এক বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউট এর মোট এগারো শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই আত্মহত্যার শরণাপন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া জ্বর, লিউকেমিয়া, সড়ক দুর্ঘটনা, নৌযান দূর্ঘটনায়ও শিক্ষার্থীদের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বশেষ চলতি মাসের ২২ তারিখ রাজধানীর হাতিরঝিল এক বাসা থেকে সদ্য ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মেহেবুল্লাহ তৌসিফ এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মানসিক হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে দাবী তার স্বজনদের।
এর মাত্র চারদিক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ ডিসেম্বর নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় ইটবাহী ট্রাক চাপায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার মিতুর অকাল মৃত্যু হয়।
এর আগে ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণা গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷ ওই শিক্ষার্থী তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশ পোল মধুমাল্লার ডাঙ্গী গ্রামে আত্মহত্যা করেন। স্বর্ণা পড়াশোনা কেন্দ্রীক ডিপ্রেশনে পড়ে শিক্ষকের প্রতি ক্ষোভ নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবী স্বজনদের।
এ ঘটনার আগের মাসে ২৯ সেপ্টেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অমিতোষ হালদার আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে৷ অমিতোষের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের পাটিকেলবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামে আত্মহত্যা করেন তিনি৷ পুলিশ ও স্বজন কেউ তার আত্মহত্যার কারণ জানতে পারেনি৷
একই মাসের ১৩ তারিখ রাজধানী বাড্ডার একটি বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে পরে আত্মহত্যা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী চন্দন পার্সি। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ঐ শিক্ষার্থী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা পুলিশ কর্মকর্তাদের।
একই মাসের ৯ তারিখে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন লেবুর মৃত্যু হয়েছে। তিনি কয়েকদিন ধরে জ্বর কাশিতে ভোগছিলেন বলে জানা যায়। এরপর হঠাৎ জ্বরের মাত্রা তীব্রভাবে বেড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে ২৮ আগষ্ট, চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার ৪ দিন পর পয়লা সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকবর হোসেন খানের মৃত্যু হয়েছে। আকবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার দেশের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজারে। তার এই মৃত্যু, হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
ঐ ঘটনার মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে ২২ আগষ্ট রাজধানীর উত্তরার একটি কোচিং সেন্টার থেকে মেজবাহ উল আজিম নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আজিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জেনেটিক্স ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ প্রেমঘটিত সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা তার সহপাঠীদের।
এই ঘটনার আগের মাসে ১২ জুলাই জ্বর ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট এর ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত আরা রিমির মৃত্যু হয়।
লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০ মে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিন হালদার মৃত্যুবরণ করেন৷ একই মাসের ৩ তারিখে মাওয়ায় স্পিডবোট দূর্ঘটনায় সাবেক শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় আসার পথে দূর্ঘটনার শিকার হন এই শিক্ষার্থী।
এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ এর পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে দুটি রুম বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী এসে দিক পরামর্শ নিয়ে যাচ্ছে। অফিসিয়ালিভাবে নতুন বছরের দুই অথবা তিন তারিখে আমরা এটা উদ্বোধন করবো৷
মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়ক আহবায়ক অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, সারা বিশ্বের কোথাও আত্মহত্যা প্রবণতা শূণ্য করা সম্ভব নয়৷ তবে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলের মাধ্যমে একটা কমিটমেন্টে নিয়ে আসা যায়। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিলিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে খুব অল্প সময়ে বিশ জনের মত শিক্ষার্থীকে কাউন্সিলিং করা হয়েছে।