নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে রাজধানীকে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তায় পালিত হবে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। সাভার স্মৃতিসৌধ, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, শেরেবাংলা নগরস্থ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
একইসঙ্গে এবার বিজয় দিবসে যেসব বিদেশি রাষ্ট্রীয় অতিথি আসবেন তাদের অবস্থানের জায়গাসহ যেসব স্থানে তারা যাবেন এবং যেসব সড়ক ব্যবহার করবেন সবখানেই থাকবে কঠোর নিরাপত্তা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের সব সেনানিবাসে বিজয় দিবসের ক্ষণগণনা, কনসার্ট, লেজার শো, প্রকাশনা ও মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ ছবি সংগ্রহ, প্রকাশনাও অব্যাহত রয়েছে। শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদান তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে। দেশের সব প্রাথমিক স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জেলা প্রশাসন অনুষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ মিলিয়ে ইতিহাসের এক অনন্য সময় পার করছে বাংলাদেশ। বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ার ও জাতীয় সংসদের সামনে মুজিববর্ষের সমাপ্তি ও বিজয় দিবসের উদ্বোধন; সব মিলিয়ে যে অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে সেসব অনুষ্ঠানস্থলের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিদেশি অতিথিদের অংশগ্রহণে বিজয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। ১৬ ডিসেম্বরের প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ হবে বড় আকারে। সেখানে ছয়টি দেশ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক একটি প্যারেড হবে।
জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি থেকে ‘মহা বিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠান হবে। এসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেও থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ হাজার সদস্য। আকাশ থেকে হেলিকপ্টারেও চলবে টহল।
১৬ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে একটি শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। দেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতি, পরিবেশ সব মিলিয়ে ৫০ বছরের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বরের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে। সব শ্রেণিপেশার মানুষ এতে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনাকে কেন্দ্র করেও নেওয়া হবে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা। বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করবেন।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৈরি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ২৬০ কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় ধরে চাহিদা পাঠিয়েছে উদযাপন কমিটি। এরমধ্যে দেশের এক লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই কেনার জন্য ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তা প্রচার করা হবে। ভারতের ত্রিপুরায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের হেডকোয়ার্টারে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। মুজিবনগর থেকে নদীয়া পর্যন্ত প্রস্তাবিত স্বাধীনতা সড়কের নির্মাণকাজ শুরুসহ বিশেষ স্মরণিকাও প্রকাশ হবে। উদ্বোধন করা হবে মোবাইলের বিশেষ গেম, টিভিসি ও চলচ্চিত্র নির্মাণ।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে খ্যাতিমান রাষ্ট্রনায়ক, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের অনেকেই অংশ নেবেন অনুষ্ঠানে। রাতে বিশেষ অতিথিদের নিয়ে বিশেষ নৈশভোজের ব্যবস্থা থাকবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক সংগীত, নৃত্য, সাজসজ্জা ও আতশবাজি ফোটানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, অনুষ্ঠান ঘিরে আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা কী হবে, নিরাপত্তার জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ হতে পারে—সব নিয়ে আমরা আলাপ করেছি।
তিনি জানান, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। এ ধরনের অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান এখানে হয়েছে। আমরা মনে করি, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা সবই নিরাপদে করতে পারবে। এখন পর্যন্ত যা শুনেছি, সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।