আন্তর্জাতিক ডেস্ক: , আপলোডের সময় : শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০২২ , আজকের সময় : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

কৃষ্ণ সাগর থেকে লাভিভ বিমানবন্দরে মিসাইল হামলা রাশিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে লাভিভ শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেইনের বিমান বাহিনী বলছে, কৃষ্ণ সাগর থেকে রাশিয়া ছয়টি ক্রুজ মিসাইল ছুঁড়েছিল।সূত্র : বিবিসি

তারা দাবি করছে, এর মধ্যে দুটি মিসাইল তারা বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। এর মানে হলো চারটি মিসাইল লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম হয়।  লাভিভের মেয়র আন্দ্রেই সাদোভি বিবিসিকে জানিয়েছেন, রুশ মিসাইল লাভিভ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স সেন্টারের ওপর আঘাত হানে। এখানে বিমানের মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়।

মিসাইল হামলায় এ ভবনটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর যে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত দেখা যাচ্ছে, সেখানে বিশাল বিস্ফোরণ হয়েছে এবং সেখান থেকে কালো ধোঁয়া উড়ছে। এই হামলার আগে লাভিভ থেকে বিবিসি সংবাদদাতারা জানিয়েছিলেন যে শহরে বহুক্ষণ ধরে বিমান হামলার সাইরেন বাজছিল, এবং এর পরপরই বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণে শব্দ শোনা যায়। লাভিভ বিমানবন্দরটি ইউক্রেনের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পোল্যান্ডের সীমান্ত থেকে এটি ৭০ কিলোমিটার দূরে।

এত দিন ইউক্রেনে যেসব রুশ হামলা হয়েছে তা ছিল মূলত সে দেশের দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে। লাভিভকে লাখ লাখ শরণার্থীর জন্য নিরাপদ আশ্রয় বলে বিবেচনা করা হয়। মারিউপোলের ‘কেন্দ্রে রুশ বাহিনী’ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী মারিউপোল রুশ অবরোধের মুখে পর্যুদস্ত।

রুশ বাহিনী দাবি করছে, তারা একেবারে শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। রুশ প্রতিরক্ষা বিভাগকে উদ্ধৃত করে রিয়া নভোস্টি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, রুশ বাহিনীর সমর্থন নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মারিউপাোল শহরে ইউক্রেনিয়ান বাহিনীর চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

মার্কিন একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টাডি অফ ওয়ার জানিয়েছে, রুশ বাহিনীর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে আগামী কিছু দিনের মধ্যে শহরটির পতন ঘটতে পারে। রুশ বাহিনীর বিশাল এক কলাম ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একেবারে কাছে পৌঁছে গেলেও তাদের অগ্রযাত্রা দৃশ্যত ঝিমিয়ে পড়েছে। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ ধরে শহরটির ওপর অবিরাম রুশ গোলাবর্ষণ চলেছে। কিয়েভের কর্তৃপক্ষ বলছে, এই তিন সপ্তাহে ওই শহরের ২২২ জন মারা গেছে। এর মধ্যে বেসামরিক মানুষের সংখ্যা ৬০, চারটি শিশুও রয়েছে।

অর্থাৎ তারা স্বীকার করে নিয়েছে যে ঐ শহরে ইউক্রেনিয়ান সামরিক বাহিনীর দেড়শরও বেশি সৈন্য রুশদের হাতে মারা পড়েছে। কিয়েভের হামলার ওপর যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বড় বড় বাড়ি গোলার আঘাতে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এসব বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছে সামনের রাস্তার ওপর। সেখানে গাড়িগুলো উল্টে পড়ে আছে। চারিদিকে আগুন। দমকল বাহিনী আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের ওপরও রুশ গোলাবর্ষণ চলছে। সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভবন এবং দুটি ফ্ল্যাটবাড়ির ওপর বোমা পড়েছে।

এতে একজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে। খারকিভের অবস্থান সে দেশের দক্ষিণে। সেখান থেকে আরো দক্ষিণের শহর ক্রামাটরস্ক শহরে মিসাইল হামলায় দুজন নিহত এবং ছয় জন আহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সংঘাত অবসানে কূটনৈতিক চেষ্টা ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার আরও পরের দিকে মি. বাইডেন এবং মি. শি’র মধ্যে টেলিফোন সংলাপ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিবিসি সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, এই কথাবার্তার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনা নেতাকে বলবেন চীন যেন রাশিয়াকে কোনো অস্ত্র না জোগান দেয়। পাশাপাশি রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশের যে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, তা যেন চীন কোনভাবে ভঙ্গ না করে।

ইউক্রেনের ওপর হামলার জন্য চীন যে রাশিয়ার কোনো নিন্দা জানায়নি, মার্কিন কর্মকর্তারা সেজন্য বেইজিং সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। এর বাইরে বেশ ক’টি দেশ এই সংঘাত অবসানের চেষ্টা করেছে। কিন্তু ফলাফল খুব একটা দেখা যায়নি।

তবে বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সাথে টেলিফোনে আলাপের সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেইনের সাথে সমঝোতার ব্যাপারে নিজের কিছু শর্ত তুলে ধরেছেন। এরদোগানের প্রধান উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিন এই ফোনালাপ শুনেছেন এবং সেখানে কী কী আলোচনা হয়েছে সেটি তিনি বিবিসির ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স এডিটর জন সিম্পসনকে বলেছেন।

শর্তগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কালিনের মতে, প্রথম চারটি শর্ত মেনে নেয়া ইউক্রেনের জন্য খুব কঠিন কিছু হবে না। এসবের মধ্যে প্রধান শর্তটি হচ্ছে, ইউক্রেনকে নিজেদের নিরপেক্ষ ভূমিকা মেনে নিতে হবে এবং তারা কখনোই নেটোতে যোগ দেয়ার চেষ্টা করবে না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এরই মধ্যে এটি মেনে নেয়ার কথাও বলেছেন।

প্রথম ভাগের অন্যান্য শর্তগুলো হচ্ছে : ইউক্রেনকে একটি নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যার মাধ্যমে প্রমাণ হবে যে তারা রাশিয়ার জন্য কোন হুমকি নয়। ইউক্রেনে রুশ ভাষাকে সুরক্ষা দিতে হবে, এবং দেশটিকে রাশিয়ার ভাষায় ‘ডি-নাৎসিফিকেশন’ অর্থাৎ নাৎসিমুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় ভাগের শর্তগুলো তুলনামূলক জটিল। কালিন জানান, টেলিফোন আলাপে পুতিন বলেছেন কোন সমঝোতায় পৌঁছানোর আগে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথে মুখোমুখি বসতে চান। জেলেনস্কিও এরমধ্যে জানিয়েছেন যে তিনিও রুশ প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

তবে সেই আলোচনার শর্তগুলো নিয়ে খুব পরিষ্কার করে কিছু বলতে চাননি কালিন। তিনি শুধু বলেছেন যে এগুলো মূলত পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল এবং ক্রিমিয়া সংক্রান্ত।

সূত্র : বিবিসি