সায়েদা রিমি কবিতা: , আপলোডের সময় : শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০২২ , আজকের সময় : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

স্মৃতি ফেলে যাওয়া বই মেলা: সাইয়েদা রিমি কবিতা

সাইয়েদা রিমি কবিতা:
তপ্ত গরমে অতৃপ্ততার মায়াতে ফুরোলো বই মেলার আয়োজন। ১৫ ফেব্রুয়ারিতে সকল সমালোচনা আর করোনা কে অতিক্রম করে মহা আনন্দে ব্যস্ততম রাজধানীর প্রানকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের পাশে ঐতিহ্য মন্ডিত বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশালতা ঘিরে এবার আরো বিশাল পরিসরে আয়োজিত হয়েছে বই মেলা।
করোনা কালীন ক্রান্তিলগ্নকে ডিঙিয়ে সাধারণ মানুষ কে বই এর প্রতি আকর্ষিত করার চেষ্টার কোন ত্রুটির ছিলো না। প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলো ছিলেন অত্যন্ত তৎপর এবং সৌহার্দপূর্ণ। ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট এর পাশ থেকে একেবারে তিন নেতার মাজার পর্যন্ত কয়েকটি বিশাল তোরণে সুজজ্জিত করে করা হয়েছিলো কয়েকটি যাতায়াতের পথ। অপরদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনেও ছিলো দুটো রাস্তা। এছাড়াও ছিলো পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, সন্ধানী সহ বেশ কিছু সংগঠন এর রক্তদান কার্য্যক্রম সহ আরও বেশ কিছু সংগঠন এর মানবিক পরিসেবা। বরাবরের মতো ই আড্ডা প্রিয় লিটল ম্যাগ চত্বরে ছিলো বর্ণীল সান্ধ্য আড্ডা। ঘাসের গালিচাতে গিটারে প্রায় নিত্য দিনই বসেছে হারানো বন্ধুদের মিলন মেলার চমৎকার আয়োজন।অন্য প্রকাশ, পাঠক সমাবেশ, বিদ্যা প্রকাশন কিংবা প্রতিভা আর জলধি সহ অন্যান্য সকল সুনাম ধন্য প্রকাশনাতে ছিলো দেশ বরেন্য কবি -লেখক দের পদচারণাতে মুখরিত। দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ছুটে এসেছেন প্রিয় লেখক – কবি কে এক নজর দেখতে কিংবা প্রিয় লেখকের হাতে বই নেবার জন্য। জনপ্রিয় স্যার আনিসুল হক ছিলেন পুরো বই মেলা জুড়ে একেবারে ই হাস্যোজ্জ্বল নিবেদিত। তাঁর আন্তরিকতা ছুঁয়ে গেছে সাধারণ মানুষের মনে। অত্যন্ত প্রিয় নাহিদা আশরাফির সম্পাদিত রূদ্ধ দিনের গল্পের একটি ও ভাগে পাইনি তাই মন একটু খারাপ ছিলো। কিন্তু দিনটি ছিলো অসাধারণ স্মৃতিময়। এতো চমৎকার মানুষগুলো কে এক মাঠে পাওয়া খুবই কঠিন। দেখা মিলেছিলো অসাধারণ কবি ব্যক্তিত্ব মুস্তফা ভাই এর। সেই আয়োজনে আরো অনেক প্রিয় কবি -সাহিত্যিকদের সাথেও সুযোগ মিলে গেছে। আরেকজন মঈন মুরসালিন, সাদা-মাটা একজন নিরহংকারী কবি মনা মানুষ। এসব মানুষেরা আছে বলেই এখনো আমরা লেখার সাহস পাই। ব্যবসার চেয়ে বেশি মুনাফা খুঁজে এঁরা পাঠক প্রিয়তায়। এবারের বই মেলা তে সব চেয়ে বেশি মিস করেছি প্রিয় লেখিকা শেলী জামান আর রাজিয়া নাজমী আপু কে। কিছু চমৎকার স্মৃতিকথা ছিলো শেলী আপুর সাথে গত বই মেলার। তোমার অনুপ্রেরণাতেই এবার শাড়ি পরে গিয়েছিলাম। আরো দেখা মিলেছে গুলে আপা, রাহনামা আপা, শুভ্রা আর লাকি সহ অনেক সুন্দর মনের মানুষ গুলোর। ‘নোঙর’ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে আমার হৃদয়ে। মেলার লিটল ম্যাগ চত্বরে ছিলো আমাদের নোঙর এ-র অবস্থান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুলো ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে প্রানবন্ত ছিলো পুরো নোঙর অঙ্গন। বন্ধু সুমন নদী কে ভালোবেসে নোঙর প্রতিষ্ঠা করেছে। আমি বরাবরই প্রকৃতি – নদী প্রেমিক। সবুজ বনানী আর নদীর উচ্ছ্বলতা খুব টানে আমাকে।
