নিজস্ব প্রতিবেদক , আপলোডের সময় : বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ , আজকের সময় : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

বিক্রি করা ফ্লোরের দলিল বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ সিটি ডেন্টালের বিরুদ্ধে

ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় সিটি ডেন্টাল কলেজ ভবনের তিনটি ফ্লোর বিক্রি করেও দলিল দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। দলিল দিতে আদালতের নির্দেশও বাস্তবায়ন করছে না তারা। অভিযোগ রয়েছে- প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম বদরুদ্দোজা ওইসব ফ্লোর অন্য জায়গায় নতুন করে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। প্রথম ক্রেতা নিকুঞ্জ কনভেনশন হল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে ভবন থেকে সরাতে নানা পাঁয়তারা করছেন। এ ঘটনায় বুধবার সিডিসির এমডি বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী হারিজ মাহমুদ জানান, সিডিসির এমডি বদরুদ্দোজা বুধবার ভবনের তিনটি লিফটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। ওই লিফটগুলো তিনি ১১ থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত তার কনভেনশন হলের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য ভাড়া নেওয়া অতিথিদের ব্যবহারের জন্য লাগিয়েছেন। লিফট বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি এখন কনভেনশন হল ভাড়া দিতে পারছেন না। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

জিডিতে হারিজ মাহমুদ অভিযোগ করেন, খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২ এলাকায় সিটি ডেন্টাল কলেজ (সিডিসি) টাওয়ারের চারটি ফ্লোর ক্রয়সূত্রে মালিক তিনি। ভবনের ১১, ১২ ও ১৩ তলা তিনি সম্পূর্ণ ক্রয় করেছেন এবং ২ তলায় তিনি ২ হাজার স্কয়ার ফুট স্পেস কিনেছেন। ওইসব ফ্লোরে তার নিকুঞ্জ কনভেনশন হল নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই হল তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দিয়ে থাকেন।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যবসার প্রয়োজনে তিনি নিজ খরচে ভবনে তিনটি লিফট লাগিয়েছেন। কনভেনশন হলে অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা এসব লিফট ব্যবহার করেন। তাদের পাশাপাশি ভবন কর্তৃপক্ষের লোকজনও এগুলো ব্যবহার করেন। কিন্তু গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সিটি ডেন্টাল কলেজের এমডি বদরুদ্দোজা তার লোকজন দিয়ে ওই তিনটি লিফটের বৈদ্যুতিক সংযোগ কেটে দেন। এ সময় তিনি লিফট কন্ট্রোল করার জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামও খুলে নিয়ে যান।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী হারিজ মাহমদু গণমাধ্যমকে জানান, সিটি ডেন্টাল কলেজের ১৩ তলা ভবনের তিনটি ফ্লোর তিনি ১৮ কোটি টাকা চুক্তিতে কিনেছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে। কলেজটির মালিক ছয়জন। এর মধ্যে বদরুদ্দোজা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। প্রতিষ্ঠানটির সব মালিকের অনুমতি পেয়েই ২০২২ সালে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে তিনি বায়না দলিল করেন। এরপর ওই তিনটি ফ্লোরে নিকুঞ্জ কনভেনশন হল করেন। দ্বিতীয় তলায় ২ হাজার বর্গফুটের স্পেসটি রুম অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন।

চুক্তি অনুযায়ী বায়না দলিলের সময় টাকা নিলেও দলিল দিচ্ছিলেন না কলেজের এমডি বদরুদ্দোজা। এ ঘটনায় আদালতে একটি মামলা করা হয়। ১ বছর আগে করা ওই মামলায় শুনানি শেষে আদালত সিটি ডেন্টাল কলেজের এমডিসহ সব মালিককে বিক্রিত ফ্লোরের দলিল দেওয়ার আদেশ দেন। সিটি ডেন্টাল কলেজের এমডি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে বলেছিলেন, দলিল দিতে হলে রাজউকের বিক্রয় অনুমতির কাগজ লাগবে। কারণ জায়গাটি রাজউকের। তখন আদালত বিক্রির অনুমতির কাগজ পাওয়ার পর দ্রুতসময়ের মধ্যে দলিল দেওয়ার কথা বলেন। এই সময়ের মধ্যে বাদীকে ব্যবসায়িকভাবে কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না বলেও আদালত নির্দেশ দেন।

হারিজ মাহমুদের অভিযোগ, বদরুদ্দোজা আদালতের নির্দেশ মানেননি, উপরন্তু সুমন নামের একজন ইলেকট্রিশিয়ানকে দিয়ে তিনটি লিফটের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। লিফট কন্ট্রোলেও সরঞ্জামও খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও এর প্রমাণ রয়েছে। ঘটনায় জিডি করার পর খিলক্ষেত থানা থেকে পুলিশ তদন্তে এসেছে। তারা সিডিসির এমডিকে ফোন করে লিফটের বিদ্যুৎ সংযোগ লাগিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন।

জিডির বিষয়ে খিলক্ষেত থানার ওসি মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ী হারিজ মাহমুদ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এসআই ফজলে এলাহীকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।

খিলক্ষেত থানার এসআই ফজলে এলাহী গণমাধ্যমকে জানান, তিনি থানার বাইরে অন্য একটি তদন্তে নিয়োজিত আছেন। একটি জিডি তদন্তের জন্য তাকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তদন্ত করার পর তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে সিডিসির এমডি বদরুদ্দোজার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।