উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের ফাইভজির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বিশ্বখ্যাত তিন কোম্পানির আমন্ত্রিত কর্মকর্তাদের। টেলিটকের ফাইভজির পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের প্রধান অংশীদার চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের একাধিক কর্মকর্তা এ বাধা দেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় এরই মধ্যে হুয়াওয়ের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের লিখিত অভিযোগ দিয়েছে অপর চীনা কোম্পানি জেডটিই। ওই দিনের এ ঘটনার কারণে টেলিটকের অপর অংশীদার কোম্পানিগুলো এখনও ফাইভজির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেনি। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
হুয়াওয়ে চীনের বেসরকারি এবং জেডটিই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি। ওই দিনের অনুষ্ঠানে কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাংয়ের আমন্ত্রিত কর্মকর্তাদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে হুয়াওয়ের কর্মকর্তাদের অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য টেলিটকের অপর অংশীদার ইউরোপের কোম্পানি নোকিয়াও ফাইভজির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেনি। তারা আবারও একটি পৃথক উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে তোলপাড় চলছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, হুওয়াওয়ের কর্মকর্তাদের অসদাচরণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হুয়াওয়ে ভালো একটি প্রতিষ্ঠান, তাদের যন্ত্রপাতির মান ভালো, তারা বিভিন্ন কাজে সহযোগিতাও করে। তাদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। তিনি আরও জানান, প্রথমে টেলিটকের মোট ১০টি সাইটে ফাইভজির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালুর কথা ছিল। কিন্তু স্যামসাং এবং জেডটিই না আসায় এখন ছয়টিতে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর হোটেল র্যাডিসনে টেলিটকের ফাইভজির পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে টেলিটক। এ আয়োজনে স্পন্সর ছিল হুয়াওয়ে। কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে স্বাক্ষর ছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিবের। কিন্তু আয়োজনের শুরুতেই অনুষ্ঠানের ব্যানারে শুধু হুয়াওয়ে ছাড়া অপর অংশীদার নোকিয়ার লোগো ব্যবহারে বাধা দেয় হুয়াওয়ে। যে কারণে নোকিয়ার সংশ্নিষ্টরা কেউই ওই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আমন্ত্রিত হয়ে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসায় এ মুহূর্তে হুয়াওয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জেডটিইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তাকে হোটেল র্যাডিসনের দোতলার প্রবেশ পথে বাধা দেন হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা। জেডটিইর সিইও আমন্ত্রণপত্র দেখালে সেটি কেড়ে নিয়ে তার সামনেই ছিঁড়ে ফেলেন হুয়াওয়ের একজন কর্মকর্তা। এ সময় টেলিটকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমন্ত্রিত একজন অতিথিকে বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তার সঙ্গে তর্কে জড়ান হুয়াওয়ের দুই কর্মকর্তা। টেলিটকের কর্মকর্তার সঙ্গে হুয়াওয়ের কর্মকর্তার কিছুটা ধাক্কাধাক্কিও হয়। এক পর্যায়ে সেখানে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এলে তাকেও ঢুকতে বাধা দেন হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা। টেলিটকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ওই দিনের ঘটনার ফলে ফাইভজির পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে সরাসরি প্রভাব না পড়লেও যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হুয়াওয়ের বিরোধ ভবিষ্যতে টেলিটকের পূর্ণ ফাইভজির কার্যক্রমে বড় সংকট তৈরি করতে পারে। |