আমাদের দেশের প্রাণ হলো নদী। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন বিনির্মাণে যেন নদীর প্রাণ না হারায় এসব নিয়েই আমরা কাজ করছি। আমি নোঙর এ-র একজন সদস্য হওয়াতে গর্ববোধ করি। আমরা উন্নয়নের গতিতে বাঁধা নয় বরং সহায়ক। কিন্তু এজন্য নদী হত্যা করে নয়। নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণ সহ নদী তথ্য নিয়ে নানা বই এর পশরা সাজিয়েছিলো নোঙর। প্রচন্ড ঝড়েও ভেঙে যায়নি এবারের বই মেলা। ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনে হয়তো প্রতিবন্ধকতা ছিলো। তবুও এতো কঠিন সময়ের আবর্তনে পাঠক সহ সাধারণ মানুষ যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে ছুটে গিয়েছে বার বার এই বই মেলাতে। পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধু মহলের আড্ডায় বিকেল থেকে রাত অবধি চলেছে নানা রকম আয়োজন। সাধারণ মানুষ এবং প্রকাশকের ব্যবসায়িক দিক বিবেচনা করে মেলার সময় সীমা বর্ধিত করা হয় ১৭ মার্চ পর্যন্ত। মেলার চত্বর জুড়ে ফুল – চুড়ির বাহারি রঙের দোকানগুলো মেলাকে করেছিলো আরো শোভনীয় -মোহনীয়। অসহনীয় তপ্ত গরম কে উপেক্ষা করেও মানুষ ছুটে গিয়েছে মেলা প্রাঙ্গনে বার বার নানা অযুহাতে। প্রতিদিন উন্মোচিত হয়েছে বহু বইয়ের। ডিজিটাল যুগের বাস্তব ডিভাইস টেকনোলজির আড়ালে কতটা অসহায় মানুষের অন্তর আত্মা। শিশু দের জন্য ছিলো তাই বিশেষ শিশু প্রহর আর শিশিম পুরের চমৎকার উদ্যোগ। জাত – ধর্ম – গোত্র কে মাড়িয়ে শুধুই মানুষের জন্য মানুষ – এ-ই যেন ছিলো মেলার প্রতিপাদ্য।২০২০ এ বই বিক্রি ছিলো ৮২ কোটি টাকা আর ২০২২ এ হয়েছে ৫২ কোটি টাকা – (তথ্য সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন)।তবুও এবার করোনা পরবর্তী সময়ে পুরোটা লাভের আগ্রহের চেয়ে পাঠক আকর্ষন করাকে ই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলেই প্রকাশকদের অভিমত। ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে সকল পাঠককে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিদায় জানালো এবারের বই মেলা।
শেষ হলো সবার প্রানের বই মেলার আলোচিত আয়োজনের অধ্যায়। আগামী বছরের অপেক্ষায় রাতের পূর্ণ তিথির সাথে মিলিয়ে গেলো এবারের একুশের বই মেলা। উপহার দিয়ে গেলো অনেক সুন্দর স্মৃতি আর পবিত্র শবে- বরাত এবং দোল যাত্রা। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সম্প্রীতির বাংলাদেশ এ-ই হোক আমাদের শিক্ষা – সংস্কৃতি। আগামী প্রজন্মের কাছে সুন্দর স্বচ্ছ আলোর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হোক।