নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, কমিটির সব সদস্যদের নিয়ে শিগগিরই বৈঠকে বসব। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুসারে দায়িত্ব পালন করব।
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সার্চ কমিটির প্রধান হওয়ার পর গণমাধ্যমের কাছে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় সার্চ কমিটির হিসেবে প্রধান নিয়োগ দেওয়ায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আমার ও আমার সঙ্গীদের ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন সংবিধান অনুযায়ী সে দায়িত্ব পালন করব। এখন পর্যন্ত কারো সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি। সাচিবিক দায়িত্বে থাকা কেবিনেট সেক্রেটারিসহ আশা করি কালকের মধ্যে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করব, কথা বলব কীভাবে কাজ করতে হবে। তাদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
তিনি বলেন, ‘আমি গত সার্চ কমিটিতে ছিলাম। সেখানে কনভেনার ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আমি তখন সদস্য ছিলাম। তখন আমরা যেভাবে গেছি সেভাবে যেতে পারব। তবে আমার সহকর্মীরা কী বলেন সেটা তার ওপর নির্ভর করবে। তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নাম পাঠিয়েছিলেন। দেখা যাক কী করা যায়।’
বিচারপতি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জাতির পক্ষ থেকে আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন। আস্থাটা আমরাও রাখতে চাই। আস্থার সম্মান দিতে চাই। আশা করি নিরপেক্ষভাবে সবাই মিলে নিরপেক্ষ মানুষদের সেখানে যাতে আনা যায় সে চেষ্টা করব। আমরা ১০টা নাম দেব। রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে সিলেক্ট করবেন। ঠিক করবেন রাষ্ট্রপতি। আশা করি ভালোই হবে।’
এর আগে, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। শনিবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশন চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে।
গত ২৭ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পাসের প্রস্তাব করেন। এরপর তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। ২৯ জানুয়ারি বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ৩০ জানুয়ারি তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। নিয়ম অনুযায়ী তার আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। সেই কমিশনের অধীনেই হবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
সংসদে উত্থাপিত হওয়ার পর বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি দুটি সংশোধনী এনে পাসের সুপারিশ করলে ধারা দুটি সংশোধন করে বিলটি পাস হয়।
প্রথমে বিলটির নাম ছিল ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’। সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে নাম হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’। রাষ্ট্রপতি সই করার পর নাম হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’।
এর আগে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপে অংশ নিয়ে দলগুলো তাদের মতামত ও প্রস্তাব উপস্থাপন করে। তবে বিএনপি সংলাপে অংশ নেয়নি।