীতে ৯ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি তৌফিকুর রহমান অভিযোগের তদন্ত করার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন কুমার সাহাকে  দায়িত্ব দেন এবং সাত কর্ম দিবসের মধ্যে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেন বলে জানান।

উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন কুমার সাহা  দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অভিযুক্ত সারটিলার সালাম এর সাথে বিভিন্ন জায়গায় গোপনীয় সাক্ষাৎ করতে থাকেন। অভিযোগকারী তদন্তের খোঁজখবর ও নিজে উপস্থিত থেকে অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণাদি দাখিলের আবদার করিলে উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন কুমার সাহা তদন্তের সময় অভিযোগকারী কে সাথে রাখতে অনিহা প্রকাশ করেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন কুমার সাহা ৯ জন সাব ডিলারদের কৃষি  অফিসে এনে তাদের কাছ থেকে জোড় পূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন বলে অভিযোগ করেন সাব ডিলারগণ। সাব ডিলারগণ বলেন, আমাদেরকে ফোনে বলেছে অফিসে আসার জন্য সারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। কিন্তু তিনি কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। আমরা সাদা স্বাক্ষর দিতে অনিহা প্রকাশ করলে তিনি ধমকাধমকি করে স্বাক্ষর নেন।

বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স আবদুস সালামের দূর্নীতির বিরুদ্ধে অডিও, ভিডিও ও কাগজে পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত থাকা সত্যেও উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন কুমার সাহা তদন্তে তালবাহানা বিষয়টি সন্ধেহভাজন বলে মনে করছেন অভিযোগকারী ও সংশ্লিষ্ট লোকজন।

তাছাড়া বিভিন্ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ ও বিভিন্ন কৃষক মানুষ উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন কুমার সাহাকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যায়িত করেন। ইতিমধ্যে ২ নভেম্বর নিউজবাংলা২৪ ডট কম ও নাগরিক টিভি তেউপজেলা কৃষি অফিসার সুমন কুমার সাহার বিরুদ্ধে “এক কোটি টাকা আত্মসাত” শিরোনামে নিউজ হয়েছে।

এছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন কুমার সাহা কৃষি পণ্য কৃষদদের না দিয়ে বিভিন্ন কৃষকের নাম ব্যবহার করে অনত্র বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। কৃষি পণ্য বিরতণকৃত কৃষকদের নামের তালিকা তথ্য ফরমের মাধ্যমে চেয়েও কৃষকদের কোন তথ্য দিতে পারেননি অত্র কৃষি অফিসার।

উল্লেখ্য ৩ নভেম্বর উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন কুমার সাহাকে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তৌফিকুর রহমান বলেন, সার নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগের তদন্তটি কেন এত দেরি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখব।