রিপোর্টারের নাম , আপলোডের সময় : শনিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২২ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

২১৩ ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট অস্বাভাবিক : সিইসি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার ঘটনা অস্বাভাবিক মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘শতভাগ ভোট পড়া অবশ্যই অস্বাভাবিক ঘটনা।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ইসি বিটের রিপোর্টারেদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) মুখোমুখি হয়ে সিইসি এ মন্তব্য করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস পর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এক হাজার ২০৫টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৬ থেকে ৯৯ শতাংশ। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ছয় হাজার ৪৮৪টি কেন্দ্রে। আর ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে, এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫ হাজার ৭১৯টি।

এ ফলাফলের প্রসঙ্গ টেনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি (সিইসি) বলছেন, ভোটের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে বা আদালতে কেউ অভিযোগ করেনি। কিন্তু, শতভাগ ভোটের এই হার যখন আপনারা জানতে পারলেন তখন নিজেদের স্বার্থে হলেও তদন্ত করে দেখা উচিত ছিল না, এমন প্রশ্নে কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘শতভাগ ভোট অবশ্যই অস্বাভাবিক। কিন্তু, আমার সীমাবদ্ধতা হলো, গেজেট প্রকাশ হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের হাতে কিছুই করার থাকে না। এটা আইন। আর আইন কিন্তু আমি তৈরি করতে পারব না। আমি ওই সময়ই (সংসদ নির্বাচন) বলেছিলাম, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আদালতে যেতে হয়। আমাদের তদন্ত করার সুযোগ তো নেই। গেজেট হয়ে যাওয়ার পর আদালতের নির্দেশ ছাড়া আমার নতুন করে কিছু বলার থাকে না।’

সিইসি বলেন, ‘আমাদের কাছে তো সাথে সাথে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল আসে না। রিটার্নিং অফিসারের প্রত্যেকটি কেন্দ্রের ভোট একসঙ্গে করতে সময় লাগে। সময় লাগার পর যখন আমাদের কাছে আসছে, তখন আমরা প্রকাশ করেছি। তখন আমাদের আর কিছুই করার ছিল না।’

রাতের ভোট সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নে কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন হোক আর যেকোনো নির্বাচন হোক, নির্বাচনের সময় বা দিনে যদি কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, এ জাতীয় তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আসতে হয়। আমাদের পেতে হয়। এ তথ্য-উপাত্তগুলো আমরা গণমাধ্যম ও রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে পেয়ে থাকি। আমরা টিভির সামনে সারা দিন বসে ছিলাম। আমাদের নির্বাচনি কন্ট্রোলরুম ছিল। সেখান থেকে আমরা তথ্য-উপাত্ত নিয়েছি। সকাল থেকে আমরা দেখেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। নির্বাচনে কোনো অসুবিধা হয়নি। যেখানে যেখানে অসুবিধা হয়েছে, আমরা খবর পেয়েছি, বন্ধ করে দিয়েছি।

সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনি আইন আছে। আইনের মধ্যে যদি কথা বলতে হয়, একটি অভিযোগ আসার পর আমরা তদন্ত করি। টেলিফোনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জিজ্ঞেস করি, এখানে সমস্যা হয়েছে কি না। উনি সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের তথ্য দিয়ে দেন। পরামর্শ দেন। তখন আমরা বন্ধ করে দিই। গণমাধ্যম ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া ছাড়াও যদি আমরা নিশ্চিত হই নির্বাচনি অনিয়মের ব্যাপারে, তাহলেও আমরা বন্ধ করে দিই। সংসদ নির্বাচনের দিন রাতে ভোট হওয়ার সেই অভিযোগের নিশ্চয়তা আমরা কোথাও থেকে পাইনি।’

‘তারপরের ঘটনা, নির্বাচনের ফলাফল প্রথম যখন রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাদের কাছে জমা দেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে ৩৯ ধারায় বলা আছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি বলে এই প্রার্থী পাস করেছেন, তাহলে সেটা গেজেটে প্রকাশ করতে হবে’, যোগ করেন সিইসি।

কে এম নূরুল হুদা আরও বলেন, ‘এর পরের কাজ হলো প্রার্থীদের। প্রার্থী যদি সংক্ষুব্ধ হয়, তাহলে গেজেট হওয়ার পরও ৩০ দিনের মধ্যে তিনি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। এর বাইরে নির্বাচন কমিশনের হাতে আর কিছুই করার থাকে না। এরপর আদালত ও নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দিই। তারপর অভিযোগের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কী করা হবে। কিন্তু, একজন ব্যক্তিও সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে যাননি। তখন তো আমাদের কিছু করার থাকে না। যেহেতু নির্বাচনে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নেই, আদালতে যাননি, সেহেতু আমরা ধরে নিই নির্বাচনে কোনো অভিযোগ নেই।’

তাহলে রাতের ভোটের প্রসঙ্গটা এলো কেন, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘সেটা তো অভিযোগ আকারে থেকে গেছে। অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তো আমি কনক্লুসিভ কিছু বলতে বা করতে পারি না। রাতে ভোটের অভিযোগ উঠেছে, যা আপনি (সাংবাদিক) দেখেননি, আমিও দেখিনি যে রাতে ভোট হয়েছে। তার পরও আদালতে অভিযোগ করা হলে তদন্তের মাধ্যমে হয়তো সেটা বের হয়ে আসত। আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যেত। সারা দেশের নির্বাচনও বন্ধ হয়ে যেতে পারত। আমি তো বলতে পারব না, এই সুযোগটা তারা (সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি) কেন নেননি। তারা সুযোগ হাতছাড়া করেছেন।’

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার সব সময় নির্বাচনের সমালোচনা করে থাকেন। তাঁর বিভিন্ন সময়ের মন্তব্যের কথা স্মরণ করানো হলে কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘তিনি একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। উনি আসলেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি কখনও আইসিইউতে, কখনও সিসিইউতে থাকেন। সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট (চিকিৎসা) করেছেন, ভারতে ট্রিটমেন্ট করেছেন। বছরে প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকার ট্রিটমেন্ট করেন, এটা নির্বাচন কমিশন বহন করে।’

মাহবুব তালুকদার নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও বিনা ভোটের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হলে ইসির কী করার আছে? এটা তো প্রার্থীদের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বিনা ভোটে নির্বাচিত কেন হলো সেটা দেখার এখতিয়ার ইসির নেই।’

করোনা সংক্রমণের কারণে নানা কাজে ইসিকে পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিইসি নূরুল হুদা। তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের প্রায় ২০ জন লোক করোনায় আক্রান্ত। আজ কমিশনের সচিব আসতে পারেননি, অসুস্থ। তাকে করোনা টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। কমিশনার মাহবুব তালুকদার করোনায় আক্রান্ত। এনআইডির ডিজি করোনায় আক্রান্ত। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নূরুজ্জামান তালুকদার করোনায় আক্রান্ত। এতে আমাদের কাজে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।’