নিজস্ব প্রতিবেদক , আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২২ , আজকের সময় : সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

ভাড়া কমানোর ঘোষণার আগেই টিকিট বিক্রি শেষ!

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে কয়েকগুণ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকার পথ খুঁজছে কীভাবে ভাড়া কমানো যায়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তৎপরতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ভাড়া কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি গন্তব্যে ভাড়া কমানো হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, যা ১৬ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। তবে এই ঘোষণার আগে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসের বিমানের সব টিকিট ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে এই সময়ে যারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে চান তারা কোনও সুফল পাবেন না।

৪ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিমান জানায়, বিমানের সুবর্ণজয়ন্তীতে মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীদের জন্য ভাড়া হ্রাস করা হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি থেকে মধ্যপ্রাচ্যের জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম, দুবাই ও আবুধাবি রুটে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে নতুন টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত ভাড়ার কার্যকর হবে।

বিমান জানায়, ঢাকা-জেদ্দা রুটে ইকোনমি ক্লাসের প্রতিটি টিকিটের একমুখী সর্বোচ্চ ভাড়া বর্তমানে ট্যাক্সসহ ৭২,৪৫৫ টাকা থেকে কমিয়ে ট্যাক্সসহ ৬৪,৮২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।  ঢাকা-রিয়াদ/দাম্মাম রুটে ইকোনমি ক্লাসের একমুখী সর্বোচ্চ ভাড়া বর্তমানে ট্যাক্সসহ ৭০,৭৫৮ টাকা থেকে কমিয়ে ট্যাক্সসহ ৬৩,১২৩ টাকা করা হয়েছে।

ঢাকা-দুবাই রুটে ইকোনমি ক্লাসের একমুখী সর্বোচ্চ ভাড়া বর্তমানে ট্যাক্সসহ ৭৫,৫০৮ টাকা থেকে কমিয়ে ট্যাক্সসহ ৬২,৭৮৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।  ঢাকা-আবুধাবি রুটে ইকোনমি ক্লাসের একমুখী সর্বোচ্চ ভাড়া বর্তমানে ট্যাক্সসহ ৬৭,০২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ট্যাক্সসহ ৫৮,৫৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে বুধবার বিমানের প্রধান কার্যালয়ের সেলস সেন্টার, ফার্মগেট, মতিঝিল সেলস সেন্টারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে এই ৫ গন্তব্যের কোনও সিটই খালি নেই। অনেক আগেই এসব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

বিমান প্রতি সপ্তাহে আবুধাবিতে চারটি, দুবাইতে সাতটি, দাম্মামে পাঁচটি, জেদ্দায় সাতটি, রিয়াদে ছয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

বিমান প্রবাসী কর্মীদের জন্য কোনও সুবিধা দিতে পারেনি উল্লেখ করে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের হেড শরিফুল হাসান বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মী বিদেশে গেছে। এ সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার। নভেম্বর মাসে বিদেশে গেছে ১ লাখ ২ হাজার প্রবাসী শ্রমিক। এরমধ্যে ৭৪ শতাংশ গেছেন সৌদি আরবে। এই শ্রমিকদের বাড়তি ভাড়ায় টিকিট কাটতে হয়েছে।

শরিফুল হাসান বলেন,  বিমান যে ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিয়েছে সেটিও যথাসময়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত হলো না। সব টিকিট তো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। বিমানের উচিত ছিল ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়ে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনা। সিভিল এভিয়েশনও অন্য ক্যারিয়ারগুলোর সঙ্গে কথা বলে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে পারে।

জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির টিকিট ডিসেম্বর মাসেই বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানালেন বিমানের সেলস বিভাগের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, মার্চের আগে নতুন ভাড়ায় টিকিট দিতে পারছি না। কারণ, এ সময়ের টিকিট তো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন যেটা হবে, যদি কোনও কারণে কোনও যাত্রী টিকিট ক্যানসেল করেন, তখন সেই টিকিট অন্য যাত্রীকে দিতে পারবো। আবার এখন বিমানের অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে যাত্রীদের এজেন্সির ওপর নির্ভর করতে হয়। এজেন্সিগুলো যদি কম ভাড়ার টিকিট বেশি দামে বিক্রি করে তাহলেও সুফল হবে না। তবে যাত্রীরা আমাদের কাউন্টারে এলে তখন হয়তো কম ভাড়ার টিকিট পাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের মুখপাত্র উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, বিমানের ভাড়া কমানোর বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, জানুয়ারি থেকে এবং আসন খালি থাকা সাপেক্ষে নতুন কমানো ভাড়ায় টিকিট পাওয়া যাবে। এ বিষয়টি ঠিক হতে আরও কিছু দিন সময় লেগে যাবে। পরবর্তী সময়ে যারা টিকিট কিনবেন তারা কম ভাড়াতেই কিনতে পারবেন।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব)  সভাপতি মনছুর আহমেদ কালাম বলেন,  ‘আমরা তো বিমানের ভাড়া কমানোর এই ঘোষণা সংবাদে দেখেছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে— ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব ফ্লাইট ক্লোজ, টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। জিডিএসে (গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম) তো বিমানের কম ভাড়ার কোনও কিছু  দেখতে পাচ্ছি না। এটা মনে হচ্ছে, মুখে মুখে ঘোষণা।’