সাব্বির আলম বাবুঃ
গতবছর চরফ্যাশন উপজেলার ৬টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেয়ার পরেও অসাধু ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় আবারো তা চালু করেছে প্রভাবশালী মহল। শুধুমাত্র ড্রামসিটের চিমনি দাড় করিয়ে হাজার, হাজার টন বনের কাঠ উজাড় করে ফসলি জমির মাটি ও ভাটা সংলগ্ন সরকারী খালের মাটি দিয়ে এ ভাটাগুলোতে ইট পোড়াচ্ছে অবৈধ ব্যবসায়ীরা। নিয়ম নিতীর তোয়াক্কা না করেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীন পরিবেশেই গড়ে উঠেছে প্রায় ১০টি অবৈধ ইটভাটা। এসব অবৈধ ভাটার নেই কোনো পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন বা ছাড়পত্র। প্রশাসনের বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে ইট পোড়ানো হচ্ছে এসব ভাটাগুলোতে। চরফ্যাশন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দক্ষিণ আইচার মানিকা, হাজারীগঞ্জ, চরকলমী, আবদুল্লাহপুর, রসুলপুর, নীলকোমল ও ঘোষেরহাটসহ মাদ্রাজ ইউনিয়নে রয়েছে এ ভাটাগুলো। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভাটাগুলোতে রয়েছে গাছ কাটার সো-মিল। এ সো-মিলে হাজার, হাজার মন লাকড়ি ও গাছের গুড়ি কেটে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চলছে। দিনরাত কাঁচা ইট তৈরী করে সাড়িসাড়ি ইট সাজিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছেন, ফসলী জমিতে অবৈধভাবে ড্রামসিটের তৈরী চিমনি ব্যবহার করে লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। যার ফলে এলাকার গর্ভবতি নারী ও শিশুসহ আবাল বৃদ্ধরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধ ভাটার কালো ধোয়ার কারণে ভাটা সংলগ্ন জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেও স্থানীয় কৃষকরা জানান। কৃষক সালাম হাওলাদার বলেন, অবৈধ ভাটাগুলোর বিষয়ে প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। এর আগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বিক্স গুড়িয়ে দিলেও পুনরায় ওই ব্রিক্সগুলো অসাধু কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে চালু করেছে দাবি করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কৃষক লতিফ মিয়া বলেন অবৈধ ইট ভাটার কারণে আমার ৬-একর জমিতে কোনো ফসল ফলাতে পারিনা। জমিগুলো কারো কাছে লগ্নী করতেও পারিনা। চাষিরা এই জমি নিতে চাচ্ছেনা। স্থানীয় একাধীক এলাকাবাসী বলেন, কলমী ৯নং ওয়ার্ডের চর-মঙ্গল মৌজায় প্রায় ৫একর সরকারি জমির মধ্যে মানুষের ভোগ দখলীয় ফসলী জমি নষ্ট করে আবাসীক এলাকায় ড্রামসিট চিমনি দ্বারা লাকড়ি পুড়িয়ে ইট তৈরী করা হচ্ছে। হাজার হেক্টর জমির ফসলী ক্ষেত বনজ ও ফলদ বাগানসহ শতাধিকের বেশি বসত বাড়ি রয়েছে ভাটাগুলোর পাশে। এ ভাটাগুলো গতবছর প্রশাসন ভেঙে দিলেও তা পুনরায় তৈরী করেছে প্রভাবশালী মহলগুলো।
দক্ষিণ আইচা মানিকা ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক বাসিন্দা বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত অনেক ইট ভাটার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমোদন ও ছাড়পত্র না থাকলেও অদৃশ্য অনুমোদন ও মাসিক চাঁদার ছাড়পত্রেই চলছে ভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভেঙে দেয়ার পরেও পুনরায় এ অবৈধ ইট ভাটা নির্মাণ করে ইট পোড়ানো হলেও উপজেলা প্রশাসন ও ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সচেতন মহল বলেন, এর আগেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অবৈধ ইট ভাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরেও অবৈধ ভাটাগুলোর কার্যক্রম নজরে আসছেনা সংশ্লীষ্ট দপ্তরগুলোর। ভাটা গুলোতে নদী ও খাল থেকে ড্রেজিং দিয়ে মাটি এনে ইট তৈরী করা হচ্ছে বলেও ভাটা সংলগ্ন বাসিন্দারা দাবি করেন। তাঁরা বলেন, রাতভর ড্রেজিং ও বেকু দিয়ে ফসলী জমির পাশে মাটি কেটে গভীর খনন করে ইট তৈরীর মাটি সংগ্রহ করছে ভাটাগুলো। ভেঙে ফেলা ভাটাগুলো পুনরায় নির্মাণের বিষয়ে কয়েকটি ভাটার মালিক জানান, তাঁরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য দরখাস্ত জমা দিয়েছেন। এর পরেও প্রশাসনের অভিযানে তাঁ দর ভাটাগুলো ভেঙে ফেলা হয়। যার ফলে তাঁরা লাখ, লাখ টাকার লোকসানে পড়েন। ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ বান্ধব ঝিকঝাক ভাটা নির্মাণে প্রচুর ইটের প্রয়োজন। আর তাই কিছু ইট পুড়িয়ে পরিবেশ বান্ধব চিমনি তৈরী করতে হবে বলে জানান তাঁরা।
ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, ড্রামসিট চিমনি ব্যবহার করা দন্ডনিয় অপরাধ। আমরা সম্প্রতি শানিমা-২,মাইশা-২ ও ফরাজী ব্রিকস অভিযান চালিয়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। এবং ভেঙে ফেলা যেসব ব্রিকস গুলো পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। তবে ঠিক কতটি অবৈধ ভাটা রয়েছে জানতে চাইলে তার সদুত্তর দেননি এ কর্মকর্তা।