আন্তর্জাতিক ডেস্ক: , আপলোডের সময় : সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ , আজকের সময় : শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

প্রেমে পড়ে বাংলাদেশে আসা কিশোরীকে ফেরাতে পশ্চিমবঙ্গ হাইকোর্টের নির্দেশ

প্রায় সাত মাস হতে চলল ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় ফেরা হল না ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়ার কিশোরীর। বাংলাদেশের পুনর্বাসন কেন্দ্রে এখনও বন্দি সে। দুদেশের কাঁটাতারের ব্যবধানই বাধা হয়ে দাঁড়াল তার ফেরার পথে। আর এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর হলো কলকাতা হাইকোর্ট।

গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, চার দিনের মধ্যে ওই কিশোরীকে দেশে ফেরাতে সব রকম চেষ্টা করতে হবে সরকারকে। সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইনের খবরে এসব কথা জানানো হয়।

গত জুনে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলা সদর থেকে বাংলাদেশে আসে ১৫ বছরের এক কিশোরী। পুলিশের বরাতে আনন্দবাজার জানায়, ওই এলাকারই একটি স্টিলের কারখানায় কাজ করতেন বাংলাদেশের কয়েক জন যুবক। তাঁরা সবাই বেআইনিভাবে ভারতে গিয়েছিলেন। মিলন হোসেন নামের তাঁদেরই এক জনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় ওই কিশোরীর। কয়েক দিন পরে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন মিলন। সেখানে ওই কিশোরীকে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ। এটা জানতে পেরে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ খবর পাঠায় বাংলাদেশের প্রশাসনের কাছে। তারপরই ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে রংপুরের একটি শিশু সদন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়। তবে, সেখানেও কিশোরীর ওপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ অবস্থায় মেয়েকে ফেরাতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার। গত ৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ আদালত কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি কিশোরীর পরিচর্যার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছেও অনুরোধ করেন আদালত।

আনন্দবাজার অনলাইনে এ খবর প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস ওই কিশোরীকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসে। যত্নে রাখা হয় কিশোরীকে। পরিবারের লোকের সঙ্গে সে যাতে নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা হয়। খবর পেয়ে মেয়েটিকে দেখতে যান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। আনন্দবাজার বলছে, ভারতের রাষ্ট্রপতির সামনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেয় নদিয়ার কিশোরীও।

এত কিছুর পরেও কিশোরীকে ফেরাতে না পারার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ আইনজীবীদের। আদালতের পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী কিশোরীকে ফেরাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ধীর পদক্ষেপে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতিও। গত শুক্রবার ফের কড়া নির্দেশ দেন—অবিলম্বে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে কিশোরীকে। আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকা গেদে চেক পোস্ট দিয়ে কিশোরীকে ফেরানোর জন্য বিএসএফ’র মহাপরিদর্শক (আইজি) এবং কৃষ্ণনগর জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন বিচারপতি। একই সঙ্গে ভারতের বাংলাদেশ দূতাবাসকে বিচারপতি অনুরোধ করেন, কিশোরীকে ফেরত পাঠাতে যেন সব রকম সাহায্য করা হয়।

কিশোরীকে ভারতে ফেরাতে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছেন আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত এবং আইনজীবী নীলাদ্রি সাহা। সুস্মিতা সাহা দত্ত বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় প্রচুর মেয়ে পাচার করা হচ্ছে। এ মেয়েটিও তার শিকার হয়েছিল। আমরা অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছি। আদালতের এ নির্দেশের পর মেয়েটি শিগগিরই ফিরে আসবে বলে আশা করছি।’

নীলাদ্রি সাহা বলেন, ‘পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা হয় মেয়েটির। সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। বাড়ি ফেরার জন্য কান্নাকাটি করছে। এখন কাঁটাতার সীমানা পার করাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ!’

অন্যদিকে, ওই কিশোরী বাড়ি ফিরল কি না, তা নজর রাখার জন্য মামলাটির পুনরায় শুনানি রেখেছেন বিচারপতি। আগামী ৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে জানতে চাইবেন আদালত।