নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শেরপুরে পালিত হয়েছে গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা উৎসব। গারোরা বিশ্বাস করে ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন হয়। সেই জন্য শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য এই আয়োজন করে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের মানুষ।
জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার দুধনই ভাটিপাড়া গ্রামে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত এ উৎসবের আয়োজন করেন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) শেরপুর জেলা শাখা। গারো রীতিতে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে ফসল দেবতা মিসি সালজংকে উপাসনা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি নিজেদের কৃষ্টি-কালচারের নানা আয়োজনের ফাঁকে ফাঁকে স্থানীয় বিভিন্ন স্তরের অতিথিরা মঞ্চে উঠে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এসময় অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের (টিডব্লুএ) কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি অঞ্জন ম্রং, জেলা শাখার চেয়ারম্যান নীল মাধব হাজং, বাগাছাস সভাপতি, সহ সভাপতি সোহার্দ চিরান, শেরপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন, কবি ও সাংবাদিক রফিক মজিদ প্রমুখ। ওয়ানগালার গারো রীতির অনুষ্ঠানের পর স্থানীয় ও ঢাকা থেকে আগত ব্র্যান্ড দলের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় গান ও নৃত্যের মাধ্যমে জুম চাষ, ফসল কর্তন ও নতুন ধানের পিঠা ও ‘চু’ বা মদ তৈরি করে তা প্রথমে তাদের দেবতাকে এবং পরে উপস্থিত গ্রামবাসীর মাঝে বিতরণ করা নানা চিত্র তুলে ধরা হয়।
আয়োজকরা জানান, গারোরা খ্রীষ্টান ধর্মে ধিক্ষিত হওয়ার পর তাদের ওয়ানগালা উৎসব খ্রীষ্টান রীতিতে পালন করে আসছিলো। তবে গত কয়েক বছর ধরে পৃথকভাবে খ্রীষ্টান ও গারো রীতিতে এ উৎসব পালন করে আসছে। শুক্রবারের উৎসবটি ছিলো গারো রীতিতে। শুরুতেই বাণী পাঠের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। পরে গারোদের খামাল অভিলাষ চিরান খুথুব ও থক্কা বা চালের গুড়ার তিলক প্রদান এবং তাদের গোত্রের জনগণকে থক্কা দেয়া হয়। নুতন ধানসহ অন্যান্য ফসলকে উৎসর্গ করে এবং নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা ‘চু’ (মদ বা পানিয়) খেয়ে উৎসবের অন্যান্য আচারাদি পালন করা হয়। এরপর তাদের ফসল দেবতা মিসি সালজংকে ধন্যবাদ ও
কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন হয়। এই শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির পাশাপাশি ‘পরিবারে ভালোবাসা, আনন্দ, সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করে’। এছাড়া দূর-দূরান্তের অনেক আত্মিয়-স্বজন এই ওয়ানগালা উপলক্ষে বেড়াতে আসে। তাদের সাথে অনেকের দেখা-সাক্ষাতও হয় এই উৎসবকে ঘিরে। তবে এ উৎসবে প্রতি বছর নিজেদের কৃষ্টি ও কালকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
আয়োজকদের পক্ষে বাগাছাসের সহ সভাপতি সুহার্দ চিরান জানান ,বর্তমানে তাদের শেকরকে ধরে রাখতে প্রতিবারের মতো এবারও বাগাছাস এর আয়োজনে এ উৎসব পালন করেছে। এটা পালনের মূল উদ্দেশ্যই হলো, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের মূল কৃষ্টি ও ধর্মকে না ভুলে যায়।