আন্তর্জাতিক ডেস্ক: , আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২ , আজকের সময় : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

ইউক্রেনকে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করলে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনকে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করতে ন্যাটোর কাছে আহ্বান জানিয়ে আসছিল দেশটি। কিন্তু ন্যাটো তা না করায় ব্যাপক চটেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ইউক্রেনকে বরাবরই সমর্থন দিয়ে আসলেও কেন এ প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করছে ন্যাটো, তা বিশ্লেষণ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানো এড়াতেই যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটটির এই সিদ্ধান্ত।

ন্যাটোতে যোগ দিতে ইউক্রেনের উদগ্রীব হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সরাসরি সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। আর এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বড় ধরনের যুদ্ধ ফেরালেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রুশ আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ন্যাটোকে তার পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ন্যাটোর উদ্দেশে বলেছিলেন, ইউক্রেনকে যেন নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করে সংস্থাটি।

কেন ন্যাটো নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করছে না?

ইউক্রেন ও রাশিয়া কোনো দেশই ন্যাটোর সদস্য নয়। সেক্ষেত্রে ন্যাটোর নীতিমালা অনুযায়ী এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য নয় পশ্চিমা এই সামরিক জোট। এদিকে রাশিয়া বরাবরই ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে আসছে। সে ক্ষেত্রে ন্যাটোর এমন পদক্ষেপ যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর ন্যাটো চাইছে না রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে।

ন্যাটো শুরু থেকেই ইউক্রেনকে সমর্থন ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে। রাশিয়ার আক্রমণকেও তারা একটি সার্বভৌম দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে দেখে। তবে জোটটি এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না, যাতে রাশিয়ার মতো পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যায়। কারণ এর পরিণতি হতে পারে পরমাণু যুদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির সর্বোচ্চ পদাধিকারী সিনেটর মার্কো রুবিও সিএনএনের এক টকশোতে বলেন, ‘নো-ফ্লাই জোন মানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়া।’

রুবিও বলেন, ‘সবাইকে বুঝতে হবে নো-ফ্লাই জোন মানে কী। এটি এমন কোনো নিয়ম নয় যে আপনি চালু করবেন আর সবাই তা মেনে চলবে। এটি রুশ ফেডারেশনের বিমানকে গুলি করে নামানোর ইচ্ছা পোষণ।’

যা বলছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট

এর আগে ইউক্রেনের আকাশে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা না করায় ন্যাটোর প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘ন্যাটোর এই সিদ্ধান্তের কারণে আকাশপথে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা আরও বাড়বে।’

ন্যাটোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা না করে ইউক্রেনের শহর ও গ্রামে বোমা হামলার সবুজ সংকেত দিয়েছে ন্যাটো। আজ থেকে ইউক্রেনে যারা মারা যাবে তারা আপনার (ন্যাটো) কারণে, আপনার দুর্বলতার কারণে, আপনার ঐক্যের অভাবের কারণে মারা যাবে।’

নো-ফ্লাই জোন কী?

কোনো যুদ্ধ চলার সময় যখন কোনো নির্দিষ্ট আকাশসীমায় নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়, তার মানে হলো সেখানে সব ধরনের বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে কোনো বিমান হামলা চালাতে বা নজরদারি করতে পারে না। কিন্তু এ ধরনের এলাকা ঘোষণা করা হলে সেটি সামরিকভাবেই কার্যকর করা হয়ে থাকে।

ইউক্রেনের আকাশসীমায় যদি ন্যাটো নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করে, তার মানে হলো, সেখানকার আকাশে রাশিয়ার কোনো বিমান দেখা গেলে গুলি করে ভূপাতিত করতে হবে। এরপর ফলে রাশিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।

নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করলেই কী রাশিয়া তা মেনে চলবে?

নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করলেই রাশিয়া তা মেনে চলবে, বিষয়টি এমন নয়। ফলে রুশ যুদ্ধবিমানগুলোকে নো-ফ্লাই জোন মানতে বাধ্য করার জন্য ন্যাটোকে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মধ্যে রুশ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করার বিষয়টিও থাকবে। ফলে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত বেধে যেতে পারে।

এর আগে ন্যাটো বসনিয়া ও লিবিয়ায় নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করেছিল।