সাজিদুর রহমান সজিব (বিশেষ প্রতিনিধি,মিরপুর): , আপলোডের সময় : শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২ , আজকের সময় : মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

বাঙলা কলেজে মঞ্চস্থ ‘এ বেদনার ব্যাকরণ নেই’ নাটক

সাজিদুর রহমান সজিব (বিশেষ প্রতিনিধি,মিরপুর):

সরকারি বাঙলা কলেজে মঞ্চায়িত হয়েছে নাটক ‘এ বেদনার ব্যাকরণ নেই’। বাঙলা কলেজ অধ্যক্ষ ড. ফেরদৌসী খানের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘বাঙলা কলেজ বধ্যভূমি’র ওপর ভিত্তি করে রচিত নাটকটি পরিবেশনা করে ‘বাঙলা কলেজ যুব থিয়েটার’।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাতে বাঙলা কলেজের রোভার পল্লীতে নাটকটি মঞ্চায়িত হয়। এ সময় দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, কলেজ অধ্যক্ষ ড. ফেরদৌসী খান, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক মিটুল চৌধুরী ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দসহ কলেজটির অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা।

হাবিব তাড়াশীর নাট্যায়ন ও নির্দেশনায় মঞ্চায়িত নাটকের শুরুতেই দেখা যায়, ১৯৭১ সালের কোন এক ভোরে রাস্তার একপাশ দিয়ে মুসলমানরা কাসিদা/কিয়াসের কাফেলা, অপর পাশ দিয়ে সনাতন ধর্মের লোকেরা প্রভাতী কীর্তন নিয়ে বের হয়েছেন। উভয় দলের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। উভয়পক্ষ কুশল বিনিময় ও ফকির বাড়ির উঠান বৈঠক নিয়ে আলোচনা করেন।

উঠান বৈঠকে ফকির সাহেব দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং উপস্থিত সবাইকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন। ফকির সাহেবের নির্দেশে সবাই রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে অংশগ্রহণ করেন।

অপর একটি দৃশ্যে, পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের বাসভবনে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাদের বিশেষ মিটিং দেখা যায়।

২৫ মার্চ, ১৯৭১। অপারেশন সার্চলাইট পৃথিবীর বুকে নৃশংসতম এক গণহত্যার নাম। বাঙালি যখন তার অধিকারকে আঁকড়ে ধরেছিল, বর্বর পাকিস্তানিরা তখনই বুঝতে পেরেছিল কোনকিছু দিয়েই এই জাতিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তাই একাত্তরের সেই রাতে শুরু করে জঘন্যতম গণহত্যা। যা জন্ম দেয় মুক্তিযুদ্ধের। শুরু হয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ চলাকালে বাঙলা কলেজ বধ্যভূমিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নাটকের কাহিনী আবর্তিত হতে থাকে।

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। পরাজয় অনিবার্য জেনে পাকসেনারা ও রাজাকাররা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেলে, ভোর রাতে এলাকাবাসী ও মুক্তিকামী মানুষেরা তাদের স্বজনদের খোঁজে ক্যাম্পে আসে। আমগাছ, জোড়া গাবগাছ, পুকুর, গণকবর, কূপ ও সামনের ঢালু জায়গায় অসংখ্য মানুষের মাথার খুলি, হাড় ও নারীদের বোরখা, জুতা, গামছা, লুঙ্গি, কাটা হাত, ছোপ ছোপ কালো রক্ত, মাথার চুল দেখতে পেয়ে স্বজন হারানোর বেদনায় আপ্লুত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ। অপর পাশে, একটু দূরে আনোয়ারা বেগম দাঁড়ানো। যেন একটি রুদ্র পাথর। এ বেদনার ব্যাকরণ নেই…।

নাটকটির রচয়িতা সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান বলেন, ‘‘সর্বত্র আলোচিত, স্বীকৃত এক ঐতিহাসিক স্থান ‘বাঙলা কলেজ বধ্যভূমি’। ইতিহাসের বর্বরতম হিংস্রতা, পাশবিকতা ও নির্মমতার স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে এই বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা যে পৈশাচিক হনন উৎসব বাঙলা কলেজ প্রাঙ্গণে চালিয়েছে, তা চিন্তাতীত ও বর্ণনার অযোগ্য। তাদের নীচ ও কদর্য, পশুবৎ ও পাষণ্ডী আচরণ ও অত্যাচার সর্ব মহলে ঘৃণিত সত্য হয়ে অদ্যাবধি বর্তমান। সেই পাশবিক নিষ্ঠুরতার ও দুঃসহ বেদনার স্মৃতি ‘এ বেদনার ব্যাকরণ নেই’।”

নাটকটির পরিচালক হাবিব তাড়াশী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নৃশংসতায় ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ শহিদ হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটাই সবচেয়ে বড় গণহত্যা। মিরপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণক্ষেত্র। বাঙলা কলেজ বধ্যভূমি শুধু মিরপুরেই নয়, বাংলাদেশের মধ্যেও অন্যতম। ‘এ বেদনার ব্যাকরণ নেই’ নাটকটিতে বাঙলা কলেজ বধ্যভূমিতে নিহত শহিদের বেদনার স্মৃতি ফুটে উঠেছে।

এর আগে, বিকেলে সরকারি বাঙলা কলেজে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠানে ‘বাঙলা কলেজ বধ্যভূমি’ গ্রন্থটির পাঠ উন্মোচিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আগা খান মিন্টু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বক্তব্য রাখেন বাঙলা কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান।