সাব্বির আলম বাবু (ভোলা ব্যুরো চিফ):
ভোলায় ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের বর্ধিত নতুন বহুতল ভবনের নির্মান কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৩ বছর আগে। নতুন এ বহুতল ভবনটি হস্তান্তরও হয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় তিন বছরেও বহুতল এ ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়নি।
হাসপাতালের আধুনিক নতুন বহুতল ভবনটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার প্রায় ১৭ লাখ মানুষ।জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জুলাই ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় সমাজ সেবক জালাল আকবরী শিবলী বলেন, ৫০ বেডের জনবল দিয়ে ভোলা সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার কার্যক্রম চলছে। এ হাসপাতালটি চিকিৎসকসহ অনেক জনবল সংকটের মধ্যে রয়েছে। অথচ দীর্ঘ প্রায় তিন বছরেও ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটি উদ্বোধন করা হয়নি। ফলে অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ। দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ভোলা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভাবেনা। তারা জনগণের বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট করে খাওয়ার জন্য ব্যস্ত। জনগণের স্বাস্থসেবা নিয়ে তাদের খেয়াল নেই। তাই, ভোলার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের নতুন ভবনের কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে না। নষ্ট হচ্ছে সরকারি কোটি টাকার সম্পদ। তিনি আরও বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ভবন নির্মান করলে ঠিকাদারের লাভ। ভবন নির্মান কাজের সাথে জড়িত কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও স্থানীয় নেতাদের পকেট ভারি হয় তাই, ভবন করেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভাবছেন না কেউই। ফলে অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি টাকার সম্পদ। সেদিকে কেউ কোন খেয়াল রাখছেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ৫০ শয্যার লোকবলও নেই। এতে করে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। তাদের চিকিৎসার সুবিধার্থে ২৫০ বেডের নতুন ৭ তলা হাসপাতাল ভবনের নির্মান কাজ শুরু হয়। গণপূর্ত বিভাগ এ নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করে। গণপূর্ত বিভাগের ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ২২ হাজার স্কয়ার ফিট এলাকায় ভবনটি নির্মানে মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৯ তলা ফাউন্ডেশনের ভবনটিতে বর্তমানে ৭ তলা নির্মিত হলেও পরবর্তীতে আরো ২ তলা পর্যন্ত করা যাবে। ভোলার বিশিষ্ট ঠিকাদার আব্দুল খালেকসহ বেশ কয়েকজন ঠিকাদার মিলে এ নির্মান কাজ শুরু করেন।
২০১৩ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রী নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সালে সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও নির্ধারিত সময়সীমার আগেই ভবনের নির্মান কাজ শেষ হয়। গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ভবনটির প্রথম ফ্লোরে রেডিওলজী ডিপার্টমেন্ট, ইমার্জেন্সি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। দ্বিতীয় ফ্লোরে ডায়াগনস্টিক বিভাগ ও ডাক্তারদের জন্য রুম রয়েছ ১৪টি। তৃতীয় তলায় রয়েছে অপারেশন থিয়েটার ৪টি, এডমিন ব্লক ও আইসিইউ রয়েছে ৬ বেডের। চতুর্থ তলায় রয়েছে অপারেশন থিয়েটার ১টি, পোস্ট ওটি ১২টি, লেবার রুম ১৬টি, রোগীদের ২৮ বেড ও কনফারেন্স রুম রয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ফ্লোরে রোগীদের জন্য রয়েছে ১৪০টি বেড। আর সপ্তম তলায় হচ্ছে রোগীদের জন্য ২৮টি কেবিন। ক্যাম্পাসে ডাক্তারদের জন্য ৩ তলায় একটি ডরমেটরি ভবন নির্মানের কাজও শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যেই ডাক্তাররা সেখানে থাকতে শুরু করেছে। সরেজমিনে ভোলার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের নতুন ভবনে গিয়ে দেখা গেছে প্রথম তলায় এক্সরে ও প্যাথলজি এবং দ্বিতীয় তলায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও টিকা কার্যক্রম চললেও তৃতীয় তলায় অটি জোন ও আইসিইউ রুম দেখা গেল তালাবদ্ধ। চতুর্থ তলায়ও নার্সিং রুম, করোনা ওয়ার্ড, পাসপেক্টটিভ ওয়ার্ড ও ডাক্তার রুম তালাবদ্ধ। পঞ্চম তলায় নার্সিং রুম, ডাক্তার রুম ও জেনারেল বেডও ছিল তালাবদ্ধ। ষষ্ঠ তলায় দেখা গেছে নার্সিং রুম, ডাক্তার রুম ও জেনারেল বেড। সেগুলোও ছিল তালাবদ্ধ। সপ্তম তলায়ও নার্সিং রুম, ডাক্তার রুম ও জেনারেল বেড ছিল তালাবদ্ধ।
দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় তালাবদ্ধ এসব রুমগুলোতে ধুলোবালি পড়ে আছে। অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। অচল হয়ে পড়ে আছে ভবনের সিসি ক্যামেরা ও লিফট। যদিও তত্বাবধায়ক বলছেন, লিফট সচল আছে। আর ভবন উদ্বোধন হলে যন্ত্রপাতিগুলো ফের সচল হবে। অষ্টম তলায় নির্মান কাজ চলতে দেখা গেছে। নির্মান শ্রমিক কালাম জানান, গত প্রায় ৪ মাস আগে থেকে অষ্টম তলার কাজ শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে ভোলার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক মোহাম্মদ লোকমান হাকিম বলেন, করোনার কারনে এতোদিন নতুন ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। এখন যেহেতু করোনার প্রকোপ কমে এসেছে তাই আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলে খুব শিগগিরই এটি উদ্বোধনের মাধ্যমে রোগীদের জন্য পুরোপুরি ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হবে। তখন আর যন্ত্রপাতি নষ্ট হবে না। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের নতুন ভবনটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা না হলেও ওই ভবনে কিছু কিছু কার্যক্রম চলছে। সেখানে করোনা রোগীদের পরীক্ষানাগার, করোনার সেম্পল কালেকশন, করোনা রোগীদের চিকিৎসা ও টিকা কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া এক্সরে ও প্যাথলজি বিভাগের কাজও চলছে। ভবনের ৭ তলার উপরে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তায় পিডব্লিউডি কিডনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাজ শুরু করছে। জনবল সংকটের কারনে ভোলায় ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের বর্ধিত নতুন বহুতল ভবনের কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না।
এ হাসপাতালের জন্য ৩৬ জন ডাক্তার ও ১৫ জন নার্সসহ ৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির পদায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ফলে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।