বাঁধ না থাকায় ধনিয়া ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামে বছরের বেশির ভাগ সময় জলাবদ্ধতা থাকে। উচ্চ জোয়ারে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
মেঘনা নদীতে জোয়ারের উচ্চতা সামান্য বাড়লেই ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে বাড়ি ও বাড়ির আশপাশে পানি ওঠায় ওই ছয় গ্রামের ৪১০ পরিবার দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ১৫ বছর ধরে তারা এভাবে দুর্ভোগ পোহালেও কর্তৃপক্ষ এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি। এ সমস্যা সমাধানের জন্য এসব গ্রামের বাসিন্দারা রিংবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, ধনিয়া ইউনিয়নের কোড়ারহাট খাল থেকে নাছিরমাঝি-মিলবাজার খাল পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের মতো মেঘনার নদীর তীরে সিসি ব্লক ফেলে রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রায় ১২ বছর আগে মেঘনা নদীর তীর সিসি ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়েছে তীর থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পূর্বে। এ কারণে ধনিয়া ইউনিয়নের গুলি, বলরামসুরা, কোড়ারহাট, গঙ্গাকৃতি, পূর্ব-কানাইনগর ও দড়িরামশঙ্কর গ্রামের কিছু অংশ বাঁধের বাইরে পড়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ধনিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৫০টি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪০টি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১২০টি পরিবারের ঘর বাঁধের বাইরে পড়েছে। এ কারণে ঘূর্ণিঝড়, সাগরে নিম্নচাপ ও অমাবস্যা–পূর্ণিমার সময় জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে ওই ৪১০ পরিবারে বাড়িতে পানি ঢুকে যায়। বাড়ির উঠান ও আশপাশের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে থাকায় পরিবারগুলোর সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। বেশি সমস্যা হয় শিশুদের। তাদের পানির মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া করতে হয়। বাঁধের বাইরে নাছিরমাঝি মাছঘাটের কাছে মো. নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৭৬) ও তাঁর ছেলে মো. বিল্লাল হাওলাদার (৪১) বসবাস করেন। মেঘনার ভাঙনে তাঁদের পরিবারের প্রায় ১৫ একর জমি ভেঙে গেছে। মেঘনার তীর সংরক্ষণের পরে এখন মাত্র ৫০ শতাংশ জমি টিকে আছে। সেখানেও নিরাপদে নেই তাঁরা। নুরুল ইসলাম বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে পড়ায় জোয়ারের উচ্চতা একটু বাড়লেই ঢেউ এসে বসতভিটার ওপর আছড়ে পড়ে। ঘরের বেড়া ভেঙে যায়। ঘরে সাপ ও পোকামাকড় ওঠে।
গঙ্গাকৃর্তি গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী রুহিনা বেগম জানান, ঘরে পানি ওঠায় বসতভিটা উঁচু করতে করতে উঠান নিচু হয়ে গেছে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় সিসি ব্লকের ফাঁক দিয়ে উচ্চ জোয়ারের পানি প্রবেশ করে উঠান ডুবে যায়। পানি ভেঙে তাঁদের রাস্তায় বের হতে হয়।
বলরামসুরা গ্রামের শহিদুল ইসলাম, কোরামান সরদার, কামরুল ইসলাম, দড়িরামশঙ্কর গ্রামের সকিনা বিবি, রিজিয়া পারভীন ও জুয়াজান বিবি বলেন, উচ্চ জোয়ারে এলাকায় পানি উঠলে তাঁদের মসজিদে, বাজার, স্কুল ও শৌচাগারে যেতে সমস্যা হয়। ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, বসতঘরে পানি ওঠার কারণে পরিবারের বড়রা যেমন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, তেমনি শিশুরা ঝুঁকিতে আছে। প্রায়ই শিশুরা পানিতে পড়ছে। ১৫ বছর ধরে এ সমস্যা চলছে। পাউবোর ভোলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি তিনি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় ওই এলাকায় মাটির বাঁধ ও জলকপাট নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা ওই এলাকায় বাঁধ ও জলকপাট নির্মাণ করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করছি।
সাব্বির আলম বাবু (ভোলা ব্যুরো চিফ): ,
আপলোডের সময় :
শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ,
আজকের সময় :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
ভোলায় মেঘনার উচ্চ জোয়ার ছয় গ্রামে দুর্ভোগ চরমে
Print [1]